Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যশোরে কালু ও আজিজুলের ফাঁসি হচ্ছে

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫০ পিএম

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুই বান্ধবীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হতে যাচ্ছে। সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গার আলোচিত ধর্ষক ও খুনি কালু ও আজিজুলের ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায় লক্ষীপুর গ্রামের মিন্টু ওরফে কালু ও একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল।

শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো তাদের দুজনের স্বজনেরা তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে টানা ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে ভুক্তভোগী দুই পরিবারের বলে জানিয়েছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, আজিজুল ওরফে আজিদ ওরফে আজিজ এবং মিন্টু ওরফে কালু আলমডাঙ্গার রায় রায়লক্ষীপুর গ্রামের দুই বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এ ঘটনায় ২০০৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মামলা হয়। দীর্ঘ সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই আসামি আজিজুল ও মিন্টু ওরফে কালুকে মৃত্যুদন্ড এবং দুইজনকেই দুই লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। এরপর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। আসামিপক্ষ মামলাটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও যান। চলতি বছরের ২৬ জুলাই সেখানেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ হয়। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া হলেও তা নামঞ্জুর হয়। সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, ফাঁসি কার্যকর করতে কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন ও আজিজুর রহমানসহ আটজন জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের সময়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির অনুরোধে তাদের স্বজনদের সাথে শেষ দেখাও সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলাকাটা হয় ওই দুই নারীকে। এ ঘটনায় নিহত কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম খুনের পর দিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন আসামি মহি মারা যান। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। এর পর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন। এ বছরের ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যশোর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ