Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বামীর সমুদয় সম্পত্তির ভাগ পাবেন হিন্দু বিধবারা

হাইকোর্টের রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

হিন্দু বিধবা নারীরা শুধু বসতভিটা নয়, স্বামীর সব সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন। আর এ রায় দিয়েছেন বাংলাদেশ হাইকোর্ট। এক্ষেত্রে হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট (১৯৩৭ সালের) বাংলাদেশে প্রযোজ্য।
বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীরর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত সেপ্টেম্বরে রায় দেন। রায়ের স্বাক্ষরিত অনুলিপি গতকাল মঙ্গলবার হাতে পেয়েছেন বলে জানান মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যরিস্টার সৈয়দ নাফিউল ইসলাম।

লিখিত ২২ পৃষ্ঠার আদেশে আদালত বলেন, আইনে কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির কথা নেই। ‘সম্পত্তি’ শব্দের অর্থ সব সম্পত্তি যেখানে স্থাবর বা অস্থাবর, বসতভিটা, কৃষিভূমি, নগদ টাকা বা অন্য কোনো ধরণের সম্পত্তি। কৃষিজমি ও বসতভিটার মধ্যে পার্থক্য করার সুযোগ নেই এবং এ ধরণের সম্পত্তি বিধবার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়।

এর আগে গত বছর ২ সেপ্টেম্বর খুলনার হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে করা এক আবেদনের (রিভিশন) শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর বেঞ্চ ওই রায় দেন। ব্যারিস্টার নাফিউল ইসলাম বলেন, খুলনার রাজবিহারী মন্ডলের দুই ছেলে জ্যোতিন্দ্রনাথ মন্ডল ও অভিমন্যু মন্ডল। অভিমন্যু মন্ডল ১৯৫৮ সালে মারা যান।
এ অবস্থায় মৃত ভাইয়ের স্ত্রী গৌরী দাসী কৃষিজমি পাবেন না, শুধু বসতভিটা থেকে অর্ধেক পাবেন- এমন দাবি নিয়ে ১৯৮৩ সালে নিম্ন আদালতে মামলা করেন জ্যোতিন্দ্রনাথ। মামলায় পক্ষ যথাযথভাবে না করায় ১৯৯৬ সালে তা খারিজ করে রায় দেন আদালত। তবে গৌরীর কৃষিজমির সম্পত্তি পাবেন না বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে খুলনার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আপিল করেন জ্যোতিন্দ্রনাথ। আদালত ২০০৪ সালের ৭ মার্চ রায় দেন। রায়ে বসতভিটা ও কৃষিজমিতে গৌরী দাসীর অধিকার থাকবে বলা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন জ্যোতিন্দ্রনাথসহ অন্যরা। রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, রাজবিহারী মন্ডলের আগে তার পুত্র অভিমন্যু মারা যান। গৌরী দাসী অভিমন্যুর বিধবা স্ত্রী। বিবাদী গৌরী শুধু বসতভিটার উত্তরাধিকারী এবং তাকে কৃষিজমি থেকে বঞ্চিত করার কারণ দেখা যাচ্ছে না। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া বসতভিটায় বাস করেছিলেন গৌরী এবং আপাতদৃষ্টিতে জীবনধারণের জন্য শ্বশুরের কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল তিনি। এই মামলার বিবাদী গৌরী দাসীর ক্ষেত্রে হিন্দু আইনের দায়ভাগা পদ্ধতি প্রযোজ্য। ১৯৩৭ সালের আইনের ৩(১) ধারা অনুসারে, বাবার আগে মারা যাওয়া ছেলের মতোই তিনি (গৌরী) তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন।
হাইকোর্টে এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী উজ্জ্বল ভৌমিক। রিভিশন আবেদনের পক্ষে আইনজীবী এম এ জব্বার এবং গৌরী দাসীর পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ নাফিউল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন।

অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, ১৯৩৭ সালের হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট অনুসারে স্বামীর কৃষি-অকৃষি উভয় জমিতে বিধবা নারীর অধিকারের কথা আছে। তবে এর আগে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, ছেলে, ছেলের ছেলে এবং ছেলের ছেলের ছেলে থাকলে বিধবারা সম্পত্তি পেতেন না। আইনটি করার কারণ হচ্ছে, ছেলে তথা তিন পুরুষের সঙ্গে বিধবাদের সম্পত্তির সমান ভাগ দেয়া।

তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্পত্তি বিষয়ে ১৯৩৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের করা ওই আইনের বৈধতা নিয়ে তৎকালীন ফেডারেল কোর্টে প্রশ্ন ওঠে। আইনটি কৃষিজমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে ১৯৪১ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্ট অভিমত দেন। এই রায় এতদিন ধরে অনুসরণ করা হতো। আইনজীবী সৈয়দ নাফিউল ইসলাম বলেন, ৮৪ বছর ধরে স্বামীর কৃষি জমিতে কোনো প্রাপ্য ছিল না হিন্দু বিধবাদের। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই অসঙ্গতি দূর করে রায় দিলেন হাইকোর্ট।

 



 

Show all comments
  • Jamil Ahmed Tanvir ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১১ এএম says : 0
    হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • হুমায়ূন কবির ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১১ এএম says : 0
    সময় উপযোগী রায়
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৭ এএম says : 0
    ছেলে আমার মেয়ে কার ছেলে মেয়ে যদি আমার হয়,আমার সন্তান আমি কি জন্য দুচোখে দেখবে,সেটা অন্যায় কাজ এবং যুক্তি সংগত নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ মাখদুম ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৭ এএম says : 0
    কথিত নারী বাদিরা নারীর অধিকার নিয়ে গলা বাজায়। আর সেটা দেখা যায় মুসলমানদের নারী নিয়া। তাদের ঘর থেকে বাহির করা।কিন্তু অমুসলিম নারীরা অধিকার থেকে বঞ্চিতা। সেটা তাদের চোখে পড়ে না।এই রায়ে হিন্দু নারীরা কিছুটা হলেও সস্তি পাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ