পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাবিবুর রহমান
পাম্পে জ্বালানি তেল বিক্রিতে ওজনে কম দেয়া হচ্ছে। সারাদেশের ৫৬৬টি অনুমোদিত ও ১০৩টি অনুমোদনহীন পাম্পে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ লিটার অকটেন ও ৩০ লিটার ডিজেল ও পেট্রোল ওজনে কম দেয়া হচ্ছে। এতে করে মাসে ২৭ লাখ টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে পাম্প মালিকরা। একই সাথে ভেজাল জ্বালানি তেলের কারণে হাজার হাজার গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। ওজনে কম দেয়া এবং ভেজাল রোধে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এমপি ইনকিলাবকে বলেন, অনেক পাম্প ওজনে কম দিচ্ছে। আমরা সেগুলো বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন আগামী বৈঠকে দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ওজনে কম নয়, ভেজাল জ্বালানি তেল দিয়ে হাজার হাজার গাড়ীর ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। সেগুলোও দেখতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে গঠিত কমিটি ১২টি সুপারিশ করেছিল। নির্ধারিত সময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। অনেক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা জ্বালানি তেল বিক্রিতে ওজনে কম দেয়া।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারাও স্বীকার করে বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় ওজন কম দেয়া হয়। জেলা ও উপজেলায় পাম্পগুলোতে ওজনে একটু কম দেয়া হয়।
বিএসটিআই ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে, এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ ১৬২টি পাম্প পেয়েছে। ২৮টি পাম্পের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তারপরেও প্রতিনিয়তই পেট্রোল পাম্পগুলোর মধ্যে গ্রাহক ঠকানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কতিপয় দুর্নীতিবাজ পাম্প মালিক প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ির মালিক, চালকসহ গ্রাহকদেরকে ঠকাচ্ছে। আইনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেল ওজনে কম দিলে অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রতিটি অপরাধের জন্য অর্থদ-সহ ৩ বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনে থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না বলে গাড়ীর মালিকদের অভিযোগ।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ইতিমধ্যে অনুমোদনহীন ১০৩টি পাম্প চিহ্নিত করেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিএসটিআই ৩০টি অভিযান পরিচালনা করে। বিভিন্ন অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ১২৪টি পেট্রোল পাম্পকে ১ কোটি ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মামলা করা হয় ২৮টি পাম্প মালিকের বিরুদ্ধে।
রাজধানীর কল্যাণপুরের মেসার্স সাহিল ফিলিং স্টেশন ম্যানেজার মোজাম্মেল হক ইনকিলাবকে জানান, তার পাম্পে প্রতিদিন অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার লিটার। আবার কখনো কখনো ২ হাজার লিটার থেকে তিন হাজার লিটারও বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ডিজেল বিক্রি হয় বেশি। অপরদিকে, বিএসটিআই’র ওজন ও পরিমাপ (মেট্রোলজী) বিভাগ বলছে, ওজনে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শাহিল ফিলিং স্টেশন প্রতি ১০ লিটার অকটেনে ৫০ মি.লি. গ্রাহকদের কম দিচ্ছে। একইভাবে ডিজেল প্রতি ১০ লিটারে ৫০ মি.লি. কম দেয়া হচ্ছে। যার মাস শেষে দাঁড়ায় ডিজেল ২৮ লিটার ও অকটেন ৪৫ লিটার। এর মধ্যে ডিজেল বিক্রি বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে ডিজেল ১৮ হাজার ২০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই পাম্পের মালিক। জালিয়াতির এ ঘটনা ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওজন ও পরিমাপ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এবং সংশোধনী এ্যাক্ট ২০০১ সালের আইনে মামলা দিয়েছে।
বিএসটিআই ওজন ও পরিমাপ (মেট্রোলজী) বিভাগ সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর উত্তরার কাছে পূর্ব আব্দুল্লাহপুরের মেসার্স খন্দকার সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশন অকটেনে ১০ লিটারের মধ্যে ৭০ মি. লিটার গ্রাহককে কম দিয়ে আসছে। ঠিক একইভাবে ডিজেলেও কম দিয়ে আসছে ওই পাম্প।
উত্তরা এলাকার মেসার্স উত্তরা ফিলিং এন্ড সিএনজি স্টেশন ডিজেল ১০ লিটারে ৮০ মি. লিটার কম দিচ্ছে। মেসার্স তাসিন সিএনজি ফিলিং স্টেশন ডিজেলে ১০ লিটারের মধ্যে ১৯০ মি.লিটার থেকে ২৩০ মি. লিটার কম সরবরাহ করে। একইভাবে অকটেনে প্রতি ১০ লিটারে ৮০ মি. লিটার কম দিচ্ছে। মেশিনে জালিয়াতির কারণে ওজনে কম দেয়ার এই কৌশল গ্রাহক বুঝতেই পারে না।
ঢাকা হেলথ ফার্মাসিটিতে চাকরি করেন সোহেল রানা। দশ বছর ধরে মোটরবাইক চালান তিনি। তার অভিযোগ, নগরীর অধিকাংশ পাম্পগুলোতে ওজনে কম দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি নগরীর এলেনবাড়ী ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশন থেকে পেট্রোল কেনেন। তিনি বলেন, তেজগাঁও সিটি সিএনজি তেল পাম্প সবাইকে তেল কম দেয়। এগুলো রোধ করার জন্য সরকারের উচিত নিজস্ব উদ্যোগে ডিজিটাল মিটার স্থাপন করা। যাতে করে পেট্রোল পাম্পগুলো আমাদের না ঠকাতে পারে।
একই অভিযোগ করেন শাব্বির আহমেদ। তিনি প্রায় ১৫ বছর যাবত মোটর সাইকেল চালান। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে আমাকে শেরাটন হোটেল সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পটি ঠকিয়েছে। আমার মোটরবাইকে সাড়ে ৭ লিটার তেলের ট্যাঙ্কিতে ওরা ১২ লিটার তেল ভরেছে বলে দাবি করেছে। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার সিটি সিএনজি তেল পাম্প প্রতিনিয়ত ওজনে তেল কম দিচ্ছে। শুধু গ্রাহকের অভিযোগ নয়, মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কয়েকবার জরিমানা করেছে পাম্পটিকে।
অথচ বিএসটিআই’র জরিমানার কথা অস্বীকার করে পাম্প কর্তৃপক্ষ। তেল কম দেয়া প্রসঙ্গে পাম্পের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার উত্তম বলেন, আমরা কাউকে ওজনে কম দেই না। সব সময় আমরা সরকারি লোকের কাছে তেল বিক্রি করি। তেল কম দিলে আমাদের কাছে ক্রেতা আসত না। বিএসটিআইয়ের তথ্য মতে, ওজনে কম এবং ভেজাল জ্বালানি তেল বিক্রি করা ফিলিং স্টেশনগুলো হচ্ছে, মেসার্স রহমান ফিলিং স্টেশন, মেসার্স লতিফ এন্ড সন্স ফিলিং স্টেশন, মেসার্স তাসিন সিএনজি ফিলিং স্টেশন, উত্তরা ফিলিং স্টেশন, শাহিল ফিলিং স্টেশন, পদ্মা অয়েল কোম্পানির অধীনে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে অবস্থিত সাহানা ফুয়েল, বগুড়ায় অবস্থিত জীবিকা ফুয়েল সেন্টার,তিশা এন্টারপ্রাইজ, এমআর ট্রেডার্স, মেঘনা অয়েল কোম্পানির অধীনে সরদার ফিলিং স্টেশন, হক ফিলিং স্টেশন, যমুনা অয়েল কোম্পানির অধীন গাইবান্ধায় অবস্থিত বাঁধন ফিলিং স্টেশন, লক্ষ্মীপুরের মতিন ট্রেডার্স ও নওগাঁর নিউ খন্দকার স্টেশন। এসব পাম্পের জ্বালানি বিক্রির হিসাব কষলে দেখা যায়, সারাদেশে এক মাসে ২৭ লাখ থেকে ২৮ লাখ টাকার মূল্যে অকটেন ও ডিজেল গ্রাহকদের কম দিচ্ছে মালিকপক্ষ।
বিএসটিআই মেট্রোলজি উইং-এর জুলাই মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে ১৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। পাম্প পরিদর্শন করা হয়েছে ৫৪টি, পরিদর্শনকৃত ডিসপেনসিং ইউনিটের সংখ্যা ১৬২টি। ত্রুটিপূর্ণ পাম্প পাওয়া গেছে ১৮টি। মামলা করা হয়েছে ২৮টি। মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২৬টি। জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ২ হাজার টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ওজনে তেল কম দেয়ার কারণে দেশব্যাপী তেল পাম্পগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১১১টি। এছাড়া একই সময়ে ওজনে কম দেয়ার কারণে পাম্পগুলোকে জরিমানা গুনতে হয়েছে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা।
অপরদিকে, জ্বালানি বিভাগে পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানি তেল বিক্রির বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জ্বালানি তেলের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১২টি সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেরিন বা বার্জ ডিলার নিয়োগে বিপিসির নীতিমালা অনুসরণ করা, ডিলারদের বিপণন কোম্পানি থেকে তেল উত্তোলনের হিসাব রাখা, তেল তোলার আগে কত পরিমাণ তেল ট্যাংকে মজুদ ছিল তার হিসাব রাখা, বার্জের ফ্লো মিটার বিএসটিআই’র মাধ্যমে চেক করা। সভায় কনডেনসেটের দাম পুনঃনির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ইকরামুল হক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সাধারণ জনগণ তেল ও অকটেন নিতে যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা নিয়মিতভাবে তেল পাম্পগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছি। অনেক সময় যদি গ্রাহকরা আমাদের কাছে অভিযোগ দেন তবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগের ভিত্তিতে তেল পাম্পে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে থাকি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিই।
পেট্রোল পাম্পগুলোর গ্রাহক ঠকানোর প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইকরামুল হক বলেন, ব্যবসায়ীদের মনোভাব আগে পরিবর্তন করতে হবে। তারা (তেল পাম্প) যেমন গ্রাহক ঠকানো বৃদ্ধি করছে তেমনিভাবে আমরাও জরিমানার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, আপনারা দেখছেন ওজনে কম ও ভেজাল তেল দেয়া পাম্পগুলোকে ধরতে আমাদের প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শন এবং অভিযান পরিচালনা করেছেন। যারা ওজনে কম দিচ্ছে সাথে সাথে সেই মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরের জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ওজনে কম ও ভেজাল তেল দেয়া পাম্প রাজধানী ঢাকায় কম রয়েছে। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এরকম পাম্প বেশি। আমরা চাই সরকার এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।