Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসাধারণ এক প্রেক্ষাপটের সিনেমা নোনা জলের কাব্য

বিনোদন রিপোর্ট: | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

গত এক বছর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে সাড়া জাগানো সিনেমা ‘নোনা জলের কাব্য’ আগামী ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মুক্তি পাবে। দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার লড়াই এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কার সিনেমাটির মূল বিষয়। সমাজ, সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং পরিবেশের অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্র তথা বিনোদন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে, এই বিশ্বাস নিয়েই পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নির্মাণ করেছেন ‘নোনা জলের কাব্য’। তিনি বলেন, সিনেমাটি নির্মাণ করতে আজ থেকে তিন বছর আগে আমি গিয়েছিলাম পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত এক জেলেপাড়ায়। খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, উপকূলবর্তী সেই গ্রামটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর আমার সেখানে যাওয়া হয়ে উঠেনি, কিন্তু এবার যখন পরিচিত সেই জায়গার খোঁজে, প্রিয় মানুষগুলোর খোঁজে গেলাম, গিয়ে দেখি সেখানে কেবলমাত্র কিছু গাছপালা ভেঙে পড়ে রয়েছে, জোয়ারের পানি উঠবে উঠবে ভাব। জানতে পারলাম, এই অঞ্চলে গত ২-৩ বছর ধরে সমুদ্রের পানির উচ্চতা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। জোয়ারের তীব্রতা তো রয়েছেই, গতবছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফান-ও অনেক ক্ষতি করেছে। এসকল প্রতিকূলতা বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব না ফেললেও, হারিয়ে যাচ্ছে অনাদিকাল থেকে চলে আসা এসকল প্রান্তিক জেলেদের উপার্জনের পন্থা। জেলেরা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা। জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে তারা শহরমুখী হচ্ছে। সুমিত বলেন, ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমায় যেসকল জেলে ভাই-বোনরা অভিনয় করেছিলেন, তাদের কারও কারও সাথে আমার এবার দেখা হয়েছে। তাদের মুখে শুনেছি ইলিশ মাছও নাকি এখন অপ্রতুল। বুঝলাম তাদের জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা আমার সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। সংগ্রামী এই মানুষগুলোর গল্প বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা খুব জরুরী, সেই সূত্রেই জাতিসংঘের জলবায়ু কনফারেন্সে আবেদন করা। সিনেমাটির পরিবেশক স্টার সিনেপ্লেক্স। সিনেমাটি ইতোমধ্যে লন্ডন, বুসান, গুটেনবার্গ, সাও পাওলো, তুরিন, সিয়াটেল, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সিনেমাটি এবার যাচ্ছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিতব্য গুরুত্বপূর্ণ এই আসরে নভেম্বরের ৮ তারিখে আইম্যাক্স থিয়েটারে দেখানো হবে সিনেমাটি। এই সম্মেলনে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন। অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এছাড়াও একই শহরে জাতিসংঘের সিওওয়াই ১৬ (কয়) সম্মেলনে অক্টোবরের ২৯ তারিখ দেখানো হবে সিনেমাটি। নোনা জলের কাব্য প্রযোজনা করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত ও ফরাসি প্রযোজক ঈলান জিরার্দ। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন লস অ্যাঞ্জেলসে বসবাসরত থাই শিল্পী চানানুন চতরুংগ্রোজ, তিনি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ¯িপরিট অ্যাওয়ার্ড-এর মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সিনেমাটির নির্মাণ সহযোগী প্রতিষ্ঠান অমিতাভ রেজার হাফ স্টপ ডাউন। স¤পাদনা করেছেন আমেরিকার ক্রিস্টেন ¯প্রাগ, রোমানিয়ার লুইজা পারভ্যু ও ভারতের শঙ্খ। শব্দ ও রঙ স¤পাদনার কাজ হয়েছিল প্যারিসের দুটি বিখ্যাত স্টুডিওতে। উল্লেখ্য, সিনেমাটি ২০১৬ সালে চিত্রনাট্যের জন্য পেয়েছিল ¯পাইক লি রাইটিং গ্রান্ট। একই বছর ভারতের ফিল্ম বাজারের কে-প্রোডাকশন মার্কেটে নির্বাচিত হয়েছিল সিনেমাটির চিত্রনাট্য। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান পেয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে ৮০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিল ফরাসি সরকারের সিএনসির সিনেমা দ্য মন্ড ফান্ড থেকে। ২০২০ সালে টরিনো ফিল্ম ল্যাব অডিয়েন্স (টিএফএল) ডিজাইন ফান্ড ২০২০ জিতেছে। এর ফান্ডের আওতায় পেয়েছে ৪৫ হাজার ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৫ লাখ টাকার সমান। এ অর্থের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটিকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সিনেমা হলে পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ