Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুনের মামলা : পীরের বদলে কারাগারে মুরিদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৭:২৮ পিএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আলোচিত একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের (৬০) পরিবর্তে তারই এক ভক্ত বদলি আসামি হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পণের অভিযোগ উঠে।
গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ওই হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে যিনি আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদ সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি প্রকৃত তাছের নন। তিনি ভুয়া তাছের।
মামলার বাদী আব্দুর রাজ্জাক ও সাক্ষী রেজাউলের করা অভিযোগের সত্যতা যাচায়ে কারান্তরীণ ভুয়া তাছেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৫ অক্টোবর আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।
আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করায় কারান্তরীণ ভুয়া তাছেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেন দৌলতপুর থানা-পুলিশ।
তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হেফাজতে থাকা ওই ব্যক্তি নিজেকে নাজিম উদ্দিন ফকির (৬৫), বাবা করীম আলী গ্রাম দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর বলে জানিয়েছেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, রিমান্ডে দেয়া জবানবন্দির সত্যতা যাচায়ে শুক্রবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শন করে নাজিম উদ্দিন ফকিরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে, গত ১৪ অক্টোবর সকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলায় সৈয়দ তাছের আহমেদের বদলে যিনি তাছের আহমেদ সেজে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি তাছের আহমেদ নন বলেন নিশ্চিত করেছেন নাজিম ফকিরের পরিবার।
এই নাজিম ফকির দীর্ঘদিন ধরেই তাছের আহমেদের ভক্ত হিসেবে তার দরবারে যাতায়াত ছিল। সেই সূত্রে প্রকৃত আসামি উপজেলার চরদিয়া গ্রামের মৃত আজের উদ্দিন মালিথার ছেলে সৈয়দ তাছের আহমেদের অনুরোধ ও পরামর্শে এবং কিছু আর্থিক সুবিধা লাভের বিনিময়ে নজিম উদ্দিন ফকির সৈয়দ তাছের আহমেদ সেজেছিলেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছেন।
তাছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার রিমান্ড শেষে বিকেলে আদালতে হাজির করলে আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকারোক্তি দিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন নাজিম উদ্দিন ফকির।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে কুষ্টিয়া কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইমরান হোসেন জানান, গত ৬ জুন সকালে উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের দরবারে মোবাইল চুরির অভিযোগে স্থানীয় হরিনগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে উপজেলার চরদিয়া গ্রামের সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নামোল্লেখসহ দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় এজাহার নামীয় ৫ আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হলেও প্রধান আসামি কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ পলাতক থেকে ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যান।
এদিকে আদালতের একটি সূত্র জানায়, আদালতের কাছে আত্মসমর্পণের সময় তাছেরের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সাক্ষীরা জানান, তাছেরের ছবির জায়গায় কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ব্যক্তির ছবি বসিয়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের আসল জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে রাশেদের মৃত্যুর পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত তাছেরের বাবা দাবি করেন, সৈয়দ তাছের এই হত্যাকাণ্ডের মূল। তার কুকীর্তি জেনে ফেলায় রাশেদকে নির্মম নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানা রকম বিভ্রান্তিকর ঘটনা ঘটিয়ে আসছে আসামিরা। ওই দরবারটির নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতর্ক রয়েছে আগে থেকেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ