Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

লাগাতার বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দক্ষিণাঞ্চলে আমন উৎপাদন লক্ষ্য অর্জন নিয়ে অনিশ্চয়তা

লবনাক্ততার পরিধি বৃদ্ধিসহ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২১, ৫:২৩ পিএম

বৃষ্টিপাতের ব্যপক ঘাটতি নিয়েই এবার দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষা মৌসুম শেষ হতে চলেছে। বৃষ্টির অভাবে এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্যফসল আমন-এর উৎপদন নিয়ে কৃষকের মধ্যে এক ধরনের আতংকও সৃষ্টি হয়েছে। সাথে বছর যুড়েই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে থাকায় জনস্বাস্থ্য সহ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শরতের এ সময়েও দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পরদ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে পীঠে রয়েছে। বুধবারেও বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৩ ডিগ্রী বেশী।
গত জানুয়ায়ী থেকেই দক্ষিনাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি লক্ষণীয় ছিল। গত ৯ মাসের মধ্যে শুধুমাত্র জুন মাসেই এ অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও বছরের অপর ৮ মাসই কেটেছে কম বৃষ্টি নিয়ে। এমনকি আমনের ভরা মৌসুমের গত দুটি মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল।
ফলে আমনের জমিতে পর্যাপ্ত আদ্রতা নিয়ে কৃষকের মনে যথেষ্ঠ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আবহাওয়া বিভাগ থেকে চলতি মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম বৃষ্টিপাতের আগাম বার্তাও দেয়া হয়েছে। অথচ দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলায় এবার প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৯ লাখ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে। আবাদ লক্ষ্যমাত্রায় পৌছান সম্ভব হলেও বৃষ্টির অভাবে উৎপাদন কোন পর্যয়ে পৌছবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে।
এমনকি এবার লাগাতর অনাবৃষ্টির সাথে সীমান্তের ওপারে প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের ফলে গত ডিসেম্বরের পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাগরের নোনা পানি উঠে আসতে শুরু করে। লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে মার্চে থেকে পরিস্থিতি আরো জটিলাকার ধারন করে। বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে বরিশালের কির্তনখেলায় লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার ২শ পিপিএম অতিক্রম করে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানা গেছে। সাগরের নোনা পানি উজান ছাপিয়ে চাঁদপুরের ভাটিতে বরিশালের হিজলায় মেঘনা মোহনা পর্যন্ত পৌছে যায়।
বরিশাল অঞ্চলে গত জানুয়ারীতে স্বাভাবিক ৮.৯ মিলিমিটারের স্থলে কোন বৃষ্টি হয়নি। ফেব্রুয়ারীতে স্বাভাবিক ২৭ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র ১ মিলিমিটার। আর মার্চে ৫৭.১ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ০.৩ মিলি বৃষ্টি হয়। এপ্রিলেও বরিশাল অঞ্চলে ১৩২.৩ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ৫ মিলিরও কম। আবহাওয়া বিভাগের মতে জানুয়ারীতে শতভাগ এবং ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৯৯% কম। মে মাসে বরিশাল অঞ্চলে ২৬০ মিমি’র স্থলে ১২৭.৩ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। যা ছিল স্বাভাবিকের ৫১.১% কম। জুলাই মাসেও স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ছিল ৩৪৭.৮ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের ১৯.৭% কম। অথচ এসময়ে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ১৮.৬% বেশী। এমনকি সদ্য বিদায়ী আগষ্টেও বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। চলতি মাসেও আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল অঞ্চল সহ সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের কম হবার সম্ভনার কথা বলেছে তাদের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে।
বৃষ্টিপাতের এ ঘাটতি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধন দানাদার খাদ্য ফসল আমনের উৎপাদনে কি ধরনের প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে নিবিড় নজরদারীর কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বশীল মহল। পাশাপাশি কৃষকদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ সহ সব ধরনেরর কারিগরি পরামর্শ প্রদানের কথাও বলেছে ডিএই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ