Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ শেষ

ছাত্রদলের কাউন্সিলের ২ বছর

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে সর্বস্তরেই ভোটের মাধ্যমে কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যার সূচনা হয়েছিল চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবকে দিয়ে। এরপর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেটের থাবা থেকে ছাত্রদলকে বের করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বিএনপি প্রধান। দায়িত্ব পেয়ে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে গঠন করা হয় ১১টি টিম। এসব টিমের নেতৃত্বে উপজেলা, থানা, পৌর ও কলেজগুলোতে কর্মীসভা করে দেয়া হচ্ছে নতুন কমিটি। পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে প্রায় সবকটি জেলা কমিটি। দেয়া হয়েছে নতুন কমিটিও। নতুন নেতৃত্বের এসব কাজ সাধুবাদ পেয়েছে সারাদেশেই। তবে এই কমিটি গঠন করতে গিয়ে বিভিন্ন টিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন, পকেট কমিটি করার অভিযোগ শুরু থেকেই। আর ৬০ জনের আংশিক কমিটি দিয়ে নির্ধারিত মেয়াদ শেষেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা সব ভালো কাজের মধ্যে কলঙ্গ হয়ে আছে ছাত্রদল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের।

দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে সারাদেশের প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব বাছাই করার সুযোগ করে দেন তারেক রহমান। নির্দিষ্ট বয়সসীমা, অবিবাহিত শর্তজুড়ে দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বের করেন তিনি। একারণে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা, আন্দোলন, মামলার মুখোমুখীও হতে হয়। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। পরবর্তীতে ৬০ জনের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তারেক রহমানের নির্দেশেই ছাত্রদলকে তৃণমূল থেকে ঠেলে সাজাতে সাংগঠনিক টিম তৈরি করে দেয়া। এসব টিম উপজেলা, পৌর ও কলেজ কমিটি গঠন শুরু করেন। কিন্তু কমিটি গঠনের শুরু থেকেই আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম, পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ আসতে থাকে একের পর এক টিমের বিরুদ্ধে। দু’একটি টিমের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাঠানো হয় তারেক রহমানের কাছেও।

এর মধ্যে কেবল বরিশাল টিমের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলার সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠুর পদ স্থগিত করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কুমিল্লা টিমের প্রধান মোক্তাদির হোসেন তরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে ফরিদপুর টিমে বদলি করা হয়। কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অন্য টিমগুলোও পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়েছে এই অনিয়মে। এর মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক অনিয়মে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম ‘ক’ এর বিরুদ্ধে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে পকেট কমিটি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম থেকেই যখন আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়, তখনই যদি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন তাহলে পরবর্তীতে আর কেউ এমন কাজ করার সাহস দেখাতো না। কিন্তু তারা যখন দেখেছেন তারেক রহমান এ বিষয়ে তেমন কঠোর না তখন পরবর্তীতে অন্যরাও এই সুযোগ গ্রহণ করেছে।

তৃণমূলে বদলের হাওয়া: ১৮ থেকে ২০ বছর আগে উপজেলা-থানা-পৌর ও কলেজ কমিটি ঘোষণা হয়েছিল, এরপর সেসব নেতারা অনেকে যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল হয়ে বিএনপির রাজনীতিও করছিলেন। কিন্তু ছাত্রদলের নতুন কমিটি হয়নি এই দীর্ঘ সময়ে। বেশিরভাগ উপজেলা-থানায় নিষ্ক্রিয় ছিল ছাত্রদল। সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা প্রতিটি শাখার নেতৃবৃন্দ ও পদপ্রত্যাশীদের নিয়ে কর্মীসভা করে নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন। বর্তমান কমিটির অধীনে ইতোমধ্যে সারাদেশের ১৭শ’র বেশি উপজেলা-থানা-পৌর ও কলেজ শাখার মধ্যে ১৫শ’র বেশি শাখায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন আছে আরও শতাধিক কমিটি। পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে ৫০টির বেশি জেলা কমিটি। নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও সুনামগঞ্জ সাংগঠনিক জেলায়। এছাড়া ১৪টি সাংগঠনিক জেলা মর্যাদার কলেজেও নতুন কমিটি দিয়েছে ছাত্রদল। চলতি মাসেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জেলা শাখা জাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর, তেজগাঁও কলেজের মতো শাখাতে কমিটি ঘোষণা করা হবে। নতুন এসব কমিটি পেয়ে ইতোমধ্যে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড়িয়েছে তৃণমূলে। আর দীর্ঘদিন পর আবারও তৃণমূলে কমিটি করায় ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব সাধুবাদ পেয়েছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো নেতাদের।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক রহমানের নির্দেশে ছাত্রদল কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আমাদেরকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেভাবেই সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছি। এছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যখনই আমাকেসহ অন্যদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সহযোগিতা চেয়েছেন আমরা সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করেছি।

রাস্তায় ঘুরছে পদপ্রত্যাশীরা: একই সাথে রাজনীতি করেছেন, কাধে কাধ মিলিয়ে মিছিল, সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে বছরের পর বছর খেয়ে-না খেয়ে রাজনীতি করেও পদের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন শতাধিক ছাত্র নেতা। ১২-১৫ বছর ছাত্রদলের সকল কর্মসূচি অংশ নিয়েও ৬০ জনের কমিটিতে জায়গা পাননি অনেকে। আবার তাদের হাতে রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছে এমন অনেকেই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে। ফলে না পারছেন পরিবারের কাছে ঠায়, মুখ লুকাতে হচ্ছে সহযোদ্ধাদের কাছ থেকেও। তাদের অভিযোগ, শতাধিক যোগ্য নেতা থাকার পরও দুই বছর ধরে আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদল। অথচ বর্তমান কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন এমন অনেকের চেয়ে যোগ্য, পরিশ্রমী, মেধাবী ছাত্র নেতা রয়েছেন পদের অপেক্ষায়।

পদপ্রত্যাশী ছাত্রনেতাদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ আল ফয়সল, মো. মুতাছিম বিল্লাহ, খায়রুল আলম সুজন, মো. ঝলক মিয়া, মোল্লা মোহাম্মদ মুছা, রোকনুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, ইব্রাহীম খলিল ফিরোজ, আনোয়ার পারভেজ, মঞ্জুরুল আলম রিয়াদ, সফিকুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, আবদুস সাত্তার রনি, নাজমুল হাসান, সাকির আহমেদ, সালেহ আদনান, মুস্তাফিজুর রহমান ফরহাদ, শরিফুল ইসলাম, জিএম ফকরুল হাসান, দিপু পাটোয়ারী, মো. রেজোয়ান আহমেদ, নাদির শাহ পাটোয়ারী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরুজ মন্ডল, আসাদুজ্জামান আসলাম, আতাউর রহমান বুলেট, আবুল খায়ের ফরাজী। ঢাকা কলেজের আলীজা মিজান, জহির হাসান মোহন, দেউয়ান মামুন, আসিক আহমেদ, মারজান। কবি নজরুল কলেজের আরিফুর রহমান আরিফ, মো. মিলন হাওলাদার। তিতুমীর কলেজের আবুল হাসান চৌধুরী, রিয়াজ হোসেন, রেজাউনুল হক সবুজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু আহমেদ, শিমুল। ঢাকা মহানগরের জসীমউদ্দিন সরদার জীবন, আসাদুজ্জামান আশা, তানভীর আল হাদি, আবদুস সালাম হিমেল, হিমেল আল ইমরান।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, আমাদের কমিটি দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেই আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশে টিম গঠন করে দিয়ে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে আমরা ১৫শ’র বেশি কমিটি করে ফেলেছি, ১০-১২টি বাদে বাকী জেলাগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে, ৭টি জেলা শাখা ও ১৪টি জেলা মর্যাদার কলেজে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসেই ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

নির্ধারিত মেয়াদেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পরেই করোনার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। দুই বছরের মধ্যে দুই দফায় দীর্ঘ কয়েক মাস কার্যক্রম স্থগিত ছিল। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে আমরা কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি।

আর পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলোতে একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছে কিন্তু পদ দুটি। তাই তাদের সবাইকে আমরা কাক্সিক্ষত পদ দিতে পারবো না। নতুন কমিটিতে যারা বাদ পড়বেন তাদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দিতে হবে। এজন্য এই কমিটিগুলো শেষ হলেই ১৫১ বা ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই এটি করার কথা জানিয়েছেন খোকন।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
    এই গুলি করতে দেরী কোনও বুজলাম না,সময় কোথায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রদল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ