Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধুমতি বদলে দিচ্ছে লোহাগড়ার মানচিত্র

আবদুস ছালাম খান, লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী ভাঙনের ফলে উপজেলার পুরানো মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। প্রমত্তা মধুমতি নদীর তীব্র স্রোতে গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনের ফলে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী পাড়ের গ্রামগুলো ভেঙে নদীর অপর পাড়ে জেগে উঠায় সেখানকার বসতিরাও বাধ্য হয়ে নতুন চরের বসতি হয়েছে। নদী ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলির মধ্যে লাহুড়িয়া, শালনগর, জয়পুর, লোহাগড়া, মল্লিকপুর, ইতনা ও কোটাকোল অন্যতম। শালনগর ইউনিয়নে এ বছর অন্তত ১২টি গ্রামে নদী ভাঙন চলছে। বিলিন হওয়া গ্রামের লোকজন নদীর বিপরীত পাড়ে অবস্থিত ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ও বুড়াইচ এবং কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল, ফুকরা ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মধুমতি নদীর তীরবর্তী শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর, শিয়েরবর গ্রাম ও হাট, চর আজমপুর, মন্ডলবাগ, চর গোপালপুর খেয়াঘাট, চাকশী, নওখোলা মিয়াপাড়া, চরশালনগর, কাশিপুর, মাকড়াইল ও চরমাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর এলাকায় বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও পাকারাস্তা মধুমতি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এ সব গ্রামের বসবাসকারী লোকজন নদী ভাঙনের ভয়ে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের গাছপালা কেটে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। মাকড়াইল গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ ইতোমধ্যে নদীতে ভেঙে গেছে এবং ওই গ্রামে অবস্থিত বাংলালিংকের মোবাইল টাওয়ার অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উপজেলার গ্রোথ সেন্টার হিসাবে পরিচিত শিয়েরবরের হাট রক্ষার জন্য নদীতে বালুর বস্তা (জিওব্যাগ) ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সম্প্রতি নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী হাটটি। যে কোনো সময় হাটের একটি বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একই রকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নওখোলার আল-হেরা দাখিল মাদরাসা, চাকশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। এদিকে জয়পুর ইউনিয়নের আস্তাইল, আমডাঙ্গা, ধানাইড়, লোহাগড়া ইউনিয়নের কামঠানা, চরবগজুড়ি, তেতুলিয়া, মল্লিকপুর ইউনিয়নের করফা, মঙ্গলহাটা ও আতোষপাড়া গ্রামে নদী ভাঙনের ফলে গ্রামগুলির উল্লেখযোগ্য অংশ নদীর ওপারে ওঠে গেছে। অথচ এক সময়ে মধুমতি নদী দ্বারা লোহাগড়া উপজেলার সীমানা নির্ধারণ করা হতো।
নদী ভাঙনের শিকার মন্ডলবাগ গ্রামের নূর মোহাম্মদ ও কামরুল শেখ বলেন, এ বছর মধুমতি নদী ভেঙে গ্রামের পাকারাস্তা, বসতবাড়ি গাছগাছালী ও ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। চর খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিন্না মিয়া, সাত্তার মিয়াসহ অনেকে জানান ওই গ্রামসহ পাশের নওখোলা, চরশালনগর, চরকাশিপুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়ে নদীর ওপার বসবাস করছে। শিয়েরবর হাট রক্ষা ও নদী শাসন কমিটির সভাপতি সৈয়দ আশরাফ আলী জানান, এই মুহুর্তে শিয়েরবরের হাট ও নদী ভাঙন কবলিত গ্রামগুলো রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এলাকার মানুষ নিস্বঃ হয়ে যাবে। এদিকে গত শুক্রবার ভোরে লোহাগড়া উপজেলার কালনা এলাকায় নদীর অপর পাড়ে ভাটিয়াপাড়া বাজারের প্রায় ৫০ মিটার এলাকা একবারে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ওই এলাকায় পানিতে ঘুর্ণি স্রোতের ফলে উভয় পাড়ে নদী তীরবর্তী মানুষের বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য ভাটিয়াপাড়া থেকে কালনা পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার নদীতে প্রতিদিন শতাধিক বড় জাহাজে বালি আনলোড করা হয়। ভারী যন্ত্রের সাহায্যে জাহাজ থেকে বালি আনলোডের কারণে নদী তীরে কম্পনের ফলে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারনা।
শালনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মধুমতি নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নের কাতলাশুর, চরগোপালপুর, চাকশী, চরখড়কদিয়া, চরশালনগর, চরমাকড়াইল গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের জমিজমা নদীর ওপার চলে যাওয়ায় তারা সেখানে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। অন্য ইউনিয়নে বসবাস করায় তারা সেখানকার ভোটার হয়ে গেছে। এভাবে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নের পুরানো মানচিত্র পাল্টে গেছে।
এ ব্যাপারে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল সেন বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ