Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলের সবুজ বেষ্টনীর শিশুগাছে মড়ক পরিবেশ বিপন্নের আশংকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১১ পিএম

উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সৃজিত কয়েক লাখ শিশু গাছের বেশীরভাগই ছত্রাকবাহী মড়কে মরে যাচ্ছে। বন বিভাগ সহ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এসব গাছ রক্ষায় এখনো তেমন টেকসই ও সহজসাধ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট সহ বঙ্গোপসাগর থেকে ধেঁয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। গত দেড় দশকে ‘সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল ও ইয়াশ’ এর তান্ডবে উপকূলয়ী এলাকায় সৃজিত প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর বনভূমি ইতোমধ্যে ক্ষতবিক্ষত।

সংক্রমণ রোধে বন বিভাগ থেকে নতুন করে শিশু গাছ রোপন বন্ধ সহ সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘ফুজরিয়ান সুলাবিন’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগ থেকে শিশু গাছসমূহ রক্ষায় কঠিন কিছু পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি এককভাবে শিশুগাছের বাগান উত্তোলনকে নিরুৎসাহিত করা কথা বলেছে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ সহ বিভিন্ন ধরনের রাস্তার ধাঁরে কয়েক লাখ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। এছাড়া উপক‚লে জেগে ওঠা নতুন চর সহ পুরনো চরাঞ্চলে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঝড় জলোচ্ছসের বিরুদ্ধে ‘প্রাকৃতিক ঢাল’ তৈরী করা হয়েছে। এসব বনভূমির কারণে দেশের বিশাল উপক‚লীয় এলাকায় ইতোমধ্যে অনেক ভ‚মি উদ্ধার ছাড়াও ঐসব এলাকায় বসবাসরত মানুষের টেকসই জীবন জীবিকা অনেকটাই নিরাপদ করাও সম্ভব হয়েছে। অনেক চরাঞ্চল মূল ভূখন্ডের সাথেও যুক্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে পরিবশেবিদদের মতে ভূখন্ড উদ্ধারের চেয়েও এসব সৃজিত বনভ‚মি সবচেয়ে বেশী ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখছে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেঁয়ে আসা ঝড়-জলোচ্ছাসের হাত থেকে উপকূল সহ দক্ষিণাঞ্চলের জানমাল রক্ষায়।
কিন্তু ২০০৭-এর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ সহ গত ১৫ বছরের একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে উপক‚লীয় বনভূমি ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। সাথে ‘উপক‚লীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প’র আওতায় ১২ হাজার কিলোমিটার বেড়ী বাঁধ সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপজেলা ও জেলা সংযোগ সহ পল্লী যোগাযোগ অবকাঠমোর রাস্তার ধারের শিশু গাছ সমূহ ছত্রাকবাহী মড়কে মরে যাচ্ছে।

বিষয়টি বন বিভাগকেও ভাবাচ্ছে। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী উপক‚লীয় বনোৎপাদন বিভাগের বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে আলাপ করা হলে তিনি শিশুগাছের মড়কের কথা স্বীকার করে জানান, আমরা সরেজমিনে এসব গাছের সংখ্যা যাচাই বাছাই করছি। আগামী দিন পনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হলে জেলা পরিবেশ কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপনের পাশাপাশি বন অধিদপ্তরকেও তা জানিয়ে দিক নির্দেশনা চাওয়া হবে।

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর বরিশাল প্লান্টেশন ট্রায়াল ইউনিট-এর বিভাগীয় কর্মকর্তার সাথে শিশু গাছের মড়ক নিয়ে আলাপ করা হলে বিষয়টি নিয়ে বন বিজ্ঞানীগণও উদ্বিগ্ন বলে জানান তিনি। ইনস্টিটিউট-এর একজন বিজ্ঞানী বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে ‘ফুজারিয়ান সুলাবিন’ নামের এক ধরনের ছত্রাককে এ মড়কের জন্য চিহ্নিত করে কোন একক শিশু গাছের বাগান না করা সহ রাস্তার ধারেও এক নাগাড়ে এ ধরনের গাছ রোপন না করার পরামর্র্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এখনো জীবিত শিশুগাছ সমূহ ছত্রাক থেকে রক্ষায় কীটনাশক প্রয়োগর কথাও জানিয়েছেন ঐ বন বিজ্ঞানী। তবে আক্রান্ত গাছ রক্ষার কোন পদ্ধতি এখনো উদ্ভাবন করা যায়নি বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের উপক‚লীয় বন সংরক্ষক মোঃ হারুন আর রশিদ-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প সহ বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে যে বিপুল সংখ্যক শিশু গাছ রোপন করা হয়েছিল, তার বেশীর ভাগেই মড়কে মরে যাচ্ছে। এ সংকট নিরসনে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর পরামর্শে কাজ করছে বন বিভাগ। পাশাপাশি নতুন করে শিশুগাছ রোপনকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করার কথাও জানান তিনি। ইতোমধ্যে বন বিভাগের নার্সারীসমুহে শিশুগাছের চারা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বন সংরক্ষক।

উল্লেখ্য, বঙ্গোসাগরের কোল ঘেষে ৭১০ কিলোমিটার উপক‚লীয় তটরেখার ১৯টি জেলার ৪৮টি উপজেলার প্রায় এক কোটি মানুষের বাস। এ বিশাল মানব গোষ্ঠি সহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় সৃজিত উপকূলীয় বনভূমী এবং উপক‚লীয় সবুজ বেষ্টনী ‘প্রকৃতিক ঢাল’ হিসেবে কাজ করছে। পরিবেশবিদদের কাছে এসব বনভ‚মী ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষাকবজ’ হিসেবেও বিবেচিত। কিন্তু ঝড়-ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে লড়াই করে উপকূলীয় বনভূমি বিনষ্ট সহ দক্ষিণাঞ্চলের শিশুগাছের মড়ক পরিবেশকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় শিশুগাছের পরিবর্তে তাল গাছ রোপনের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। তালগাছ ঝড়ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে যেমনি টেকসই, তেমনি তা বজ্রপাতের হাত থেকেও জানমাল রক্ষায় অধিকতর কার্যকরী বলে ইনস্টিটিউট-এর বরিশাল গবেষণা কেন্দ্রর বিভাগীয় কর্র্মকর্তা জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ