Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্ত্রীকে জমি লিখে দিয়ে চাকরি ফেরত পেলেন

আমরা চাই আগামীতে যেন কোনো হাতেই আর তালি না বাজে : বিরোধ মীমাংসার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

স্ত্রীকে জমি লিখে দেয়ায় স্বামীকে ‘ফায়ারম্যান’র চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
আদেশে আদালত বলেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামী ও স্ত্রী আদালতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করবেন। একইসঙ্গে স্বামী কোর্টের নির্দেশমতো স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দিয়েছেন। দু’জনের সমঝোতার কারণে স্বামীর চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। স্বামীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা নিষ্পত্তির পর চাকরি ফিরে পেয়ে যদি আরেকটা বিয়ে করেন তাহলে চাকরি আর করতে পারবেন না।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দেয়ার শর্তে স্বামীকে চাকরি ফেরত দেয়ার কথা বলেছিলেন। স্ত্রী নির্যাতনের দায়ে ফায়ারম্যানের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়াসহ কয়েক দফায় জেল খাটেন স্বামী। তবে ভবিষ্যতে আর স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না মর্মে-স্বামী অঙ্গীকার করলে সুপ্রিম কোর্ট স্ত্রীকে আগে এক টুকরো জমি লিখে দিতে বলেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। পরে রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয়। তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তবে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট স্বামীকে খালাস দেন।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল করে। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘কম্প্রোমাইজ অ্যাপ্লিকেশন’ করেন। স্ত্রী আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে তাকে নির্যাতনের কথা বলেন। এসময় আদালত স্বামীকে বলেন, আপস মীমাংসার কথা বলছেন। কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না তার কি গ্যারান্টি আছে? জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করব না। তবে স্যার এক হাতে তো আর তালি বাজে না।
একপর্যায়ে আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী কিছু না করুক কিন্তু আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করুক। কিন্তু সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করত। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ওই রকম আচরণ করবে না। তাই সন্তানের চিন্তা করে এ (আপস) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।’

এসময় আদালত ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন যে, ‘এই মামলা যদি খারিজ বা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে তখন কি করবেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই। আমি আমার ছেলের বাবাকে ধরে থাকতে চাই বাঁচা অব্দি।’
আদালত ওই স্বামীকে বলেন, আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিত এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চায় বা ওকালতি করতে চায় তা করতে দেবেন তো? ‘জ্বি, দেব’ আদালতকে বলেন স্বামী। এসময় আদালত বলেন, ‘ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই সংসারটা টিকুক। দু’জন দু’জনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। একজন আদালতে বলছেন এক হাতে তালি বাজে না। আমরা চাই আগামীতে যেন কোনো হাতেই আর তালি না বাজে।’

গতকাল স্বামীর পক্ষে শুনানি ছিলেন ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল ও কে বি রুমী। স্ত্রীর পক্ষে শুনানি করে অ্যাডভোকেট শিরিন আফরোজ। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম কোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ