Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুরু হচ্ছে টেস্ট পাইলিং

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অর্থায়ন করছে চীন : উপকৃত হবে ৩০ জেলার ৪ কোটি মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার টেস্ট পাইলিংয়ের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হবে আগামী মাসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ‘ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পের খসড়া ঋণ চুক্তি অনুমোদন করেছেন। সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঋণ চুক্তি অনুমোদন হয়েছে। যেকোন সময় চুক্তিও হয়ে যাবে। আশা করছি আগামী মাসেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তার আগে ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার টেস্ট পাইলিং হবে। প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক এ মাসেই চুক্তিতে সই করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি চার বছর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। কথা ছিল ২০১৭ সালে এর নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ ঋণ অনুমোদন করতে দীর্ঘ সময় নেওয়ায় এই প্রকল্পের কাজ এতদিন শুরু হয়নি। এখন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এই কাজ শেষ করার জন্য আরও চার বছর সময় চাইছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চার বছর সময় লাগার কথা। তবে তার আগেই যাতে শেষ করা যায় সে লক্ষ্যেই দ্রুত কাজ করা হবে। এজন্য সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে ঝামেলা হতে পারে কিছু কিছু এলাকার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, জমি অধিগ্রহণের কাজ আগেও চলেছে, এখনও চলছে। কাজ শুরুর আগে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। এতে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থিত ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকে (ডিইপিজেড) যুক্ত করবে। এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫টি জেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫টি জেলার মানুষ খুব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। নিরসন হবে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কের যানজট। সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি মানুষ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে লাভবান হবেন। সাভার ইপিজেড-এ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গতি ফিরবে অর্থনীতিতে।

রাজধানী ও আশপাশ এলাকার যানজট কমাতে প্রায় চার বছর আগে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে চীনের অর্থায়নে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। সরাসরি দরপত্র প্রক্রিয়ার (ডিটিএম) মাধ্যমে চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রকল্পের আওতায় ঋণ চুক্তির বিষয়ে সর্বাত্ত্ব প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে ওই অর্থবছরে ঋণ চুক্তি হয়নি। সে সময় ইআরডি ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে ঋণচুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। চায়না এক্সিম ব্যাংক বিষয়টি মূল্যায়ন করে ঋণ দিতে রাজি হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এ প্রকল্পটির আওতায় ঋণ চুক্তির কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সে সময় চূড়ান্তভাবে ঋণচুক্তি হয়নি। দীর্ঘ পরীক্ষা, নীরিক্ষা ও সমীক্ষার পর চীনের এক্সিম ব্যাংক ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণের অনুমোদন দিয়েছে, যা টাকার অংকে ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি। চীন প্রকল্পের সামগ্রিক খরচ ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার ৬৫ শতাংশ বহন করবে।

জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সংযুক্ত করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে। বিমানবন্দরের উল্টোদিকের ঢাকা এলিভেটেডের স্টার্টিং পয়েন্ট (কাওলা) থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাওলার থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেডে গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। সাভার ইপিজেড থেকে যে কেউ আশুলিয়া এলিভেটেডে উঠে কাওলা এসে ঢাকা এলিভেটেড হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হতে পারবেন। এছাড়া চলাচলকারীরা এর মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানের র‌্যাম্প ব্যবহার করে সাভার, আশুলিয়া, পূবাইল, আবদুল্লাপুর বা ঢাকা এলিভেটেডের (কাওলা-কুতুবখালী) নির্ধারিত র‌্যাম্প ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ওঠানামা করতে পারবেন।

জানা গেছে, শুরুতে সরকার এই প্রকল্পের কাজ সরকারি- বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে শেষ করতে চেয়েছিল এবং অর্থনীতি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে এর অনুমোদন দেয়। সে সময় ২ বিলিয়ন ডলার খরচে ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরবর্তীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া, দুটিতেই পরিবর্তন আনা হয়।

এরপর সরকার চীনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকল্প সূত্র জানায়, চীনের এক্সিম ব্যাংক গত বছরের নভেম্বরে ঋণের অনুমোদন দিয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে খসড়া ঋণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয় এবং সেটি গত ২ সেপ্টেম্বর অনুমোদন পায়। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক শাহাবউদ্দীন খান বলেন, তহবিল সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা শেষ হয়েছে এবং ঠিকাদার ইতোমধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে কিছু কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী, চীনের ঠিকাদারকে চুক্তি সইয়ের পর প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ ৬২ মাস সময় দেওয়া হবে।

এই মেগা প্রকল্পকে ফলপ্রসূ করতে সাভারের নবীনগরে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এ দুটি ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২ কিলোমিটার। কাওলা থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে চারলেন বিশিষ্ট। আবদুল্লাপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কও চার লেন করা হবে। আর ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বিলের মধ্যে সড়ক তুলে ফেলা হবে। সেখানে সড়কের পরিবর্তে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হবে। এর আগে সেখানে চারলেনের দুটো ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তারপর সেখানকার সড়ক কেটে জলাশয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হবে। ওই জলাশয়কে ঘিরে সরকারের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। আর আশুলিয়া ব্রিজ থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নর্দমা তৈরি করা হবে। ওই নর্দমা দিয়ে শিল্প অধ্যুষিত ওই এলাকায় পানি ও পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন হবে।



 

Show all comments
  • Abdul Wahed ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 0
    এবার গ্রামের রাস্তার দিকে মুখ তুলে তাকান
    Total Reply(0) Reply
  • Mahabub Morshed ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
    মাপ চাই, ঊন্নয়ন লাগবে না। খালি দেশ টারে দুর্নীতিমুক্ত করি দেন
    Total Reply(0) Reply
  • Fhm Moydur Rahman ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
    ঢাকা থেকে পদ্মা, মেঘনা যমুনা পরযন্ত মালবাহী যানবাহনের রাস্তা আলাদা করে দেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Azad Faruk ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪০ এএম says : 0
    বন্ধু দেশ , দাদার দেশের এমন একখান নজির দেহান।
    Total Reply(0) Reply
  • Alam Bd ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪০ এএম says : 0
    এটা হলে কি লাভ হবে? বর্তমান সরকার এ রকম বহু ব্রীজ করছে তাতে কি দেশের যানজট কমেছে ? কারন যে রাস্তায় গাড়ি চলার কথা ১০০০ সে খানে গাড়ি চলে ৫০০০, নেই কোন গাড়ির ফিটনেস নেই চালকের লাইসেন্স , সপ্তাহে বি আরটিএ ৩ দিন রাস্তায় তদারকী করলে হয়তো কিছু টা সমাধান আসতে পারে,
    Total Reply(0) Reply
  • Shaidourrahman Liton ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪১ এএম says : 0
    এত বড় বড় সেতু করে কি লাভ যদি আমি রক্ষণাবেক্ষণ না করি? কুড়িল ফ্লাইওভারের অবস্থা গত এক বছর যাবৎ খারাপ এর দায়িত্বে থাকা লোকেরা এক টুকরি বিটুমিন ফেলতে পারলনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Atiq Baher ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪১ এএম says : 0
    এই রাস্তাটা হলে অনেক ভালো তবে আবার গাজীপুর এক্সপ্রেস ওয়ে এর মত কত বছর লাগে তার কোন ঠিক নাই...তাই প্রকল্প দেয়ার বা নেয়ার আগে পরিকল্পনা আর দক্ষতা যাচাই করা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Jhhaka Sanyosh ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪২ এএম says : 0
    দরকার আছে সড়কের, যেমন সাভার, গাজিপুর,নরসিংদী, মেঘনা, মাওয়া, দোহার জয়পাড়া হয়ে সাভারের সাথে এক হয়ে গেলে এবং গোল হবে কোন সিগনাল থাকবে না, তিন লাইনে সড়ক তৈরী করা হলে একটা নতুন বাংলাদেশ হবে, হে এখানে জবাব দীহি থাকতে হবে, চুরি বাটপারি চলবে না,,
    Total Reply(0) Reply
  • Sana Ullah ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 0
    ঢাকা শহরের যানজট কিয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না কেননা ফ্যাক্টরি কলেজ গার্মেন্টস এবং রাস্তার উপরে দোকানদারি করা এগুলো যদি সারা বাংলাদেশে ভাগ করে দে তাহলে আর ঢাকা শহরে যানজট হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:২৯ এএম says : 0
    BANGLADESH ER MOTO GHONOBOSHOTI DEHH E, 6 LANE R NICHE KONO ROAD OR BRIDGE KORA WCHITH NA (TAKA TO R KOM KHOROCH KORA HOY NA) PODDA BRIDGE ATO HAJAR KUTHI TAKA KHOROCH KORE KORA HOLO KINTU RAIL LINE RAKH HOLO SINGLE !!! KI AMADER MATHA MOTA PROSHASHON
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ