Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জমা পড়ল ৪২২ কোটি টাকার আবেদন

শরীয়াহ্ভিত্তিক গ্রীন সুকুক বন্ডের গণপ্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

সফলতার সঙ্গে দেশের প্রথম শরীয়াহ্ভিত্তিক গ্রীন সুকুক বন্ডের গণপ্রস্তাব (আইপিও) শেষ করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো)। বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় শরীয়াহ্ভিত্তিক ‘সুকুক’ বন্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল। তাই কিছুটা হলেও শঙ্কা ছিল গণপ্রস্তাব সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে এটি। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, দুই দফায় সময় বাড়ানোর পর ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে সুকুক বন্ডের আইপিওতে যোগ্য অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মোট ৪২২ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে; যা প্রয়োজনের তুলনায় ৫৬ দশমিক দুই শতাংশ। তবে আইন অনুযায়ী, চাহিদার বিপরীতে ৫০ শতাংশের বেশি সাবস্ক্রিপশন ফি জমা না হলে আইপিও বাতিল হয়। বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডের আইপিওতে ৫৬ শতাংশ আবেদন জমা পড়েছে। আর তাতেই বন্ডটি বাতিলের শঙ্কা থেকে মুক্ত হয়। চলতি বছরের ১৬ আগস্ট থেকে সুকুক বন্ডের সাবস্ক্রিপশন অর্থাৎ আইপিওতে আবেদন শুরু হয়। প্রথম দফায় ৩০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সুকুক বন্ড নিয়ে সচেতনতার অভাবে প্রত্যাশা অনুসারে আবেদন জমা না পড়ায় দ্বিতীয় দফায় সময় এক মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। এই সময়ে ৭৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের আবেদনের বিপরীতে ৪২২ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে।

এর মধ্যে এলিজেবল ইনভেস্টর অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩৬০ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬২ কোটি টাকা আবেদন জমা পড়েছে। আইন অনুযায়ী কোনো ইস্যু সাইজের ৫০ শতাংশ আবেদন জমা পড়লে, সেই ইস্যু আর বাতিল হয় না। ফলে আইনত বেক্সিমকো সুকুক বন্ড বাতিলের শঙ্কা কাটিয়ে উঠল। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছিল, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেবট সিকিউরিটিজ রুলসের ১২(২) অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আবেদন জমা না পড়লে, পাবলিক অফারটি বাতিল করা হবে। ডেবট সিকিউরিটিজ রুলসের ১২(২) ধারায় বলা হয়েছে, পাবলিক অফারের যেকোনো সিকিউরিটিজে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আবেদন জমা পড়তে হবে। এছাড়া আন্ডাররাইটারের ২০ শতাংশ আবেদনের পরেও যদি ৫০ শতাংশের কম হয়, তাহলে ইস্যুটি বাতিল হবে।

এ বিষয়ে বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হয়, আইন অনুসারে ৪২২ কোটি টাকার আইপিওর শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আন্ডার রাইটার আরো বন্ডের ২০ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ আরো ১৫০ কোটি টাকার সুকুক বন্ডের শেয়ার কিনতে পারবেন। ফলে আইপিওর শেয়ার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৭২ কোটি টাকার। বাকি শেয়ার প্লেসমেন্টে ক্যাটাগরিতে যোগ হবে। আর তাতে প্লেসমেন্ট ক্যাটাগরিতে শেয়ার সংখ্যা দাঁড়াবে দুই হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিটি ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শিবলী আরমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সুকুক বন্ড বাজারে এনেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। সকল শঙ্কা কাটিয়ে ভালোভাবে শেষ হয়েছে আইপিওর আবেদন।

উল্লেখ্য, শরীয়াহ্ভিত্তিক সুকুক বন্ড ছেড়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। তিন হাজার কোটি টাকার বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটির মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে এবং এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার বাদে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। অবশিষ্ট ৭৫০ কোটি টাকা আইপিও ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গত ২৩ জুন শর্তসাপেক্ষে তিন হাজার কোটি টাকার সুরক্ষিত রূপান্তরযোগ্য অথবা অবসায়নযোগ্য সম্পদভিত্তিক গ্রিন সুকুক বন্ডটির অনুমোদন দেয় এসইসি। বন্ডটির নাম হচ্ছে বেক্সিমকো সুকুক আল ইস্তিসনা, অর্থাৎ এর মাধ্যমে অর্থায়নকারীর অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এবং বাস্তবায়ন শেষে তার মালিকানা হবে অর্থায়নকারীদের। প্রস্তাবিত বন্ডের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বন্ডটির অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা ও ৫০টি বন্ডে একটি লট। মুনাফার ভিত্তি হবে ন্যূনতম নয় শতাংশ বা সর্বশেষ বছরে প্রদত্ত লভ্যাংশের সঙ্গে মুনাফার পার্থক্যের ১০ শতাংশ বেশি।

বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটি শতভাগ শেয়ারে রূপান্তরের সুবিধা রয়েছে। অবশ্য কোনো বন্ডধারী চাইলে রূপান্তর নাও করতে পারেন। বন্ডধারী চাইলে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে আংশিক বা পুরো বন্ড বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রূপান্তর মূল্য হবে ডিএসইর ২০ কার্যদিবসের ভারিত গড়ের ৭৫ শতাংশ। সুকুক বন্ডটি দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হবে। এসইসির অনুমোদনসাপেক্ষে বন্ড ইস্যুর জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকল গঠন করেছে বেক্সিমকো। বেক্সিমকো জানিয়েছে, বন্ডের বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হবে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডে। তিস্তা সোলার চীনা কোম্পানি টিবিইএ সানোয়াসিসের সঙ্গে যৌথভাবে গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট এবং পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অপর এক চীনা কোম্পানি জুয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজির সঙ্গে যৌথভাবে করোতোয়া সোলার নামের ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সুকুক বন্ডের অর্থ খরচ করা হবে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে এক হাজার একর জমির ওপর তিস্তা সোলারে নির্মাণ হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটিই দেশে এ ধরনের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর তিস্তা সোলারের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় ও বাস্তবায়ন চুক্তি হয়েছে। অন্যদিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশের মালিক। বাকি ২০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি জুয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজি। এই কেন্দ্র থেকে আগামী ২০ বছর ১৩ টাকা ৯০ পয়সা করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রসঙ্গত, বেক্সিমকো পাওয়ারের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো লিমিটেড।###



 

Show all comments
  • Tareq Aziz ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
    অন্যান্য দেশে শুকুক কি ভাবে চালু আছে,, শুকুক গ্রহিতাগন কেমন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তা উল্লেখ করা দরকার ছিলো।
    Total Reply(0) Reply
  • ক্ষণিকের মুসাফির ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
    সাথে পুরো প্রক্রিয়াটা মানে কিভাবে কিনবে, কোথা থেকে কিনবে এবং কারা নিতে পারবে সেগুলো জানালে আরও ভালো হতো
    Total Reply(0) Reply
  • গ্রিন রবি ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
    যুগান্তকারী পদক্ষেপ।ইসলামি বন্ড (সুকুক) এর পাশাপাশি কমার্শিয়াল বন্ড বাজারে আনা দরকার।তাহলে স্টক মার্কেট এবং মানি মার্কেট এ প্রতিদ্বন্ধীতা বৃদ্ধি পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হিমালয় হিমু ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন!!! ইহুদিদের প্রবর্তিত সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিবর্তে সর্বস্তরে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং চালু করা উচিত!!
    Total Reply(0) Reply
  • নুর নাহার আক্তার নিহার ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
    শরীয়াহ্ভিক্তিক সুককে বিনিয়োগে করে নিজেদের পুঁজি নিরাপদ রাখুন, লাভবান হোন। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে নিজেকে শরীক করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ আহমেদ ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
    মালয়েশিয়ার দৃষ্টান্ত ফলো করা উচিত। অধিক পরিমাণে সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়া হউক। ইসলামিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল নাঈম মনি ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
    যারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য অনে অনেক শুভ কামনা রইলো।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল ফেরদাউস নূরী ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
    সুকুক বন্ড মুসলিম দেশগুলোতে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। আমাদের দেশে এই বন্ড নিয়ে আসায় ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • হীরা হীরক ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
    সুকুক বন্ড চালু হলে বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সহজ হবে এবং জনগণও লাভবান হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুকুক বন্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ