Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানির জন্য হাহাকার : ব্যাহত হবে ইরি-বোরো চাষ

মহারশি নদীর পানি নালিতাবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা

এস কে সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

ঝিনাইগাতীর মহারশী নদীর পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাশের নালিতাবাড়ি উপজেলায় নিয়ে যাবার পায়তারা চলছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার (নলকুড়া-রাংটিয়া) মহারশি নদীতে গত ২০১৩ সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা)›র অর্থায়নে এবং এলজিইডির বাস্তবায়নে মহারশি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নামে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে উপজেলার অনাবাদি ১ হাজার ২শ’ হেক্টর জমি নতুন করে ইরি-বোরো চাষের আওতায় এসেছে। অথচ এই রাবার ড্যামের পানি নিয়ে বর্তমানে চলছে ছিনিমিনি খেলা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন, রাবার ড্যাম নির্মাণের পরও এখানে ইরি-বোরো চাষে পানি সংকট রয়েইে গেছে। তারপরও গত বছর ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল রাবার ড্যামের পানির কল্যাণে। কিন্তু আমাদেরই যেখানে পানির ঘাটতি- সেখানে যদি এই পানি অন্য উপজেলায় নিয়ে যায় তবে আগামী ইরি-বোরো মওসুমে পানি সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এ বছর যদি মহারশী নদীর পানি নালিতাবাড়ি উজেলায় নিয়ে যায় তবে এখানেতো এমনিতেই পানির ঘাটতি রয়েছে। তাহলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে না পানি সংকটের কারণে। যেখানে আসছে ইরি-বোর মৌসুমে আরো অনাবাদি ১ হাজার ২শ’ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে এটা মাথায় রাখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া রাবার ড্যাম থেকে গড়িয়ে পড়া অতিরিক্ত পানি দিয়ে ভাটি এলাকার মহারশী নদী তীরবর্তী ভাটি এলাকার ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়। এতে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৪ ইউনিয়নের বনকালী, দিঘীরপাড়, আহম্মদ নগর, হলদীবাটা, বনগাও, চতল, হাতীবান্ধা ও তিনানী বাজার ও হাসলিবাতিয়া-বাতিয়াগাঁও পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকার ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোর চাষাবাদ করা হয় এই পানিতেই। ঝিনাইগাতীতেই শুস্ক মওসুমে পানির মহাসংকট দেখা দেয় ফি-বছর। অনেক ইরি-বোরো খেত ফেটে চৌচির হয়ে যায় পানির অভাবে। দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট। যেখানে ঝিনাইগাতীতেই পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে সেখানে ঝিনাইগাতীর হাজার হাজার কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় না এনে পাইপ লাইন করে পানি নিয়ে যাবার পায়তারা করা হচ্ছে পাশের নালিতাবাড়ী উপজেলায়। পানি লুটে নিতে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পাশে ইতোমধ্যেই উত্তর হলদীগ্রামের মৃত. মতিউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ›র বাড়িতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা)›র অর্থায়নে এবং এলজিইডি শেরপুরের বাস্তবায়নে বৃহৎ পরিসরে নির্মাণ করা হচ্ছে পানির হাউজ। সেই হাউজ থেকে ৪শ’ কি মি মোটা পাইপ লাইন দিয়ে পানি সরবরাহ করে নিয়ে যাওয়া হবে নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে ঝিনাইগাতীতেই পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং পুরো উপজেলায় অনেক অনাবাদি জমি পানি সংকটের কারণে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। সেখানে এ উপজেলার পানি অন্য উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হলো কিভাবে তা এ উপজেলাবাসির বোধগম্য নয়। এছাড়া ফি-বছর যেখানে পানির অভাবে ভাটি এলাকার হাজার হাজার একর জমি পতিত পড়ে থাকছে সেখানে অন্য উজেলায় পানি সরবরাহের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন আমজনতা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আল মাসুদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এভাবে পানি নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলে ঝিনাইগাতী উপজেলায় পানির জন্য হাহাকার পড়ে যাবে এবং পানির অভাবে ঝিনাইগাতীর ভাটি অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে, সৃষ্টি হবে মহা পানি সংকট।’
ঝিনাইগাতী উপজেলার স্বার্থ রক্ষা না করে নালিতাবাড়ীতে পানির পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার ভূক্তভোগী কৃষকগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ