পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আইস বা ক্রিস্টাল মেথ এখন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বগ্রাসী এ মরণ নেশার কারণে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। তবে শুধু তরুণরা নয়, এখন কিশোর, এমনকি কিশোরীরাও আইস সেবনে আসক্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিনা পুঁজিতে মিয়ানমার থেকে সড়ক ও নৌপথে বিপুল পরিমাণ আইস দেশে ঢুকছে। আর এসব আইস উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নিজেরা সেবনের পাশাপাশি কারবারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আইসের বিষাক্ত ছোবলের কারণে অভিভাবকরাও আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ভয়াল মাদকাসক্তি তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব- সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধনও। শুধু তাই নয়, আইস বা ক্রিস্টাল মেথে ইয়াবার মূল উপাদান অ্যামফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এজন্য মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও এই মাদক বেশি ক্ষতি করে। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিস্ক বিকৃতি, স্টোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতা তৈরি হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সেবনকারী আত্মহত্যাও করতে পারে। এই মাদক সেবনে মৃত্যুও হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, বেশ কয়েক বছর থেকে দেশে আসছে নতুন এই মাদক। মাদকদ্রব্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মাদক ভয়ঙ্কর, মরণঘাতী। তবে মাদক কারবারিদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১২ কোটি টাকার আইসের চালানসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে। এটি এ যাবৎ উদ্ধার হওয়া আইসের চালানগুলোর মধ্যে এটাই বড়। গ্রেফতারকৃত মো. হোছেন ওরফে খোকন অন্যতম আইস কারবারি। তার নেতৃত্বে একটি চক্র রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ কারবারের সাথে জড়িত। ইতোমধ্যে ওই চক্রের ২০ থেকে ২৫ জনের নাম সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, মিয়ানমারে এক গ্রাম আইসের দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। আর বাংলাদেশে এর দাম ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি গ্রামে ১৩ থেকে ২৩ হাজার টাকা বেশি লাভ পেতে মিয়ানমার থেকে দেশে আইস আনা শুরু করে টেকনাফের বাসিন্দা হোছেন ওরফে খোকন। এ আইস বিক্রি হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তার সহযোগী রফিক অটোরিকশা চালানোর ছদ্মবেশে এসব মাদক বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়। তবে আইসের যেসব চালান দেশে আসছে; সেইসব চালান বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতে হয় না। এছাড়া যদি কোনোভাবে আইসের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তাহলে কোনো টাকাই পরিশোধ করতে হয় না। তাই বিনা পুঁজির সুবিধাতে আইস কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অনুসন্ধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, আইস কারবারের সাথে যারা জড়িত তারা বেশিভাগই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও লেখাপড়া করে এ কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। তবে এ কারবার ও আইস সেবনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে উচ্চবিত্ত বিভিন্ন পরিবারের তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে ওই চক্রের সদস্যরা। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ও টাকার লোভ দেখিয়ে ওই কারবারের সাথে জড়িত করা হয়। এছাড়াও উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেক অভিভাবক যাদের সন্তান কোথায় যায়, কি করে, এসব বিষয়ে খোঁজ রাখেন না। ওই সুযোগেও উড়তি বয়সী তরুণ-তরুণীরা আইস সেবন ও কারবারের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। আবার অনেকেই অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়েই এই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, ভাটারা, উত্তরা, গুলশান, বানানী, বারিধারা ও মিরপুর এলাকায় আইস বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। ওইসব এলাকায় তরুণ-তরুণীরা আড্ডার আড়ালে আইস সেবন ও বিক্রির কাজে সময় পাড় করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে; আবার কেউ কেউ পারিবারিক ও মানসিক বিষন্নতার কারণে বিপথগামী হয়ে পড়ছে।
র্যাব জানায়, গত জুন মাসে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আইস, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা উত্তরা এলাকায় বায়িং হাউসের নামে অফিস ভাড়া নিয়ে ওই অফিসকে মাদক প্রক্রিয়াজাতকরণের ‘মেথ ল্যাব’ হিসেবে ব্যবহার করছিল। সেখানে মাদক আইসের সঙ্গে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে পরিমাণ বাড়ানো, ইয়াবার রং পরিবর্তন কিংবা ইয়াবা-আইস-ঘুমের ওষুধের সমন্বয়ে ঝাক্কি বা ককটেল বানানো হতো। শুধু মাদক প্রক্রিয়াজাতকরণই নয়; কথিত ওই ল্যাবে নিয়মিত আনাগোনা ছিল মাদকসেবী তরুণ-তরুণীদের। তারা সেখানে মাদক সেবন এবং পরবর্তিতে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো। চক্রটি কৌশলে সেসব কার্যকলাপ ভিডিও করে রাখত। যা দিয়ে পরবর্তিতে তাদের করা হতো ব্ল্যাকমেইলিং। এ চক্রে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা মাদক আইস ও ঝাক্কি সেবন-কেনাবেচায় জড়িত। এর বাইরেও ৪০ থেকে ৫০ জন রয়েছেন, যারা নিয়মিত এই চক্রের মাদকের ক্রেতা।
এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতর বলছে, এক গ্রাম আইসের দাম ১০ হাজার টাকা। এটি সেবনে হতে পারে মস্তিস্ক বিকৃতি। ভয়াবহ এই মাদকে আসক্ত হচ্ছে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। তবে ভয়ঙ্কর এ মাদক সারা সেবন করছেন; আর যারা কারবার করছেন ইতোমধ্যে তাদের তালিকা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে যাদের আটক করা হয়েছে; তাদের দেওয়া তথ্যমতেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধারাবারিকতায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ভাটারায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে আটক করা হয়। যারা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। দু’জন পড়ালেখা করেছে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে। এ সময় তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা মূল্যের আইসের বড় একটি চালান ও ১২০০ ইয়াবা জব্দ করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আরো জানায়, মাদক আইস ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে দেশে নিয়ে আসছে। লাভ বেশি হওয়ায় ইয়াবা কারবারিরা এখন আইসের দিকে ঝুঁকছে। আর এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বিদেশফেরত উচ্চ শিক্ষিতরা।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা করে অভিযান পরিবালনা করা হচ্ছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় আইস কারবারের সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ইনকিলাবকে বলেন, মাদক কারবার ও সেবন লাইফস্টাইলের উপর নির্ভর করে। সময়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে মাদক কারবার ও সেবন পরিবর্তন হয়। দু’টি কারণে আইসের আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইয়াবাসহ অন্য মাদক নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তাই নতুন মাদক আমদানি করছে মাদক কারবারিরা। এছাড়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের লাইফস্টাইল ও চাহিদা থাকায় আইস নিয়ে আসছে কারবারিরা। আইসের পরে দেখা যাবে আরো অন্য কোনো মাদক চলে আসছে। তাই চাহিদা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মাদক কারবারি ও সেবনকারী গ্রেফতারের পাশাপাশি মাদক আসার পথে নজরদারি বাড়াতে হবে। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসা বন্ধ হলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মাদক সেবনকারীদের সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, মাদককে নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা যে কৌশলগুলো নিয়েছে সেই কৌশলগুলো পুরোপুরি কাজ করছে না। তাই কৌশলগুলো কাজে লাগিয়ে মাদক আসার পথ বন্ধ করতে পারলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা মম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।