Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন কৌশলে দেশে ঢুকছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ধরা পড়লে টাকা মাফ। সাড়ে ১২ কোটি টাকার আইসসহ গ্রেফতার ২ মাদককারবারি


ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের চালান বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, তাহলে মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা তার দাম নেয় না। নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোর পর হুন্ডির মাধ্যমে আইসের চালানের দাম পাঠানো হতো মিয়ানমারে। কখনও চায়ের প্যাকেটে, কখনও আচারের প্যাকেটে করে নানা কৌশল ব্যবহার করে আনা হয় আইস। ইয়াবার পর বাংলাদেশে অবৈধ দামি মাদক ক্রিস্টাল মেথের (আইস) বাজার ধরতে নতুন কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা। বাংলাদেশের মাদক কারবারিদের উৎসাহিত করতে অগ্রিম টাকা ছাড়াই আইসের চালান পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। আইস সিন্ডিকেটের অন্যতমহোতা হোছেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য সাড়ে ১২ কোটি টাকা। গতকাল শনিবার কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, মাদকের চালান নিরাপদে বাংলাদেশের মাদক কারবারির হাতে পৌঁছানোর পরই তারা টাকা নিচ্ছে। আইসের চালান যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে ফেলে, তাহলে এর দামও নেয় না মিয়ানমারের কারবারিরা। এই কৌশলের কারণে সম্প্রতি আইসের চাহিদা ও সরবরাহ বেড়েছে বাংলাদেশে। প্রায়ই ধরা পড়ছে মাদকটির ছোট ছোট চালান। দেশে মাদক কারবারের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা অবৈধভাবে নৌপথ ব্যবহার করে মিয়ানমারে গিয়ে সেখানকার মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে। মিয়ানমারের কারবারিরাও বাংলাদেশের কারবারিদের যুক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েছে। নিরাপদ গন্তব্যে মাদক পৌঁছানোর পর হুন্ডির মাধ্যমে আইসের চালানের দাম পাঠানো হতো মিয়ানমারে।

র‌্যাবের এই মুখপাত্র জানান, গ্রেপ্তারকৃত খোকন নৌপথে নিয়মিত মিয়ানমার যেতেন। তিনি ও তার সহযোগী পাঁচ বছর ধরে ইয়াবা কারবারে সঙ্গে জড়িত। তবে বেশি লাভের কারণে কয়েক মাস ধরে আইসের কারবারে জড়িয়ে পড়েন তারা। খোকন টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক কারবারে জড়িত সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। এই সিন্ডিকেটে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। প্রথমে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার সমুদ্রপথ দিয়ে মাদকের চালান মিয়ানমার থেকে টেকনাফ নিয়ে আসে খোকন। সেখান থেকে অটোরিকশার চালকের ছদ্মবেশে থাকা রফিক মাদকটি এনে তার বাসায় প্রাথমিকভাবে রাখত। পরে ছোট ছোট ভাগে সেগুলো চট্টগ্রামে পাঠানো হতো। সুযোগমতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো মাদকের চালান।

তিনি আরো বলেন, রাজধানীর গুলশান, বনানী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক আইসের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারা শহরে সরবরাহের জন্যই আইসের এই বড় চালানটি নিয়ে আসা হয়। চালানটি দেয়ার পর তারা টাকা সংগ্রহ করত। তবে এর আগেই ধরা পড়ে জড়িতরা। আমরা এই সিন্ডিকেটে জড়িত অনেকের নাম পেয়েছি। এদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। গ্রেফতারকৃত খোকনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে আরো একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি মোবাইল, তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে এই আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এই মাদকে আসক্তরা নানান অপরাধমূলক কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইস

২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ