বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাদীস শরীফে এসেছে যে : যখন দুইজন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করে, আল্লাহ তাআলার হামদ ও শোকর করে এবং আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে তো আল্লাহ তাআলা উভয়কে মাগফিরাত দান করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৬৯)। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘যখনই দু’জন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা পরস্পর হাত মিলায় তো আল্লাহ তাআলার ওপর তাদের এই হক জন্মে যে, আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করবেন এবং তাদের হাতগুলো পৃথক হওয়ার আগেই তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/১৪২, হাদীস ১২৪৫১)।
উপরোক্ত হাদীসগুলোর কারণে আমাদের পূর্বসূরী বুযুর্গরা মুসাফাহার সময় একে অপরের জন্য মাগফিরাতের দুআ করতেন। এই দুআর জন্য প্রসিদ্ধ আরবি বাক্যটি খুবই উপযুক্ত : ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম’। অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।’
এটা কত ভালো বিষয় যে, মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ প্রথমে শান্তি ও সালামতী এরপর ক্ষমা ও মাগফিরাতের দুআর দ্বারা হবে। ঈমানের পরে সুস্থতা ও নিরাপত্তা এবং মাগফিরাত ও পবিত্রতার চেয়ে বড় কোনো নিয়ামত আর আছে কি?
মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাৎ যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, এর প্রকৃত প্রেরণা তো আল্লাহর হামদ ও ছানা এবং সালাম ও মাগফিরাত কামনাই হওয়া উচিত। সায়ীদ আলমাকবুরী রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন : আমি (অনেক সময়) বাজারে যাই। তবে এজন্য নয় যে, সেখানে আমার কোনো প্রয়োজন রয়েছে; বরং এজন্য যাই যে, (সেখানে অনেক মানুষের সমাবেশ, তাই অনেক মানুষকে সালাম করার সুযোগ হবে) আমি তাদেরকে সালাম দেব এবং উত্তরে তাদের সালাম লাভ করব।’
বুশাইর ইবনে ইয়াসার বলেন : ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে কেউ আগে সালাম দিতে পারত না।’ (আততবাকাতুল কুবরা ইবনে সাদ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৫৫, ১৫২)। উমর রা. এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন : কেমন আছ? তিনি বললেন : ‘আমি আপনার কাছে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করছি।’ (হিলইয়াতুল আউলিয়া আবু নুয়াইম খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩০)।
ইমাম ইবনুল মুবারক রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন : ‘আমরা কখনো একে অপরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করি এবং কুশল জিজ্ঞাসা করি, শুধু এই উদ্দেশ্যে যে, এভাবে পরস্পরে আল্লাহর হামদ ও ছানা করব।’ (আযযুহদ ওয়ার রাকাইক পৃ. ৬৮-৬৯)।
সালাফে সালেহীনের মধ্যে এই অভ্যাস গড়ে উঠেছিল নবী করীম (সা.)-এর সুন্নাহর অনুকরণে। তবারানী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন- কেমন আছ? তিনি বললেন : ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি আপনার কাছে আল্লাহর প্রশংসা করছি।’ রাসূলে করীম (সা.) ইরশাদ করলেন, তোমার কাছে এটাই আমি চেয়েছি। (অর্থাৎ আমার প্রশ্নের উত্তরে তুমি আল্লাহর হামদ ও ছানা করবে এটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল)। (মাজমাউয যাহওয়াইদ খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ১৪০, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬)।
সারকথা এই যে, মুসলমানদের কোনো সাক্ষাত সালাম, দুআয়ে মাগফিরাত ও হামদ ও ছানা বিহীন না হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।