Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নতুন জটিলতায় কবলে ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরন প্রকল্প

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:২৯ পিএম

ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা বন্দর-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি ৪ লেন-এ উন্নীত করন প্রকল্পটি নতুন জটিলতায় অনিশ্চয়তার কবলে পড়তে যাচ্ছে। বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরে আশা-নিরাশার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকল্পটি। এ লক্ষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ‘টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্স ফর সাব-রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রীপারেটরি ফেসিলিটিজ’এর আওতায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও প্রাথমিক নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও বিদ্যমান মহাসড়কটি ৪ লেন-এ উন্নীত হবে, নাকি সম্পূর্ণ নতুন মহাসড়ক নির্মিত হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরী হয়েছে। বিশাল ব্যায়বহুল এ প্রকল্পে অর্থের সংস্থান না হওয়ায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনিশ্চতার মধ্যেই নতুন জটিলতা পুরো বিষয়টিকে বিলম্বের দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল।
তবে দেশীয় তহবিলে ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রায় ২৩২ কিলোমিটার বিদ্যমান মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নত করার লক্ষে জমি হুকুম দখলে প্রায় দুহাজার কোটি টাকার একটি ভিন্ন প্রকল্প একনেক অনুমোদন দিয়েছে ২০১৮’এর ফেব্রুয়ারীতে। ফরিদপুর থেকে বরিশালÑপটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কের বিদ্যমান ভ’মির দু পাশে অতিরিক্ত প্রায় ৩০২ হেক্টর জমি অধিগ্রহন করার কথা ঐ অর্থে। ২০২০-এর জুনের মধ্যে এ ভ’মি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা থাকলেও এখনো তার ২৫ভাগ কাজও শেষ হয়নি।
এরই মধ্যে বিদ্যমান ২৪ ফুট প্রসস্ত এ মহাসকের জন্য বাড়তি কোন ভ’মি অধিগ্রহন না করে বিদ্যমান মহাসড়কটির জন্য ১২০ ফুট প্রসস্ত জমিতেই যতটা সম্ভব সড়কের ক্যারেজওয়ে প্রসস্ত করার পাশাপাশি তার মান উন্নয়ন করার প্রস্তাব দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ৪ লেন মহাসড়ক নির্মনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করনে প্রস্তাবিত ব্যায়ের প্রায় ৪০ ভাগ অর্থ সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল।
তবে নতুন এ ধারনার বিষয়ে এখনো কোন নেতিবাচক মনোভাব দেখায়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় সহ পরিকল্পনা কমিশনও।
ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীতকরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় ২০০২ সালের দিকে। ২০১২ সালে দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কাজ শুরুর পরে পায়রা ও কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটিও চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। মহাসড়কটি কুয়াকাটা পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নীত করলে পায়রা বন্দর সহ পর্যটন কেন্দ্রটির সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ করনে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখবে বলেও মনে করছেন বন্দর ব্যাহারকারী ও পর্যটক সহ ভ্রমন পরিচালন সংশ্লিষ্টগন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক অধিদপ্তরের একাধীক সূত্রের মতে ফরিদপুরÑবরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করনের পদক্ষেপ খুব যোড়ালভাবে এগুচ্ছে না। ঢাকাÑসিলেট মহাসড়ক সহ আরো কয়েকটি মহাসড়কের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধীক জনগুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করনে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের আগ্রহ থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি আশা ব্যঞ্জক নয় বলে মনে করছেন দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষও।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে সবগুলো প্রকল্পেরই সম্ভব্যতা সমিক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও অন্য কয়েকটি মহাসড়ক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হলেও দেশর ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পটির অর্থায়ন সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় সহ পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন কবে মিলবে তাও অনিশ্চয়তার আবর্তে।
এরই মধ্যে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যায়বহুল এ প্রকল্পটির নকশা নিয়েই জটিলতা তৈরী হয়েছে। বিশাল ব্যায়বহুল এ প্রকল্প বৈদেশিক ঋন বা অনুদান ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টগন। যেহেতু এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পটির সমিক্ষা ও নকশা প্রনয়নে অর্থায়ন করেছে, সেহেতু মূল প্রকল্প বাস্তবায়নেও সেখান থেকে অর্থ সহায়তার আশা করছেন কতৃপক্ষ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল মহলের মতে, বিদ্যমান মহাসকটি লেনে উন্নীতকরন না নতুন ৪ লেন মহাসড়ক নির্মান, এক্ষেত্রে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন জরুরী। এক্ষেত্রে যতে কালক্ষেপন হবে, ততই এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে বলেও মনে করছেন মহলটি।
সরকার ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কই ৪ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা সহ এর সম্ভাব্যতা সমিক্ষা, প্রাথমিক নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন করে জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা লাভ সহ নানা কারণ বিবেচনায় প্রথম পর্যায়ে ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পায়রা ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিও একইভাবে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত ছিল।
কিন্তু নকশার জটিলতা নিরশন সহ অর্থ সংস্থান করে কবে নাগাদ সারা দেশের সাথে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নয়নের কাজ শুরু হবে তা বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষও।



 

Show all comments
  • মিজান বিন রাজ্জাক ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৩৮ পিএম says : 0
    বরিশাল বিভাগের লোক সব সময় অবহেলিত। নানা অজুহাতে উন্নয়ন থেকে ছিটকে যায় বরিশালের লোক। কুয়াকাটা সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার পরেও কোন টেক সই উন্নয়ন নাই যুগের পর যুগ। সবাই ফিতা কাটে কিন্তু উন্নয়ন হয় না। বড়ই দুর্ভাগা আমরা দক্ষিণাঞ্চলের জনগন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ