Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন মানবে না বিএনপি : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৪০ পিএম | আপডেট : ৫:৫৪ পিএম, ২ অক্টোবর, ২০২১

আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়ে ‘নিরপেক্ষ সরকার’ না থাকলে বিএনপি সেই নির্বাচন মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব সরকারের প্রতি এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের কথা খুব পরিস্কার, নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না। নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে।”

‘‘ শেষ কথা আমরা কোনো নির্বাচন মনে নেবো না যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সেই নির্বাচন না হয়।”

সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনাদের(সরকার) দিন ঘনিয়ে এসেছে, দিন শেষ। এখনো সময় আছে, মানুষের ভাষাগুলো পড়েন। দেয়ালের লিখন দেখেন। দেখে মানে মানে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করে সরে যান এবং জনগনকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।”

‘গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে হবে’

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে সকলে সুশৃঙ্খল হোন, বিশৃঙ্খল হবেন না। শুধু পদের জন্য দৌঁড়াবেন না। নতুন কমিটি হচ্ছে তার জন্য মাঠ বোঝাই করে দেবেন না। মাঠ বোঝাই করবেন যখন আন্দোলনের ডাক আসবে, মাঠ বোঝাই করবেন যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা মাঠে নামব, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যখন আমরা মাঠে নামব। তখন মাঠ বোঝাই করবেন, রাস্তায় বোঝাই করবেন।”

‘‘ আসুন এটাই পথ। আন্দোলন ছাড়া, গণআন্দোলন ছাড়া, গণঅভ্যুত্থানের জন্য এই দানবকে সরানো যাবে না। দানবকে সরাতে হলে আমাদের সমস্ত জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে, সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে এই গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা এই দানবকে আমাদের বুকের ওপর থেকে সরিয়ে নিয়ে মুক্ত বাতাস, মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্ত গণতন্ত্র সৃষ্টি করি।”

‘সুষ্ঠু হলে ওরা ৩০ আসনও পাবে না’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এই আওয়ামী লীগ সরকারের তাদের কোনো জনসমর্থন নাই। রাজনৈতিকভাবে তারা সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা জানে যে, যদি কে্ানো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনে তারা ৩০টা আসন পাবে না। এই কারণে তারা কী করেছে? সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা দলীয়করণ করেছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ এমনটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কষ্ট হয় বলতে আমাদের এই যে, গণমাধ্যম-এটাকেও তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। ফলে আজকে গোটা জাতি কথা বলতে পারছে না, তাদের মতামত দিতে পারছে না।”

‘‘ আমরা সাধারণ মানুষ যারা, প্রজাতন্ত্রের যারা আমরা নাগরিক আমরা একটা দিনই রাজা হই। যেদিন আমি ভোট দিতে পারি। কিন্তু সেই ভোটের অধিকারটা এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। এখন কেউ ভোট দিতে যেতে পারে না। এই ভোটের অধিকারটা, কথা বলার অধিকারটা এটা আমরা এমনি এমনি পাইনি। আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে, লড়াই করতে হয়েছে, আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে একটা রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হতে হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘আজকে আওয়ামী লীগ এখন আবার চেষ্টা করছে আবার তারা ক্ষমতায় আসবে ওই ধরনের একটা নির্বাচন করে। যে নির্বাচনে জনগন ভোট দিতে পারবে না। তারা ইভিএম চালু করেছে। এই যন্ত্র একটা বড় হাতিয়ার কি করে ভোট চুরি করা যায়, কি করে ভোট না পেয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়।”

‘‘ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হুদা সাহেব তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছেন… কয়েকদিন আগে তিনি রাশিয়াতে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি দেখে এসেছেন। রাশিয়ার একই অবস্থা। একইভাবে যে থাকে সরকারে হয় সে একবার প্রেসিডেন্ট হয় না হয় প্রধানমন্ত্রী হন। যা বাংলাদেশের সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নাই। ওটা দেখে এসেছেন উনি দিনের বেলা কিভাবে ভোট চুরি করা যায়, সেটা শিখে এসেছে। এই চক্রান্ত, এই ষড়যন্ত্র, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করবার এই ভয়াবহ যে প্রচেষ্টা-এটা আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন ‘ভয়ংকর’ সব আইন করে জনগনের কথা বলার অধিকারকে ‘সরকার পায়ের তলায় দাবিয়ে রেখেছে’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘১ অক্টোবর ২০০১ : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ট আসনে বিজয়ের পর খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেছিলেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ ওবায়দুল কাদের বলেন,যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে তারা সংবিধান বিরোধী কথা বলে। এই সংবিধানকে শেষ করে দিয়েছে কাটা-ছেড়া এই সরকার। তারা আবার লম্বা লম্বা কথা বলে। তারা(সরকার) বলছে, সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফিরে যাওয়ার সুযোগ নাই। এর সোজা ভাষা হলো আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নাই। যে আওয়ামী লীগ চিরজীবন ক্ষমতা থেকে যাবে না।”

‘‘ এই পুলিশ দিয়ে, এই প্রশাসন দিয়ে এই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিএনপিকে দমন করে রেখে, দেশবাসীকে দমন করে রেখে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকবে। তারা একটা ইতিহাস ভুলে গেছে পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি এবং স্বৈরাচারকে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের এখন একটাই কথা যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।”

বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ আমাদেরকে প্রেসক্লাবে জায়গা দেবেন না, আমাদেরকে ফুটপাতে জায়গা দেবেন না। আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেবেন না। এটা হবে না। সব মানুষের মুখে একটা আওয়াজ- আওয়ামী লীগ বোধহয় গেলো, বিএনপি বোধহয় আসছে। ইনশাল্লাহ আওয়ামী লীগ যাবে, বিএনপি ইনশাল্লাহ আসবে।”

‘‘ আওয়ামী লীগের পতন আমাদের ঘটাতেই হবে যেভাবে হোক। এই শত্রুকে নিপাত করতে হবে। এরা থাকলে আমাদের স্বাধীনতা থাকবে না, আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকবেন না, এদেশে গণতন্ত্র থাকবে না, এদেশের মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে না।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বক্তব্য রাখেন।

এই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজউদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, হালিমা নেওয়াজ আরলী, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আমিনুল হক, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, রফিকুল আলম মজনু, এসএম জাহাঙ্গীর, ইয়াসীন আলী, আরিফা সুলতানা রুমা, শায়রুল কবির খান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ সহাস্রাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • মোঃ ইব্রাহীম মোঃ ইব্রাহীম খলিল ২ অক্টোবর, ২০২১, ৬:৫৭ পিএম says : 0
    দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ তত্তাবধায়েক সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন দেখতে চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৪২ পিএম says : 0
    ওবায়দুল কাদের যে সমস্ত কথা বলেন সে গুলি গ্রহন যোগ্য নয়,তাদের অবৈধ সরকারের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন হবে সেটা অসম্ভব,উনার কথা হাস্যকর উনি যে ভাবে বলতেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আশা করে লাভ নেই,উনার কথায় বুজা যায় জোর করে একেবারে ক্ষমতা নিয়ে যাবেন,যেখানে জনগণের রায়ে আপনারা নির্বাচিত হন নাই কয়েক টি নির্বাচন কারচুপি করে ক্ষমতায় বসে আছেন,আবার বলতেছেন আপনাদের রাষ্ট্র পতি যাই করে তাই রাষ্ট্র পতি না কি সিদ্ধান্ত নিবেন নির্বাচন কমিশন,রাষ্ট্রপতি কি জনগণ বানাইছে না উনি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পতি,দেখেন ক্ষমতা জোর করে থাকার চেষ্টা করবেন না,এই দেশ আপনাদের আওয়ামী লীগের একা নয়,জনগণ সবাই দেশের মালিক জনগণের রায়ে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই ক্ষমতায় থাকবে,এত এব নির্বাচন নিয়ে চালাকী করার চেষ্টা আর করবেন না,আপনাদের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করবেন,সেটা আমরা প্রত্যক্ষান করলাম,সে আশা ভুলে যান,জলদি ভারতে চলে যান এখন ও সময় আছে জান বাঁচাতে চেষ্টা করুন ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ