Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কম্পিউটার অপারেটর থেকে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক

মাদক, জাল টাকা ও মুদ্রাসহ গ্রেফতার নুরুল ইসলাম জাহাজ কেনার পরিকল্পনা ছিল, সাভারে আছে পার্ক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

টেকনাফ স্থলবন্দরের কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামের উত্থান সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ১৩০ টাকায় কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। আট বছর পর ২০০৯ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেয়। দালালি সিন্ডিকেট তৈরি করে এখন তিনি ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। অবৈধভাবে উপার্জনের টাকা দিয়ে জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছিলেন নুরুল ইসলাম। এছাড়া সাভারে একটি পার্ক তৈরিতেও বিনিয়োগ করেছেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃত নুরুল অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩৭টি বাড়ি ও জমি কিনেছেন। এর বাইরে সাভার ও টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বিপুল সম্পদ। এছাড়াও নামে-বেনামে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে সোমবার মধ্যরাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. নুরুল ইসলামকে (৪১) গ্রেফতার করা হয়। নুরুল ইসলাম ভোলা সদরের পশ্চিম কানাই নগরের মো. আব্দুল মোতালেবের ছেলে। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, মিয়ানমারের ৩ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের মুদ্রা, ৪ হাজার ৪শ পিস ইয়াবা এবং নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার নুরুল ইসলাম তার অপরাধ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।
নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, সে ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেয়। বন্দরে কর্মরত থাকার সময়ে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করে। একইসঙ্গে দালালির বিভিন্ন সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়। পরে নিজেই সেই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আস্থাভাজন একজনকে একই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। চাকরি ছেড়ে দিলেও দালালি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রেখে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
র‌্যাব জানায়, টেকনাফ বন্দরের দালাল সিন্ডিকেটের প্রধান নুরুল: নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রীক দালাল সিন্ডিকেটের প্রধান। তার সিন্ডিকেটে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি, বরইয়ের আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেফতার নুরুলের সঙ্গে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের যোগসাজশ ছিল বলেও জানা গেছে।
বন্দরের ইনভয়েস কারসাজিতেও নুরুল: অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় এবং চতুরতার সঙ্গে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েস কারসাজি করত নুরুল ইসলাম। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সে।
ঢাকায় ফ্ল্যাট-প্লটও গড়েছে নুরুল: দালালি ও অবৈধ কার্যক্রমে অর্জিত অর্থে ঢাকা শহরে ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট কিনেছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে ৩৭টি জায়গা, প্লট, বাগানবাড়ি রয়েছে। অবৈধভাবে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা। নামে-বেনামে তার বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে নুরুল জাহাজ শিল্প ও ঢাকার নিকটবর্তী বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার আল মঈন বলেন, নুরুল ইসলামের সঙ্গে কারবারিদের ইয়াবা বেচাকেনার তথ্যও আমরা পেয়েছি। তার ঢাকার বাসা থেকে ইয়াবাও জব্দ করা হয়েছে। কক্সবাজার ও টেকনাফ কেন্দ্রিক মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে। আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তার ছিল সখ্যতা। কম্পিউটার অপারেটরের পদে থাকার সময় আমদানি-রফতানিকারক দুটি বেনামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুলটাইম দালালির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া অর্থের ব্যবহার বৈধ করতে গড়ে তোলে ৫টি প্রতিষ্ঠান। সরকার দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও সখ্যতার ভিত্তিতে দালালির কাজ করত সে। তবে গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতেই এই প্রথম র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় নুরুল।
জাল টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে কমান্ডার আল মঈন বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ কেন্দ্রিক বাণিজ্য করার সুবাদে সে দেশের দালালদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। সে দেশের দালালদের মাধ্যমে জাল টাকার লেনদেন করত।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চাকরির পর থেকে নুরুল ইসলাম বন্দরে গাড়ি ও জাহাজের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করত, জাহাজ থেকে বিভিন্ন পণ্য খালাসের সময় কর্তৃত্ব করাসহ ভেতরে বাইরে বিভিন্নভাবে দালালি করত। সাভারে একটি পার্ক ও বন্দরে জাহাজ কেনার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি।



 

Show all comments
  • Kalimdad Sumon ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৬ এএম says : 0
    এই সব চুনোপুঁটি ধরে আসলে বাহাদুরির কিছু নাই। রাগব বোয়াল ধরে দেখান, বাহবা পাবেন।এইসব চিচকা চোরগুলারে যারা ডাকাত হতে সাহায্য করে তাদেরকে আগে ধরতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mojibor Rahman ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশের যতগুলো ........... আছে, যারা হারামের টাকা খেয়ে খেয়ে পেট মোটা করেছে। সবগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Kaium Parvej ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৮ এএম says : 0
    হাজারো নুরুল ইসলাম প্রশাসনে ভরপুর তাদের একটু নাড়া দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohamed Emran Miah ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৯ এএম says : 0
    এইসব দুর্নীতি বাজদের কারণেই দেশটা ধ্বংশের পথে, এদের বিচার কোন দিনও হয়নি আর হবেও না। যারা তদন্ত কমিটি গঠন করবে, এরাই আবার নতুন করে দুর্নীতি শুরু করবে !
    Total Reply(0) Reply
  • Jhon Gomes ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৭ এএম says : 0
    চুপিসারে সবাই অবৈধ টাকা কামাচ্ছে। সমস্যা হল একটু বেশি হয়ে হলেই প্রশাসনের নজরে পড়ে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • GM Abu Sufian ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশের বন্দরের বেশিরভাগ কর্মকর্তারাই অবৈধ টাকা কামায়...বাহ কি চমৎকার সোনার ছেলেরা,,লোভে পাপ পাপে মৃত্যু,, মানুষের কত টাকা হলে তাদের আত্মতৃপ্তি পাবে আল্লাহই ভাল জানে
    Total Reply(0) Reply
  • Luthfar Rahman ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৮ এএম says : 0
    এদেরকে প্রকাশ্যে ক্রসফায়ার দেওয়া হলে এটা মডেল হয়ে থাকবে আর কেউ দুর্নীতি করতে সাহস পাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Zobaeir Ahmed ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৯ এএম says : 0
    চুনোপুঁটি ৪৬০ কোটি টাকার মালিক ঐ বন্দরের সর্বোচ্চ অফিসার কত কোটি টাকার মালিক তদন্ত করে দেখেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Mosarrof Hossain ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৯ এএম says : 0
    পুটি মাছ ধরে লাভ নাই যদি পারো রাঘববোয়াল ধরো
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Alam ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
    What about the other port?
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Haque ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
    অফিসাররা কত কোটি টাকার মালিক?
    Total Reply(0) Reply
  • Rafique Mannan ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১৬ এএম says : 0
    একেই বলে "দক্ষ"কর্মী
    Total Reply(0) Reply
  • Dadhack ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:২৫ এএম says : 0
    মাশাআল্লাহ বাংলাদেশ হচ্ছে টাকার খনি আওয়ামী লীগের নিচের একজন নেতা দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে.....
    Total Reply(0) Reply
  • Dadhack ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:২৯ এএম says : 0
    সুদের সত্তুরটা পাপ কাজ আছে সবথেকে সব থেকে ছোটপাপ কাজ হচ্ছে নিজের মায়ের সাথে যেনা করা.. [নাউজুবিল্লাহ] কোরআনে আল্লাহ বলেছেন যারা সুদের সাথে জড়িত কেয়ামতের দিন যখন তাদেরকে উঠানো হবে ফেরেশতারা তাদের কাছে তলোয়ার দিয়ে বলবে যাও আল্লাহ রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো তখন কি হবে এখনো সময় আছে দেশটাকে আল্লাহর আইন দিয়ে চালানো হোক আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যই এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছে আল্লাহ সাথে শত্রুতা করার জন্যই নয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ