পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলা দায়েরের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হয়রানির ঘটনায় আলোচিত রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানের নামে অর্জিত সম্পত্তির উৎস জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সম্পত্তিগুলোর অবস্থান, পরিমাণ এবং উৎস নির্ণয় করে প্রতিবেদন দাখিল করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত দেয়া লিখিত আদেশের কপি গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
আদেশ সম্পর্কে আবেদনকারীর পক্ষের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সম্পত্তি রয়েছে তা নির্ণয় করে সেগুলোর উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আদালতকে জানাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে পীর ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় উলামা আঞ্জুমান বাইয়্যিনাত অথবা ভিন্ন কোনো নামে কোনো জঙ্গি সংগঠন আছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আগামী ৩০ নভেম্বরের আগে দুদক ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে এই আদেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেন। আদেশে একই সঙ্গে রাজারবাগ দরবারের পীরের অনুসারীদের করা (রিটে উল্লেখিত ৮টি) মামলা তদন্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে মামলার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে সিআইডিকে। সেই সঙ্গে আদালত রিট আবেদনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলেছিলেন। ওই দিনের দেয়া মৌখিক আদেশের লিখিত অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আমরা আদেশের সার্টেফায়েড কপি হাতে পেয়েছি। লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষকে এই মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হলো যে, কেন আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ক্রমাগত ফৌজদারি মামলা দায়েরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে না।
একই সঙ্গে রুলটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রিটকারী আটজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) অতিরিক্ত আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রিট পিটিশনের সংযুক্তি অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন হতে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত কমিটি ৭টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-
ক. রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে আয়ের উৎস ও রাজস্ব প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
খ. সাধারণ মানুষকে যেন ধর্মের নামে ধোঁকা দিতে না পারে এবং নিরীহ মানুষের অর্থ-সম্পদ যেন হয়রানিমূলকভাবে মিথ্যা মামলা করে হাতিয়ে নিতে না পারে সে জন্য রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানের মূল আস্তানাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখা কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
একই সঙ্গে তার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন ‘উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত’ এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রচারিত সংবাদপত্র ‘আল বাইয়্যিনাত ও আল ইহসান’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া আদেশে আরও বলা হয়েছে, সংযুক্তি থেকে প্রতীয়মান যে, উক্ত কথিত পীর ও তার দরবারের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার একর জমি, রাবার বাগান অবৈধভাবে দখলে আছেন।
উপরোক্ত সংযুক্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে এই আদেশ দেয়া হলো। আদেশের লিখিত অনুলিপিটি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। এর পরে হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতি ওই আদেশের অনুলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার দরবারের সব সম্পত্তির হিসাব চেয়ে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই দরবারের পীরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে করা ৮টি মামলা তদন্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। গত ১২ সেপ্টেম্বর এক রিটের শুনানিতে অন্যের জায়গা-জমি দখলের জন্য রাজারবাগ দরবার শরিফের পীরের কাণ্ড নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। মুরীদদের দিয়ে নিরীহ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা দায়েররের ঘটনায় সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট দেখে আদালত এ বিস্ময় প্রকাশ করেন।
ওই দিন হাইকোর্ট বলেন, পীর সাহেবের কান্ড দেখেন! জায়গা-জমি দখলের জন্য পীর সাহেবরা তাদের অনুসারী-মুরীদ দিয়ে কী করে দেখেন। যেখানে একটা মামলা দিলেই একজন মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়, সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত মামলা! এটাতো সিরিয়াস ব্যাপার!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।