Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

১১ কোটি টাকার রবি ফসলের ক্ষতি

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ফরিদপুর জেলায় দুই বারের বন্যায় ৬ উপজেলায় প্রায় ১১ কোটি টাকার রবি ফসললের ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ ফরিদপুর অফিস ইনকিলাবকে জানিয়েছেন। জেলা কৃষি অফিসার ড. হযরত আলী এ তথ্য নিশিচ করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোতে প্রায় ৯৭ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ৯০৩ জন কৃষক। অভাব ও অনটনে পড়ছেন কমপক্ষে প্রায় ৩০ হাজার কৃষক পরিবার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ইনকিলাবকে আরো জানিয়েছেন, দুইবারের বন্যায় ১০ কোটি ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের তিন হাজার ৯৪৫ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। যদিও স্থানীয় হিসেবে এর পরিমাণ আরও বেশি।
ফরিদপুর, সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা এলাকার কৃষকরা গণমাধ্যম জানিয়েছেন, জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রথম বারের বন্যায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় পানি বেড়ে নষ্ট হয় ধান, সবজি ক্ষেত ও কলার বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।
ফরিদপুর সদর থানার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের তায়েজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক রাসেল শিকদার (৪৮) এবং ছোনের টেকের গফর আলী এরা দুইজন মিলে প্রায় ১৬ একর জমিতে কলার বাগান করছিলো তাদের ফলজ বাগানটি বন্যার পানিতে সম্পুর্ন ডুবে সব কলা গাছ মারা যায়। পরে পানি নেমে গেলেও কলাগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি।
সদর থানার মোমিনখাঁর হাটের পদ্মার তীর এলাকায় দুই কলাবাগান চাষি রহমত ও আলেফ খান ইনকিলাবকে জানান, পহেলা অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ একর জমিতে রোপণ করা প্রায় এক হাজার ৮০০ কলা গাছ মরে গেছে। এই কলা বেঁচেই তারা পরিবারের বাৎসরিক খরচ চালাতেন। তবে শুধু রহমত ও আলেফই, নন চলতি বছরের দুই বারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার কৃষক।
ফরিদপুর সদর থানার নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন ও গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের পদ্মার পানি পরিমাপক সূত্রমতে, স্থানীয় রহমান ও বশির জানান, ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি প্রথম দফায় বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার এবং দ্বিতীয় দফায় ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এখন পানি নেমে গেলেও সর্বত্র রয়ে গেছে ক্ষতি হওয়া ফসলের মাঠের চিহ্ন।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে জানা যায়, বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলায় সাত হাজার ৯০৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভাঙ্গা উপজেলায়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা তিন হাজার ৪৩০ জন। সবচেয়ে কম মধুখালীতে ২১০ জন।
ফরিদপুর সদরের অম্বিকুপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কবির ঢালী (৫৫) বলেন, ইউনিয়নের নিচু এলাকায় ৪০ শতাংশে এবং নর্থচ্যানেল এলাকার রহমান কাজী (৪৪) তাজু ফকিরের ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক ৩৩ শতাংশ জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছিলেন। বন্যায় তার ৮০ ভাগ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
একই ইউনিয়নের আরজু মিরার ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আলেক মিয়া (৪০) বলেন, তার ৯ একর জমির মধ্যে তিন একর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ইনকিলাবকে জানিয়েছে, দুই বারের বন্যায় ফরিদপুরে ৯৭ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৯০৪ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। ৬২১ হেক্টর রোপা আমন, ২ হেক্টর আউশ (উফসী), ৯ হেক্টর আউশ (স্থানীয়), ১৯৫ হেক্টর বোনা আমন, ৭ হেক্টর কলা, ১৫ হেক্টর কাঁচা মরিচ এবং ৫৪ হেক্টর সবজি রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী ইনকিলাবকে বলেন, বন্যার পর দুই হাজার ১০ জন কৃষকের জন্য পাঁচ কেজি মাসকলাইয়ের বীজ ও ১৫ কেজি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব বীজ ও সার ছয় উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। বিএডিসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে কৃষকরা পরিবহন ব্যয় বরাদ্দ পাবেন বলেও জানান।
তিনি আরো জানান, সরকারিভাবে যতোটুক অনুদান ও বীজ আসবে তা ক্ষতিগ্রস্ত সকল কৃষকের মধ্যে সমান হারে বন্টন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ