Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাগর অভিমুখে জেলেরা, আতংক ভারতীয় মৎস্য লুটেরাদের নিয়ে

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:২১ পিএম

গত ৪ অক্টোবর থেকে দেশে ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। জেলেরা মাছ ধরতে উপকূলীয় নদ নদী ও সাগর অভিমুখে তাদের নৌকা-ট্রলার ভাসিয়েছেন। মাছ আহরণকে কেন্দ্র করে উপকূলে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নিষেধাজ্ঞার দিনগুলোতে জেলেরা তাদের জাল, মাছ ধরা নৌকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম মেরামত করেছেন। মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ সাগরে ঢেউ-ঝঞ্ঝার সাথে লড়াই করার। সরকার চাল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দিয়েছে উপকূলীয় লক্ষাধিক জেলে পরিবারকে।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় একদিকে জেলেদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে অন্যদিকে আতংকও দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের পানিসীমায় প্রবেশ করে ভারতীয় জেলেরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর তারা সাগরে এভাবেই আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই কোস্টগার্ডের অভিযানে ভারতীয় ট্রলারসহ জেলেরা আটক হয়, কিন্তু তারপরও তারা দ্রুতগামী ট্রলার ও মাছ ধরার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের পানি সীমায় প্রবেশ করে। আতংকের আরেকটি কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ভারতে এ সময় নিষেধাজ্ঞা ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, এ সময়টিতে ওই দেশের জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমা অতিক্রম করে অসংখ্য ট্রলার নিয়ে মাছ ধরেছে। ফলে জেলেরা আশংকা করছেন, যে পরিমান মাছ জালে পড়ার কথা, এবার তা নাও পড়তে পারে।
সার্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে খুলনা জেলা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহিন বলেন, ভারতের জেলেরা প্রতিনিয়িত আমাদের মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে বাংলাদেশে যখন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, ভারতে তখন এ নিষেধাজ্ঞা থাকে না। ফলে সহজেই ওরা এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এ সময় মাছ ধরতে না পেরে আমাদের জেলেরা অনাহারে অর্ধাহারে থাকে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে দু’ দেশই লাভবান হতো। তিনি আরও বলেন, গত বছর দুবলার চর এলাকায় ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে হাজার হাজার জেলে খালি হাতে ফিরেছে। কারণ তার আগেই ভারতীয় জেলেরা ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। এবারও এ আশংকা রয়েছে।
খুলনার পাইকগাছা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর গত ২৪ জুলাই থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু করেচির জেলেরা। কিন্তু অধিকাংশ জেলেই মাছ পায়নি। অথচ দু’ মাস বন্ধ থাকার কারণে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ার কথা। এর পেছনে একটাই কারণ ছিল। আমাদের মাছ চুরি করে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা।
মৎস্যজীবী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুন্দরবনের গহীণে সাগর পাড়ের দুবলা, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিক খালী, কবর খালী, চাপড়া খালীর চর, কোকিলমনি ও হলদা খালীর চরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবি জড়ো হয়। এসব চরে অবস্থান নিয়ে জেলেরা সমুদ্র মোহনায় মৎস্য আহরণ করে। পাশাপাশি জেলেরা সেখানে নিজেদের থাকা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারের করে শুঁটকি করার পর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজার জাত করা হয়। বর্তমানে স্থানীয় বনদস্যুদের উপদ্রব নেই বললেই চলে। আতংত শুধু ভারতীয় জেলেদের নিয়ে। প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়, তারা বড় বড় ট্রলার নিয়ে এসে বাংলাদেশের জেলেদের ছোট ছোট ট্রলারকে ধাক্কা দেয়। জেলেদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। জেলেরা যেখানে জাল ফেলে, ইচ্ছাকৃতভাবে তারা তাদের ট্রলার সেখান দিয়ে চালায় যাতে জাল ছিড়ে যায়।
কোস্টগার্ডের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ৭৪ ভারতীয় জেলেকে ৫টি ট্রলারসহ আটক করা হয়। আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের পর বাংলাদেশের পানিসীমা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। পূর্ণ অধিকারে থাকা বিশাল বিস্তৃত এ পানিসীমা বাংলাদেশের জন্য অরক্ষিত না হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার শেখ মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান,, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় সব সময় দস্যু দমন বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রানী সংরক্ষনে অভিযান অব্যাহত থাকে। সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণের জন্য যাত্রা করা জেলেরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য মোংলা থেকে দুবলার চর পর্যন্ত কোস্টগার্ডের টহল দল তাদের সাথে থাকবে এবং শুঁটকি প্রক্রিয়া করণের জন্য জেলেদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে কঠোর থাকবে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এবার পুরো সুন্দরবন বিভাগ থেকে ছয় কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোরকোল, মেহের আলী এবং শ্যালার চরসহ বেশকয়েকটি চর তারা পরিদর্শন সহ স্থান নির্ধারন করেছেন। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বনবিভাগ কাজ করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ