বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
এরশাদ শিকদার ওরফে রাঙ্গা চোরা ! শতাব্দীর ভয়ঙ্কর এক সিরিয়াল কিলারের নাম। এক সময় সদম্ভে তিনি বলতেন, পৃথিবীর কেউই তাকে তার আসন থেকে সরাতে পারবে না। প্রায় ৬০ টিরও বেশী খুনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর দুধ দিয়ে গোসল করতেন তিনি ও তার সহযোগীরা। অসংখ্য নারী ধর্ষণ, একাধিক বিয়েসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এরশাদ শিকদার তার জীবদ্দশায় করেননি।
এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বন্দে আলী শিকদার। ৮ ভাই বোনের মধ্যে এরশাদ শিকদার ছিল দ্বিতীয়। ১৯৬৭ সালে জন্মস্থান নলছিটি থেকে খুলনায় চলে যান এরশাদ শিকদার। কিছুদিন পর রেলস্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রেললাইনের পাত চুরি করে বিক্রি করতো এমন দলে যোগ দেন।
পরে তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন এবং এলাকায় ‘রাঙ্গা চোরা’ নামে পরিচিতি পান শিকদার। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই ১৯৭৬ সালে এরশাদ শিকদার রামদা বাহিনী নামে একটি দল গঠন করেন। যারা খুলনা রেলস্টেশন ও ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এই রামদা বাহিনী নিয়েই এরশাদ শিকদার ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৮২ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।
১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় এরশাদ শিকদার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর আরও ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি এবং জোরপূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এরশাদ শিকদার। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুর আলম। ২০০৪ সালের ১০মে মধ্যরাতে খুলনার জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
খুলনা মহানগরের সোনাডাঙ্গার মজিদ স্মরণিতে দাঁড়িয়ে আছে তার বিলাসবহুল বাড়ি ‘স্বর্ণকমল।’ এরশাদ শিকদারের বহু অপকর্মের সাক্ষী এই ‘স্বর্ণকমল।’ বাড়িটিতে গোপন কুঠরি এবং অস্ত্র ভাণ্ডারের কথাও শোনা যায়। শোনা যায়, ওই বাড়িটির বিভিন্ন গোপন স্থানে নগদ কয়েক কোটি টাকা লুকানো ছিল। প্রায়ই জলসা বসত বাড়িটিতে। শহরের নামীদামী ব্যক্তিরা যেতেন সেখানে। এক সময় সাধারণ মানুষের খুব আগ্রহের একটি জায়গা ছিল ‘স্বর্ণকমল’। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িটি দেখতে আসত। আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওই বাড়িটি। এখন আর কেউ ফিরেও তাকায় না। বাড়িরর সামনে নামফলকটিও নেই। বাড়িটি গত ১৫ বছরে আগের সেই জৌলুশ হারিয়েছে।
কোথায় আছেন পরিবারের সবাই :
ফাঁসির রায় কার্যকরের পর এরশাদ শিকদারের সহযোগী জাহাজী মতিকে বিয়ে করে ঢাকায় পাড়ি জমান তার বড় স্ত্রী খোদেজা। প্রথম দিকে এ ধরনের খবর শোনা গেলেও বর্তমানে খোদেজা ‘স্বর্ণকমলে’ই বসবাস করছেন। তার তিন ছেলে মো. মনিরুজ্জামান শিকদার জামাল, মো. কামাল শিকদার ও মো. হেলাল শিকদার বর্তমানে খুলনায় ছোট-খাটো ব্যবসা করেন। এছাড়া বিয়ের পর মেয়ে স্বর্ণা শিকদার শ্বশুর বাড়িতেই আছে। তারা বাবার পরিচয় দিতে বিব্রত বোধ করেন। এরশাদ শিকদারের ছোট স্ত্রী সানজিদা নাহার শোভা ‘স্বর্ণকমল’ ছেড়ে বিউটি পার্লারের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন বলে জানা যায়। শোভা বর্তমানে একমাত্র মেয়ে এষাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
এরশাদ শিকদার গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘাট এলাকায় তার বরফকল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে আলোচিত ‘স্বর্ণকমল’ ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনও মজিদ স্মরণি দিয়ে চলাচলের সময় উৎসুক জনতার চোখ একবারের জন্য হলেও ‘স্বর্ণকমল’ এড়িয়ে যেতে পারে না।
এরশাদ শিকদারের বড় ছেলে মো. মনিরুজ্জামান শিকদার জামালকে জীবদ্দশায় বিয়ে দিয়ে যান বাবা এরশাদ শিকদার। তার শ্বশুর খুলনা নগরীর বৈকালী এলাকার তারা কাজী। কথিত আছে- ছেলের বিয়ের উৎসবেই তিনি ‘আমি তো মরেই যাবো, চলে যাবো, রেখে যাবো সবি/ আছসনি কেউ সঙ্গের সাথী, সঙ্গেনী কেউ যাবি/ আমি মরে যাবো’… গানটি গেয়ে সবাইকে আনন্দ দেন। পরবর্তীতে গানটি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও মেঝ ও ছোট ছেলে নিজেদের পছন্দেই প্রেম করে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর তার ছেলেদের জীবন-যাপনে ছন্দপতন ঘটে। ‘স্বর্ণকমল’ যখন উৎসুক জনতার কৌতুহলে পরিণত হয়, তখন তারা ‘স্বর্ণকমল’ ছেড়ে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে জামাল ‘স্বর্ণকমল’ ছেড়ে বৈকালীর শ্বশুর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে সেখানেই তিনি মুরগির খামারসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।
এরশাদ শিকদার নিয়ন্ত্রিত ঘাট এলাকাগুলোতে এখন আর তার কোনো কিছুর চিহ্ন নেই। নিজ নামে প্রাইমারী স্কুলটি রয়েছে। বরফকলের মালিকানা বদলেছে। দখলকৃত অনেক জায়গা উদ্ধার করেছে রেলওয়ে। বেশ কিছু জায়গা চলে গেছে নতুন প্রভাবশালীদের দখলে। জীবিত থাকতে তার এলাকায় তিনি ছিলেন ত্রাস। এখন তিনি চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন খুলনার টুটপাড়া কবরস্থানে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।