পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দলের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন দলের পদধারী অনেক নেতা। বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া, ভাল পদ না পাওয়ার হুশিয়ারিতেও কাজ হচ্ছে না। দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৩ শতাধিক। এরমধ্যে অনেকে দল মনোনীতদের চেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাই বিদ্রোহী নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। বিদ্রোহীদের কারণে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন নেতারা।
বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলছেন, উপজেলা, জেলা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কোন্দলের কারণে তৃণমুলে যোগ্য প্রার্থীর নাম আসছে না কেন্দ্রে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজেদের লোকজনের নামই রেজ্যুলেশনে পাঠিয়েছেন। স্থানীয় এমপির সাথে কোন্দলকে ঘিরে তার সমর্থিত যোগ্য নেতাদের নামও পাঠানো হয়নি, আবার কোনো কোনো জায়গা থেকে একক প্রার্থীর নাম পাঠানো হয়েছে। অনেক উপজেলা থেকে বিএনপি, অনুপ্রবেশকারী ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের ত্রাণের চাল আত্মসাৎকারীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দল থেকে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়া, নির্বাচনে বিএনপি না আসাসহ স্থানীয় নানা সমীকরণের কারণে বিদ্রোহী হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। এছাড়া গতবার বিদ্রোহী হয়ে যারা চেয়ারম্যান হয়েছেন কিংবা পাশ করতে পারেননি, তারা সঙ্গত কারণে দলের মনোনয়ন পাননি; বিদ্রোহী চেয়ারম্যানদের সকলেই নির্বাচন করছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকে এবারও বিদ্রোহী হয়েছেন।
নীলফামারী সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট আগামী ১১ নভেম্বর। ওই ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থীর’ ছড়াছড়ি। ইউনিয়নগুলোতে শপথ ও মুচলেকা ভঙ্গ করে ২২ জন বিদ্রোহী হয়েছেন। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭০ জন প্রার্থী। প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের চিত্র প্রায় একই রকম। পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন। ২ নম্বর তিরনইহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার হোসেন খোকন। ৩ নম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ইনছান আলী শ্রমিক লীগের নেতা। ৫ নম্বর বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে আট জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ কামাল। তার ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান কামু। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আরও দুই জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, বাদশা সোলাইমান এবং তারেকুজ্জামান তারেক। ৬ নম্বর ভজনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমদাদুল হক। ৭ নম্বর দেবনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সলেমান আলী এবং তরিকুল ইসলাম। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ইউপি নির্বাচনে মোট ২৪ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন। এর মধ্যে তানোরে ৯ জন আর গোদাগাড়ীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ১৫ জন। এছাড়া অধিকাংশ ইউপিতে আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বামী ও স্ত্রী দুই জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন- হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও তার স্ত্রী ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন আক্তার। তারা একই ইউনিয়ন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিজ মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেছুর রহমান।
এদিকে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ছূড়ান্ত করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের ছূড়ান্ত করেছে। গত ২১ অক্টোবর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থী ছূড়ান্ত করা হয়। মনোয়ন বোর্ডে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন মো. আব্দুল আজিজ হাওলাদার। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ৪নং দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তিনি। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন রাজাকার সন্তান এবং সাবেক বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন খান। নৌকা মনোনীত প্রার্থী মাত্র চার মাস আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন খান। দলে যোগ দিয়েই পেয়ে গেছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ। ২০০২ সালের জোট সরকারের আমলে তৎকালিন বিএনপির মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ভাজন ও ১৯৯৭-২০০২ সাল পর্যন্ত মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক স্বাক্ষরিত কাগজে তাকে ৪নং দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। আনোয়ার হোসেন খান আওয়ামী লীগ করেন এবং নৌকা প্রতীক পেয়েছেন এ খবর শুনে নিজেই হতবাক স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া।
দেউলী-সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, সে বিএনপির নেতা ছিলো। আগে কখনও আওয়ামী লীগ করে নাই। সদ্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হয়েছেন। কিভাবে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আমার জানা নাই।
এদিকে খুলনার তেরখাদা উপজেলার সদর ইউনিয়নে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো মনোনয়ন তালিকায় নাম ছিলো না এফএম অহিদুজ্জামানের। অভিযোগ আছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় রাজাকার পরিবারের সন্তান তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কারও হয়েছিলেন। তবে সবকিছুর পরে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
নাটোর জেলা লালপুর উপজেলাধীন বিলমাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের উপজেলা থেকে ১২ জনের নাম রেজ্যুলেশন করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তার মধ্যে ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. মিজানুর রহমানের নাম রাদ রেখেই কেন্দ্রে রেজ্যুলেশন পাঠানো হয়। তবে জেলা থেকে তার নাম যোগ করে হয়। সেই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন মোসা. পারভীন আকতার বানু। তিনি বর্তমান উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রে লিখিত আবেদন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দলীয় বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কোন্দল চলে আসছে। নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্যের অনুসারী হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম উপজেলা আওয়ামী লীগ রেজ্যুলেশনের দেননি। এদিকে একই উপজেলার চংধুপইল ইউপির জন্য নৌকার মাঝি করা হয়েছে মো. রেজাউল করিমকে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের আতংকিত করার জন্য প্রচারণার জন্য রাখা নৌকার ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। সেই এলাকার নিমতলা বাজারে নৌকার পক্ষের নির্বাচনী অফিসে ঢুকে নেতাকর্মীদের মারধর, অফিস ভাংচুর, নৌকার পোস্টার তছনছ করেছিলেন। তার তখন একটি মামলাও করা হয়। বির্তকিত ব্যক্তিকে নৌকা না দিতে মানববন্ধন: ফেনীর পশুরামের মির্জানগর ইউপিতে জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক বির্তকিত ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ। গত শনিবার দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ মানববন্ধনে ইউনিয়নের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলী আকবর ভুইয়া, উপজেলা ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসেম চৌধুরী, জেলা যুবলীগের সদস্য ফখরুল ইসলাম ফারুক, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু ইউসুফ, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আলম বক্তৃতা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।