পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720358420](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভাঙাচোরা গর্তে ভরা রাস্তা। বৃষ্টি হলে ডুবে যায় সড়ক, কোথাও কোথাও থাকে হাঁটুপানি। নেই ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা। বৃষ্টির সময় ড্রেনের পানি থাকে রাস্তায়। নিচু এলাকার বাড়ির নিচতলায় ঢুকে যায় সেই পানি। কিছু সড়ক রয়েছে যা বছরের বেশিরভাগ সময় ড্রেনের পানিতে ডুবে থাকে। সড়কের উপরে পরে থাকে ময়লা আবর্জনা। সেখান থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। নেই বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন। সড়কে নেই বাতি। সন্ধ্যা হলেই পুরো এলাকাজুড়ে নেমে আসে অন্ধকার। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে রিকশা বা অটোর ভাড়াও বেশি। কিছু রাস্তায় রিকশাও চলে না। সিটি করপোরেশন হলেও রয়েছে ইটের রাস্তা। ট্যাক্সি বা উবারের কোন গাড়ি সহজে ঢুকে না এসব এলাকায়। রিকশা, অটোর চাকা ভেঙে যাওয়া, পানি ঢুকে অটো রিকশার মটর নষ্ট হওয়া, টেম্পুর ইস্পাতের স্প্রিং ভেঙে যাওয়া, রাস্তার গর্তে পড়ে রিকশা-অটো উল্টিয়ে দুর্ঘনার শিকার হওয়া নিত্য নতুন ব্যাপার। এমন চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নতুন সংযুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের। সাংবাদিক দেখলেই সাধারণ জনগণ তাদের হাহাকারের চিত্র তুলে ধরার কথা বলেন। কিন্তু এরপরও কোন ধরণের উন্নয়ন কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কারণ সংস্থাটির কাছে নেই টাকা। নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের জন্য ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিলেও টাকা দিচ্ছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া অনুন্নত এই এলাকাগুলোর উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় গত বছরের ১৪ জুলাই। প্রকল্পটি পাস হবার ১৫ মাসের মধ্যে ছাড় হয়েছে মাত্র ৯৪ কোটি টাকা। টাকা না পাওয়া সকল ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কেনো টাকা ছাড় হচ্ছে না এ বিষয়ে নেই কারো কাছে সুদুত্তর।
উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলররা শোনাচ্ছেন অসহায়ত্বের কথা। আর মেয়র বলছেন, অর্থমন্ত্রণালয় শিঘ্রই টাকা ছাড় করবে। এরপর শুরু হবে কাজ। ধীরে ধীরে পাল্টে যাবে এসব এলাকার চিত্র। ঢাকার অন্যান্য এলাকার চাইতে উন্নয়ন ও সুপরিকল্পিত হবে নতুন ১৮ ওয়ার্ড এলাকা।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর প্রত্যেক ওয়ার্ডে কিছু কিছু কাজ হয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর আতিকুল ইসলাম পুনরায় মেয়র হলে মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। ২৬ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনায় ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার প্রজেক্ট গত বছরের ১৪ জুলাই একনেকে পাস হয়। এ প্রকল্প শেষ হবার কথা ২০২২ সালে। কিন্তু গত বছর থেকে করোনা মহামারি শুরু হলে থমকে যায় সারাদেশ। করোনা মোকাবেলায় সরকার নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়। এর পেছনে সরকারকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। যার কারণে বড় বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় কম হয়েছে। সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ডিএনসিসির টাকা পেতে দেরি হচ্ছে।
টাকা না পাওয়া উন্নয়ন বন্ধ। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে তাই নিয়মিত উন্নয়ন কাজও বন্ধ এসব ওয়ার্ডগুলোতে। কোন ধরণের উন্নয়ন কাজ করতে না পারায় এ বিষয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন কাউন্সিলর ও ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাউন্সিলর বলেন, আমাদের আশেপাশের সিটি করপোরেশনগুলোর উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। তাদের কাজ দেখলে আমাদের নিজেদের কাছে খারাপ লাগে যে আমারা কিছুই করতে পারছি না। জনগণের কথার কোন উত্তর দিতে পারি না। অর্থ মন্ত্রণালয় কেন টাকা দিচ্ছে না এ বিষয়ে কোন সদুত্তরও পাচ্ছি না আমরা।
ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগের হয়তো গ্যাপ রয়েছে আমাদের। অন্যান্য প্রজেক্টে টাকা ছাড় হয় কিন্তু আমাদের টাকা দেয়া হয় না। এ নিয়ে আমরা কথাও বলতে পারি না তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে করোনা মহামারি মোকাবেলা করতে সরকারকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। গত অর্থ বছরে অন্যান্য প্রকল্পে টাকা কম দিয়ে করোনা মহামারি মোকাবেলায় টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাই টাকা পেতে দেরী হয়েছে। এ অর্থ বছরে করোনা মোকাবেলায় আলাদা বরাদ্ধ রয়েছে। তাই আশা করি নভেম্বর ডিসেম্বরে ভাল পরিমাণ টাকা পাব আমরা। তখন দ্রুত উন্নয়ন কাজ শুরু করতে পারবো। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কেন টাকা দিচ্ছে না সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করুন। আমাদের প্রশ্ন করে কী লাভ। সেলিম রেজা বলেন, নভেম্বর মাস থেকে আমরা কিছু কাজ শুরু করবো। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ফান্ড থেকে কাজ করবো। সেনাবাহিনী কাজ করবে তাই এজন্য দেরী হবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডগুলো নিয়ে অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। আমরা এই ওয়ার্ডগুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। এটা নিয়ে প্রথম ধাপে আগামী নভেম্বর মাসে কাজ শুরু হচ্ছে। এই ধাপে ১১০ কোটি টাকার কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করা হবে। এতে সব কয়টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম তরান্বিত হবে। আশা করছি মেগা এ প্রকল্পতি বাস্তবায়িত হলে নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সমানভাবে নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তিনি বলেন, ডিএনসিসির নবগঠিত প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঈদগাহ, শিশু পার্ক, সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), পাবলিক টয়লেট এবং ওয়াসার পাম্প বসানো হবে।
৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার প্রকল্পে যা আছে:
গত বছরের ১৪ জুলাইয়ে এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে মোট ১৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলো চার লেন (৩৩ কিলোমিটার) করা হবে। দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যেতে ‘ইউটিলিটি ডাক্ট’ নির্মাণ করা হবে ৯৭ কিলোমিটার। এই খাতে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে ২৩৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৫১ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণে ব্যয় হবে চার কোটি ৪৯ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা।
১৮টি ওয়ার্ডে খালের সংখ্যা ১৩টি। দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮ দশমিক ৫১ কিলোমিটার। এই খালগুলোর উভয় পাশে হাঁটাচলার পথ ও সাইকেল লেন নির্মাণ করা হবে ৫৮ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৫৬ লাখ ছয় হাজার টাকা। এছাড়া এসব ওয়ার্ডে মোট ১২ হাজার ২৬৭টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই অর্থের মধ্যে বাতির দাম, পোল, ক্যাবল, সুইচ এবং আনুষঙ্গিক খরচ ধরা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।