Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ড্যাপের পরিধি বাড়ছে

আগামী জানুয়ারিতে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫২ এএম

প্রকৃতির সাথে মানুষের বসবাসযোগ্য মহানগর গড়ে তোলার উদ্যোগ : ১৩২৭ কিলোমিটার নদী-খাল ও ৫৬৬ কিলোমিটার নৌপথ থাকবে

বিনিয়োগের সর্বজনীন স্বাধীনতা, প্রকৃতির সাথে মানুষের মেলবন্ধন, উন্নত জীবনমান উপযোগী করে রাজধানীকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড় তুলতে ২০ বছর মেয়াদি অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০১০-১৫) এর রিভিউ কার্যক্রম এবং ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) চ‚ড়ান্তকরণ করা হয়। তবে আগের আয়তনের চেয়ে এবার নগরের পরিধি বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ড্যাপের ভ‚মি ব্যবহারের শ্রেণি পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কারিগরি কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম।
ড্যাপের ভ‚মি ব্যবহারের শ্রেণি পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কারিগরি কমিটির সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যেই ড্যাপ চ‚ড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। ঢাকাকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য যে সব বিষয়গুলো আমলে নেয়া দরকার, তা পর্যালোচনা করে ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি চ‚ড়ান্ত করার পর বাস্তবায়ন হলে ঢাকার অনেক পরিবর্তন আসবে। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করে। সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং বিধিবহিভর্‚তভাবে অনেক অবকাঠামো নির্মাণ এ রাজধানী শহরটির সৌন্দর্য মলিন করে দিয়েছে। এ শহরে নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হয় না। সরকারি খাল-বিল দখল করে বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। কোনো অবস্থায়ই এসব আর করতে দেয়া যাবে না। নকশা এবং বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-(রাজউক) এর প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন, বিনিয়োগের সর্বজনীন স্বাধীনতা, প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপন, উন্নত জীবনমান, সহনশীল শহর এবং বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন রাজধানীকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড় তুলতে ২০ বছর মেয়াদি অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হয়েছে। এরা অনুত নতুন এলাকা যুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে ড্যাবের পরিধি আগের চেয়ে বাড়বে।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) প্রণীত হয় ১৯৯৩-৯৫ সালে। এতে কাঠামোগত ও নগরায়িত এলাকার পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করা হয়। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ড্যাপ প্রণয়ন করে সেই অনুযায়ী ঢাকা মহানগরের সব উন্নয়নকাজ পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা বার বাড় পরিবতন করা হয়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। পরে নতুন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকার মিশ্র ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে সিএস ও আরএস জরিপ অনুযায়ী খাল-নদী-নালা উদ্ধার এবং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে আমূল উন্নয়ন হওয়া এলাকা থেকে ভেটারমেন্ট ফি আদায়সহ জোনভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নতুন ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে রাজধানী ঢাকা-উত্তরে গাজীপুর সিটি- দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সিটির এলাকার যা ধলেশ্বরী নদীর দ্বারা বেষ্টিত এবং পশ্চিমে সাভার এবং পূর্ব কালীগঞ্জ-রুপগঞ্জ এবং দক্ষিণ পশ্চিমে কেরানীগঞ্জ পরিকল্পিত, বাসযোগ্য ও আধুনিক নগরী হবে বলে জানিয়েছে রাজউক।
রাজউকের প্রকল্প সার-সংক্ষেপের বলা হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মধ্যে নতুন ড্যাপ চ‚ড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে। এজন্য দু’টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি ড্যাপ প্রণয়নে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, এনজিও, সুশীল সমাজসহ সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে ড্যাপ প্রণয়ন চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। এজন্য এ যাবত ১৮০টি অংশগ্রহণমূলক সভা, ২৬০০টি লিখিত মতামত গ্রহণ এবং এক হাজার ৩০টি প্রশ্নমালা দিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এরপর চ‚ড়ান্ত ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করা হবে। এর আগেও একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে রাজউকের আওতাভুক্ত ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। বিসিএস অনুযায়ী ২০১১ সালের জনসংখ্যা: প্রায় ১৫.৫ মিনিয়ন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রক্ষেপিত জনসংখ্যা : প্রায় ২৬ মিলিয়ন।
এর আগে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫) এবং আরবান এরিয়া প্ল্যান (১৯৯৫-২০০৯) এর পলিসির আলোকে সমগ্র রাজউক এলাকার জন্য ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়। ২০১০ সালের ২২ জুন চ‚ড়ান্ত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয় ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে ড্যাপের গেজেট প্রকাশের মাত্র ৫দিন পর বিশদভাবে ড্যাপ পর্যালোচনা করে চ‚ড়ান্ত করতে ২০১০ সালের ২৭ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৭ জন মন্ত্রীকে নিয়ে একটি ‘মন্ত্রিসভা কমিটি’ গঠন করে দেওয়া হয়। এই কমিটিকে ড্যাপ রিভিউ কমিটিও বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে আবারও ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরে ৫২৫টি আবেদন মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন হলে কমিটি ১১১টি আবেদন অনুমোদনের বিষয়ে সুপারিশ করে। বর্তমানে সংশোধিত ড্যাপ (২০১৬-৩৫) প্রণয়নের কাজ শুরু হয় নতুন করে। সংশোধিত ড্যাপ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে পুরোনো ড্যাপ বাতিল হয়ে যাবে। এর আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় রাজউক রিভাইজড ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়ন করা হয়।। প্ল্যানের আলোকে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-৩৫) প্রণয়ন করা হচ্ছে। গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চ‚ড়ান্ত ড্যাপের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এই সময়েও ড্যাপ প্রণয়নের কাজ শেষ করতে না পারায় সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করে রাজউক। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-৩৫) প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
প্রতিটি এলাকায় আবাসিকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক এলাকারও চাহিদা থাকে। এজন্য ড্যাপের মহা-পরিকল্পনায় কোনও এলাকাকে শুধু আবাসিক বা বাণিজ্যিক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। এজন্য এলাকাভিত্তিক মিশ্র ব্যবহারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় মোট ১৩২৭ কিলোমিটার নদী ও খাল রয়েছে। নদীগুলোর প্রশস্থতা ও নাব্যতা বৃদ্ধি করা হবে। পরিকল্পনা প্রায় ৫৬৬ কিলোমিটার নৌপথকে শ্রেণি অনুসারে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় থাকা কালভার্টগুলো ব্রিজ এবং নৌচলাচলের উপযোগী ব্রিজ করা হবে। সদরঘাট এবং নারায়ণগঞ্জের নৌ-টার্মিনালকে মাল্টিমোড়াল টার্মিনাল রূপান্তর করা হবে এবং মদনগঞ্জে একটি নতুন মাল্টিমোডাল টার্মিনাল করা হবে।
ঢাকা শহরে প্রয়োজনীয় বাস ডিপো, টাক টার্মিনাল এবং এমআরটি ডিপোটর জায়গা নির্ধারণের জন্য ঢাকা রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি এলাকা চিহিৃত করা হয়েছে। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের আবাসনের বিধানযুক্ত করে ৫৪টি এলাকার প্রস্তবানা রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ভিত্তিক এলাকা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তাবনায় ৬২৭টি বিদ্যালয় এবং ২৮৭টি প্রস্তবানায় রয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাবনায় ৫টি বৃহ আঞ্চলিক পার্ক, ৪৯টি পানিকেন্দ্রীক পার্ক, ৮টি ইকোপার্ক এবং ৯টি অন্যান্য পার্ক। নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যবস্থাপনা হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) চ‚ড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা জন্য মিটিং হয়েছে। সংশোধিত ড্যাপের চ‚ড়ান্ত গেজেট প্রকাশ হলে ঢাকা মহানগরীসহ রাজউক এলাকাভুক্ত এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়নে ড্যাপ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। তবে নতুন করে আগের চেয়ে এলাকা আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ড্যাপ

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ