Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট : দীর্ঘ দেড় মাসের দুর্ভোগের পর সোমবার পরীক্ষামূলক চলবে ফেরি

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৪:৪৮ পিএম

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশপথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার পর অবশেষে কাল সোমবার সকাল থেকে পরীক্ষামূলক ফেরি চলবে। তবে দীর্ঘ দিন ফেরি বন্ধ থাকায় মাদারীপুরসহ ২১ জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেকে প্রচন্ড ¯্রােতের মধ্যেও লঞ্চ ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। এদিকে নতুন রুট হিসেবে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দিতে একটি ঘাট প্রস্তুত হলেও অজ্ঞাত কারণে ফেরি চলাচল হয়নি।
অন্যদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি বন্ধ থাকায় বিকল্প রুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে যাতায়াত করছে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন। ওই পথে দীর্ঘ সময় লাগছে। একই সাথে দ্বিগুণ ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর আগে পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে দুর্ঘটনা এড়ানোর কথা বলে এবছরের ১৮ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেন বিআইডব্লিটিসি কর্তৃপক্ষ।
এরুটে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে চার বার পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, গেলো বুধবার ও বৃহস্পতিবার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র একটি বিশেষজ্ঞ দল সার্ভে করেছে। এসময় তারা নদীতে ¯্রােতের গতিবেগ কম দেখতে পান। এর ফলে সোমবার থেকে পরীক্ষামুলকভাবে ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চালানো সফল হলে সকল ফেরি চালানো হবে। এজন্য ফেরিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে এই নৌপথে দীর্ঘ দিন ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া হয়ে রাজধানী ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এতে দ্বিগুণের বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। একই সঙ্গে ফেরি পারাপারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে যাত্রী পারাপারে একমাত্র ভরসা লঞ্চ। তাও সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলাচল করছে। নৌপথে রাতের অন্ধকারে দুর্ঘটনা এড়াতে রাতের বেলায় লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট সূত্র জানায়, শিমুলিয়া নৌপথে ১৮টি ফেরি রয়েছে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে পদ্মায় তীব্র স্রোত অব্যাহত থাকায় ২৪ দিনে পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চার বার ফেরির ধাক্কা লাগে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর পাইল ক্যাপ। এই পরিস্থিতিতে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ১৮ আগস্ট দুপুরের পর থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফেরি বন্ধের প্রায় দেড় মাসে পদ্মায় স্রোতের গতি না কমলেও পানির উচ্চতা অনেকটা কমেছে। শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বিকল্প রুট হিসেবে বাংলাবাজার ঘাটের পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি নৌরুট ভাবা হয়েছিল। ওই রুটে ফেরি চালুর জন্য মাঝিকান্দিতে ফেরির পন্টুন বসানো হলেও তা চালু হয়নি। এই রুটে নৌ-চ্যানেলে একাধিক ডুবোচর থাকায় ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।
বাংলাবাজার ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকটাই সুনসান নিরবতায় বাংলাবাজার ফেরিঘাট। ঘাটের পন্টুনের পাশে কয়েকটি ডাম্ব ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘাটে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নেই। ফেরি না চলায় কোনো গাড়ীও এখন আর পারাপারের জন্য এই ঘাটে ভিড়ছে না। যাত্রীরা যারা ঘাটে আসছেন, তারা ফেরিঘাটে না এসে লঞ্চঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। ফেরির যাত্রীরা লঞ্চে পদ্মা পারাপার হচ্ছেন। এ কারণে লঞ্চগুলোয় অতিরিক্ত চাপও দেখা গেছে।
বরিশালগামী লঞ্চের যাত্রী ফকরুদ্দিন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকায় বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। ফেরি বন্ধ থাকায় প্রচন্ড স্রোত ও ঢেউয়ের মধ্য লঞ্চ দিয়ে নদী পাড় হতে হচ্ছে। যেহারে লোকজন লঞ্চে উঠছে, তাকে যে কোন সময়েই বড় ধরণের দুঘর্টনা ঘটতে পারে।’
ঢাকাগামী যাত্রী আব্দুল জলিল হাওলাদার জানান, গত সপ্তাহে আমার মা অসুস্থ্য ছিলেন। তাকে ঢাকা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই নৌরুটে ফেরি বন্ধ থাকায় বিকল্প রুট দিয়ে যেতে হয়েছে। ওই পথে দীর্ঘ সময় লেগেছে, একই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও দ্বিগুণ দিতে হয়েছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ইয়াসমিন নামে বরিশালের গৌনদীর এক যাত্রী বলেন, ‘স্রোতের অজুহাত দেখিয়ে ফেরি বন্ধ রেখেছে। আর কর্মকর্তাদের এখন কোনো কাজ করতে হচ্ছে না। প্রতি বছরই এই সময়ে স্রোত বাড়ে। হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে জরুরী সেবার জন্য অন্তত অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ী পার করার জন্য দু-একটি ফেরি কি চালু রাখা যেত না। আসলে আমাদের মত সাধারন মানুষের জীবন মূল্যহীন।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘পদ্মায় পানির উচ্চতা আগের তুলনায় কমেছে। সেই সাথে স্রোতও আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। ফলে ফেরি চলাচল করার একটা সম্ভবনা রয়েছে। সোমবার থেকে ট্রাই করা হবে ফেরি চলাচলের।’
বিআইডব্লিউটিসি’র বাংলাবাজার ঘাটের ম্যানেজার মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চালানোর জন্য ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দু’ঘাট থেকে দুটো ডাম্ব ফেরি চালানো হবে। যদি পরিবেশ অনুকূলে হয়, তাহলে পরের দিন থেকে প্রতিনিয়ত ফেরি চলাচল করা হবে।’
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বানিজ্য) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, পদ্মা নদীতে ¯্রােতের গতিবেগ কমে এসেছে। সার্ভে ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চালানো হবে। সফল হলে ফেরি চলবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ