দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পবিত্র কোরআনের সূরা আল-কিয়ামাহ- এর ২৬-৩০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘কখনো নয়, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে এবং বলা হবে যে, কে তাকে রক্ষা করবে? তখন সে মনে করবে যে, এটা বিদায়ক্ষণ এবং পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাবে’। এখানে পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাওয়ার অর্থ হলো, মৃত্যুর সময় মৃত্যু যন্ত্রণা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে, ফলে মানুষের প্রাণ বের হয়ে যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মৃত্যু যন্ত্রণা খুব কঠিন’। আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম (রহ.) বলেন, এক ব্যক্তি সবসময় মদপান করত। তার মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হলে পাশে উপবিষ্ট এক ব্যক্তি বললেন, ‘তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বল। এ কথা শুনে ওই ব্যক্তির চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল। পাশে উপবিষ্ট ব্যক্তি দ্বিতীয় বার তালকীন তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ার জন্য বলল। তখন মুমূর্ষ ব্যক্তি তালকীন প্রদানকারীর প্রতি তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল, ‘তুমি পান কর আর আমাকেও পান করতে দাও, তুমি পান কর আর আমাকেও পান করতে দাও’ - একথা বলতে বলতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে গেল (নাউজুবিল্লাহ)। মহান আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করছি, তিনি আমাদেরকে মৃত্যুর কষ্ট থেকে রেহাই দান এবং আমাদেরকে মৃত্যুর সময় কালেমা তাইয়্যেবা পড়ার তাওফিক দান করুন। (প্রথম পর্ব)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন ও কাফেরের মৃত্যুর আলাদা অবস্থা বর্ণনা করেছেন। মুমিনের যখন মৃত্যু হয় তখন সূর্যের আলোর ন্যায় আলোকিত চেহারাসম্পন্ন ফেরেশতা জান্নাত থেকে সুগন্ধযুক্ত রেশমী কাফন সাথে নিয়ে এসে মুমিন ব্যক্তিকে সালাম করে। মালাকুল মউত তার রুহ কবজ করার পূর্বে তাকে এ বলে সুসংবাদ দেয়, হে পবিত্র আত্মা! তুমি খুশি হও, তোমার জন্য রয়েছে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের নি’মতসমূহ। এ খবর শুনে মুমিন ব্যক্তির অন্তর আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
ফেরেশতা তার রুহ কবজ করার পর তা সুগন্ধময় সাদা রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে আকাশের দিকে নিয়ে যায়। ফেরেশতাগণ আকাশের দরজা নক্ করা মাত্র এ মুমিন বান্দার পরিচয় পেয়ে তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেন এবং তাকে স্বাগত জানান। ফেরেশতাগণ তার রুহকে এমনিভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আকাশে নিয়ে যান। ওখানে পৌঁছার পর মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে, আমার এ বান্দার নাম ইল্লিইয়ীনে (নেককারদের আত্মা ও আমলনামা সংরক্ষণের স্থান) লিস্টিভুক্ত কর। অতপর প্রশ্ন - উত্তরের জন্য তার রুহ পুনরায় তার শরীরে ফেরত পাঠানো হয়। (দ্বিতীয় পর্ব)
কাফের ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কাফেরের মৃত্যুর সময় আসে তখন তার জান কবজ করার জন্য অত্যন্ত কুৎসিত চেহারাসম্পন্ন ফেরেশতা দুর্গন্ধময় কাফন সাথে নিয়ে এসে তাকে আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং জাহান্নামের দুঃসংবাদ জানিয়ে তার রুহ শরীর থেকে জোর করে বের করে। এ সময় কাফেরের রুহ থেকে বর্ণনাতীত দুর্গন্ধ আসে। এরপর যখন মালাকুত মউত কাফেরের দুর্গন্ধময় রুহ নিয়ে প্রথম আকাশে পৌঁছে, তখন দরজায় নক্ করা মাত্র আকাশের ফেরেশতাগণ বলেন, ‘তার জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না। তাকে বেইজ্জতির সাথে পুনরায় দুনিয়ায় পাঠিয়ে দাও’। তখন ফেরেশতাগণ তাকে প্রথম আকাশ থেকে বেইজ্জতির সাথে মাটিতে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এদিকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে, তার নাম সিজ্জীনের (পাপিষ্ঠদের আত্মা ও আমলনামা সংরক্ষণের স্থান) তালিকায় লিখে দাও। অতপর তার রুহকে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন-উত্তরের জন্য তার শরীরে পাঠানো হয়।
আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমরা কবর-হাশরের আজাব থেকে পানাহ চাই এবং আমাদেরকে মেহেরবানী করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করার জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দরখাস্ত করছি। (তৃতীয় পর্ব)
লেখক : মুহতামিম, জামিয়া মদীনাতুল উলূম ভাটারা, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।