পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির (এফএসডিডব্লিউসি) ৯ম বৈঠক আয়োজন করেছে বেসরকারি খাতের থিংকট্যাংক বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। আজ (বুধবার) ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি কো-চেয়ার করেন আবু ফারাহ মো. নাসের, ডেপুটি গভর্নর ১, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এন কে এ মবিন, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
স্বাগত বক্তব্যে বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম ৮ম বৈঠকের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য প্রদান করেন। একই সঙ্গে তিনি পাক্ষিক মনিটরিং কমিটি গঠন, ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, কটেজ ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ, নারীদের জন্য পৃথক বরাদ্দ, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, কোল্যাটারাল মুক্ত ঋণ, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (সিজিএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিং সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশংসা করেন। তিনি সিএমএসএমইদের জন্য একটি সমন্বিত ডেটাবেজ তৈরির বিষয়ে উল্লেখ করেন, যেটি নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন, এটুআই ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কই একমাত্র শর্ত নয়, প্রজ্ঞাপন অনুসারে বুক অব অ্যাকাউন্টসের উপর ভিত্তি করেও ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে এসএমই ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা শুরু করেছে। কোলেটারাল মুক্ত ঋণের জন্য সিজিএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেক বিভাগে কোলেটারাল মুক্ত ঋণ প্রদানের উপর জোর দেয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ শতাংশ কোলেটারাল মুক্ত ঋণ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোট ঋণের ৮ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ সুদে প্রদান করতে হবে। তিনি জানান, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের বিকল্প নিয়ে আসতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে করে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স সমস্যার সমাধান হয়। তিনি আরো জানান, গ্রামীণ ও অতি-দরিদ্র ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং, এমএফএস ও ব্যাংকের উপশাখার মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার কোলেটারাল মুক্ত ঋণ প্রদানের একটি নতুন স্কিম গ্রহণ করেছে।
আবু ফারাহ মো. নাসের আরো বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমনভাবে নীতি বাস্তবায়ন করছে যার ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সহায়তা নিশ্চিত হবে এবং বেসরকারি খাত বিশেষ করে সিএমএসএমইদের উপর তহবিলসংক্রান্ত বোঝার ব্যয় কমে আসবে। তিনি জানান, সিএমএসএমইদের পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিশ^ব্যাংক যৌথভাবে কাজ করছে।
এন কে এ মবিন বলেন, সিএমএসএমইর সংজ্ঞার বিষয়টি সমাধান করা হলে সিএমএসএমইদের অর্থায়নের চ্যালেঞ্জগুলো নিরসন করা সহজ হবে। সিএমএসএমই উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল প্রতিষ্ঠান যেমন এসএমই ফাউন্ডেশন, বিসিক, পিকেএসবি, পিকেএসএফ, ইত্যাদিকে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। ২০২১ সালে ডিসিসিআইয়ের সদস্যদের উপর পরিচালিত একটি জরিপের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য আবেদনকারী ৪৫ শতাংশ উদ্যোক্তাই ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন পায়নি, এছাড়া অনুমোদিত ঋণের অর্ধেকই সঠিক সময়ে বিতরণ করা হয়নি। তাঁর মতে, ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক এক্ষেত্রে একটি বাধা। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে সিএমএসএমইরা, কিন্তু প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এ খাতটি খুব কমই সহায়তা পাচ্ছে। ব্যাংকের উচিত ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ তিন মাস বা ছয় মাসের নগদ প্রবাহের উপর গুরুত্ব প্রদান করা। তিনি স্টিমুলাস প্যাকেজ বিতরণের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, এসএমই ব্যাংক, এবং বেসরকারি খাতের জন্য কর সুবিধা প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে ‘রিডিজাইনিং কভিড স্টিমুলাস লিংকিং টু এমপ্লয়মেন্ট, কনজাম্পশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফর নেক্সট রাউন্ড সাপোর্ট’ শিরোনামে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিল্ডের গবেষণা সহযোগী মো. কামরান হাসনাইন। তিনি চলতি বছরের মার্চ-জুলাই সময়ে বিল্ড-ইউনিডোর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি জরিপের প্রাথমিক ফাইন্ডিংস এতে তুলে ধরেন। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাত্র ৬ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা পেয়েছে, যা কিনা এশিয়ায় গড় হিসেবে ৩৬ শতাংশ। মার্চ-জুলাই সময়ে দেশের সকল এসএমই ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে, এশিয়ার ঘাত-সক্ষম ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই সময়ে বাংলাদেশে ভোক্তা চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এ জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশে ও এশিয়া অঞ্চলের এসএমই ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মী ছাঁটাইয়ের হার উচ্চ।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের হেড অব এসএমই মোরেটরিয়াম সম্প্রসারণ সংক্রান্ত বিল্ডের প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাঁর মতে, এর ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের মুখোমুখি হবে না।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণের ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। ক্রেডিট লাইন, ট্রেড লাইসেন্স ও লেনদেনের পরিমাণ সংক্রান্ত যেসব বিধান রয়েছে সেগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ করা প্রয়োজন।
প্রিজমের টিম লিডার আলী সাবেত বলেন, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথক একটি এনটিটির বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে। কটেজ শিল্পের উদ্য্ক্তোাদের কাছে পৌঁছতে তিনি বিসিকের বিশাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগানের পরামর্শ দেন।
ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর মাইক্রোফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বলেন, একই রকম দেশগুলোর মধ্যে (জিডিপির সাপেক্ষে) বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের তুলনা করে জরিপ পরিচালনা করা হলে প্রকৃত অবস্থা আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে।
ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, তফসিলি ব্যাংকের প্রতিনিধি, একাডেমিশিয়ান, বিজনেস চেম্বার ও এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও আরো অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।