Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধুমতির ভাঙনে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন

বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে হতাশায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ

চৌধুরী হাসান মাহমুদ, গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

গোপালগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবহমান প্রাচীনতম নদী মধুমতি। প্রকৃতির পরিবর্তনে নদীর নাব্যতা হারিয়ে গেলেও বর্ষা মৌসুম এখনও পুরানো অভ্যাসে ফুসে ওঠে নদীটি। বর্ষার পানি নামতেই নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের ফসলী জমি, বসত বাড়ি, গাছ পালা ও রাস্তা-ঘাট। গবাদি পশু পাখি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে হতাশায় বসবাস করছে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। নদী ভাঙনে আশ্রয়হীন পরিবারের বাস স্থান ও ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
গোপালগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে মধুমতি নদী। এটি আবার কখনও ভয়াবহ রুপ ধারন করে ভাঙনে গ্রাস করে নেয় নদীর তীর বর্তি মানুষের সর্বস্ব। একসময় এটি ছিল খরস্রোত নদী। যুগ যুগ ধরে এই নদীতে সর্বশান্ত হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার অসংখ্য জমি জায়গা, বসত বাড়ি, স্কুল কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছ পালা, রাস্তা-ঘাটসহ আরো অনেক কিছু। এলকাবাসী জানায়, এবছর বন্যার পানি তুলনামূলক অন্যান্য বছর থেকে বেশি দেখা দেয়। প্লাবিত স্থান থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি এলাকায় মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। অল্প ক’দিনে ভাঙনের কবলে কমপক্ষে ১৭টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে এলাকাবাসী দাবি করছেন। এছাড়া ভাঙনে অসংখ্য গাছ পালাসহ ফসলি জমিও বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে। প্রতিদিনই কম বেশী ওই এলাকায় নতুন করে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙন এলাকার মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তারা। বসত ভিটা হারিয়ে গবাদি পশু পাখি নিয়ে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অনেকে। হঠাৎ করে মধুমতি নদীর ভাঙন যেন এলাকার মানুষের জীবন চিত্র পাল্টে দিয়েছে। অনেকেরই সর্বশেষ আশ্রয় স্থল ভিটা মাটি টুকু হারাতে হয়েছে। আবার অনেকেই এই শেষ সম্বল টুকু রক্ষা করার জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া পরিবারগুলোর চোখে শুধু হতাশার অশ্রু। নদীর দিকে শুধুই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে তারা। নদীর ভয়াল থাবায় বাড়ি ঘর জমিজমা হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙণ কবলিত চিহ্নিহিত এলাকা এটি। প্রতিবছরই এখানে ভাঙন অব্যাহত থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পূর্ব থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাঙণ এত তীব্রতর হতে পারতনা। এতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারেরও কম অর্থ ব্যয় হতো। হারিয়ে যেতনা এলাকার মানুষের বসত বাড়ি ও যায়গা জমিসহ অন্যান্য সম্পদ। অবশিষ্ট্য সহায় সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জনিয়েছেন তারা। এছাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকার চর গোবরা, হরিদাশপুর, ফুকরা, ঘোড়াদাইড়, চর সিংগাতি, মধুপুর এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনের কারনে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এসকল এলাকার শত শত একর ফসলি জমি। প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে কাচাঁ-পাকা রাস্তা, ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা।
এবিষয়ে জালালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুপারুল আলম টিকে বলেন, নদী ভাঙনে এপর্যন্ত এলাকার নজরুল মোল্যা (৬৫), বাবু মোল্যা (৩৭), সাগর শেখ (৪৫), মহিতোন নেছা (৫৭), এবাদু হোসেন মোল্যা (৫০), রানা মোল্যা (২৭), খাজা মিয়া মোল্যা (৩৬), নার্গিস বেগম (২৬), সবুজ মোল্যা (২৭), হিবজু মোল্যা (২৫), শাহাজান মোল্যা (৬০), রুবেল মোল্যা (৩০), বাচ্চু মোল্যা (৪৫), তৈয়বুর মোল্যা (৩৫), আমিনুর শেখ (৪০) ও তবিবুর রহমান (৪৭) বসত বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমি প্রশাসনের সাথে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সার্বিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পাশা পাশি তাদের সাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে গোপালগঞ্জে সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে মধুমতি নদীর ডুবসি মোল্লা পাড়া, ঘোলইতলা, বড়ফা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ওই এলাকার কয়েকটি বসত বাড়িসহ বেশ কিছু গাছ পালা ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের অন্যত্র সরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া জমির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫শ’ মিটার ভাঙন কবলিত স্থানের কাজ শুরু করেছি। এখানে জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পানি একটু নেমে গেলে স্পেশাল ভাবে ৬মিটার করে লম্বা জিও টিউব ফেলানো হবে। তিনি বলেন, আপাতত ঠিকাদার কাজ করে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অর্থ বরাদ্দ’র জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এরপর দ্রুত স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জেলার অন্যান্য স্থানে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কদাচিত টুকি টাকি ভাঙন থাকাটা স্বাভাবিক।
ভাঙন সম্পর্কে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে নদী ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শণ করেছি। নদী ভাঙন প্রাকৃতিক কারণে হয়। তার পরেও আমরা বসে নেই। এলাকার মানুষের দুখঃ দূর্দষায় আমরা তাদের পাশে রয়েছি। সরকারের উর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এই মুহুর্তে আমরা মধুমতী নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জিও টিউব ব্যবহার করে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের আর্থিক ভাবে সহযোগীতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিয়ত ভাঙন এলাকা মনিটরিং করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ