পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেগ পেতে হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে : আইজিপি
অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সঙ্গে প্রায়ই কোন্দলে লিপ্ত হয়। তাদের ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। শুধু তাই নয়, তারা পাড়া মহল্লার প্রভাবশালী, মাস্তান বা বড় ভাইদের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। দলবেঁধে মাদক সেবন করার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় নারীদের উত্ত্যক্ত করে। ঝুঁকিপূর্ণ বাইক ও কার রেসিং তাদের ‘ফ্যাশন’। তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি ও ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর। নানা অযুহাতের মাধ্যমে অভিভাবকদের ফাঁকি দিয়ে তারা এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এতে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরাও।
এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার করার সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়াও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুনভাবে ভাবার আহবান জানিয়ে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, গত তিন বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রেক্ষাপটে কিশোর গ্যাং একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
আইজিপি বলেন, আমাদের সংসদে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন হচ্ছে। আদালতও অনেক নির্দেশনা দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কিশোর আইনও হালনাগাদ হয়েছে। সে হিসেবে একজন ব্যক্তি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে আইন চেঞ্জ করার কারণে যেটা হয়েছে তাতে যে যুবকে পরিণত হয় তাকেও শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে আইন অনুযায়ী কিশোর অপরাধীকে গ্রেফতার করা যাবে না। তাদেরকে সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে। সংশোধনাগারের সংখ্যাও কম। ফলে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আশা করছি এটিও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশের ৬৪ জেলায় গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব পেয়েছে গোয়েন্দারা। শুধু রাজধানীতেই ৩৪টি গ্রæপ পেয়েছে। এসব গ্রæপের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। প্রতিদিনই পুলিশের বিশেষ শাখাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফতরগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ আসছে। যার মধ্যে অধিকাংশ কিশোরের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তারা রাজধানীতে প্রায় ৬০টি কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ গ্রæপই সক্রিয়। এই ৩৪টি গ্রæপের সদস্যরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে রাজধানীর ধোলাইরপাড় এলাকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন- রাহাদ, ফিয়াদ, রাশেদ, ইসমাইল, ফিরোজ, বাদল, রাসেল, সাগর, জনি, গুটি হৃদয়, মফিজ, এহসান, আতিক ও সুমন ওরফে ফরমা। কুতুবখালীতে মজনু, হিদর, মুকুল, সাহেদ, ইমন ও খোও। যাত্রাবাড়ীতে রাজু, রমজান, মোবারক, খোকন, হাবু, রাসেল, পারভেজ, অনিক, আহসান, রাজীব, নুর মোহাম্মদ, সবুজ, বাবু, ইউসুফ, হায়দার, রতন, সুজন, জালাল, সাইফুল, আলম, শোভন, সোহেল, রানা ও শুভ। কাজলা এলাকায় ফরমা খোকন, সুমন, শাহিন, আলম, হানিফ, রাসেল, পারভেজ, অনিক ও রুবেল। শনির আখড়ায় রাতুল, রেজা, সাগর, শুভ, রিপন ও রিংকু। সায়েদাবাদে মিঠু, ফিরোজ, আশিক, মাসুম, ইকবাল, সোবহান, সুমন, শাহিন, সোহেল, রানা, নিজাম, খোকন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়াও রাজধানীর বাকি এলাকায় তালিকাও ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, নানান ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় কিশোরদের নিয়ে অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমার ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর থেকে আমার ছেলে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর তদারকি শুরু করি। কিন্তু বিভিন্ন সময় মিথ্যা কথা বলে পরিবারের সদস্যদের আড়ালে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি কাউকে বলতে পারছি না। আবার ছেলেকেও সংশোধন করতে পারছি না।
তবে অভিভাবকদের উদ্দেশে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সন্তানের জন্য বাবা-মায়েরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা কী করে, কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, এগুলো দেখা প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব। পুলিশ প্রধান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪০ বাস্তবায়নে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে উন্নয়নের ধারায় কিশোর গ্যাং কোনোভাবেই যেন বাধা না হয় সেদিকে আমাদের সবার নজর দিতে হবে।
অপরদিকে, কিশোর অপরাধ দমনে জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাÐ হাতে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কর্মকান্ডের আওতায় গতকাল রাজধানীর মধুবাগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে জনসচেতনতামূলক টিভিসি উদ্বোধন করেছে র্যাব। ‘সবার হোক একটাই পণ, কিশোর অপরাধ করব দমন’ শীর্ষক টিভিসি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমি যখন এসএসসি পাস করেছি তখন আমার বয়স ছিল ১৫ বছর। বর্তমানে যারা নিয়মিত পড়াশোনা করেন ১৮ বছর বয়সে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। আমাদের মনে হয় ১৮ বছরের এ সময়সীমা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। আন্তর্জাতিক একটি আইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় এটি করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে কিশোর অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেগ পেতে হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, এটি ধরে রাখার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা। কিন্তু আমাদের কিশোররা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের শঙ্কার বিষয় ছিল কোভিডকালীন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকবে, সবাই বসে থাকবে। তবে এ সময়ে কিশোরদের নিয়ে যে শঙ্কাটা ছিল ততখানি হয়নি, আমাদের দেশ অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ-র্যাব, শিক্ষক ও সমাজ তাদের কার্যক্রম চালচ্ছে। তারপরেও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি কেন? বিষয়টি নিয়ে খেয়াল না করলে আমাদের সন্তানদের হারিয়ে ফেলব, দেশ-জাতির সবাই নিগৃহীত হবে। সমাজের শাসন যদি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যতই কড়াকড়ি করুক আমরা হারিয়ে যাব। তাই সময় থাকতে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে খেয়াল করুন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তবে আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল না রাখেন তাহলে এটি আমরা কখনোই পারব না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, কারা কিশোরদের অপরাধী বানাচ্ছে, তাদের হাতে কারা মাদক তুলে দিচ্ছে, তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অপরাধ শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, প্রতিরোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে র্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ছোটদের সঙ্গে বড়রাও থাকে। ছোট-বড় মিলে বিরোধ হয়, পরে আলাদা গ্রæপ সৃষ্টি হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারির মতো ঘটনা ঘটে। কিশোর অপরাধ দমনে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে মানে এই নয়, আভিযানিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কেউ সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে সুপথে না আসে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা চলমান থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।