বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ
দেশে আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে কিছুদিন ধরে হালকা-পাতলা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজন নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুর জন্য মানসিকভাবে তৈরি হচ্ছেন, আর জাতীয় পার্টিতো নির্বাচনী প্রচারণাই শুরু করেছে। বিএনপি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, তবে দলটির নেতাদের কেউ কেউ তাদের দল আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন। দেশে আর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল নেই বলে এব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এদিকে যারা দেশের রাজনীতি ও বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে একটু ভাবনা-চিন্তা করেন তাদের কেউ কেউ এ নির্বাচন গুঞ্জন নিয়ে বেশ দ্বন্দ্বে পড়েছেন। তার কারণ হচ্ছে পত্র-পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত বিভিন্নমুখী রিপোর্ট। বলা দরকার যে দেশের ভোটদাতাদের বৃহত্তর অংশই এ ডিজিটাল আর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যুগেও পত্রিকা পড়েন না বা পড়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। তাই এ নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন কোনো জল্পনা-কল্পনা নেই। দেশে নির্বাচন ও ভোট প্রদান নিয়ে ইতোমধ্যে যে অভিজ্ঞতা তাদের অর্জিত হয়েছে তাও তাদের অনুৎসাহের একটি কারণ বলে মনে করা যেতে পারে। তাই নির্বাচনী গুঞ্জন নিয়ে কথাবার্তা এখনো উৎসাহী মহলের বাইরে ছড়ায়নি।
বাংলাদেশে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সবাই জানেন, এ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক জনগোষ্ঠীর ভোটাররা তো বটেই, প্রায় সব সাধারণ ভোটারও ভোটবর্জন করেন। এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থকদেরও বেশিরভাগই ভোট দিতে যাননি বা তাদের ভোট দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। ভোটের আগেই ১৫৩ জন আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদ সদস্য হন আর নামকাওয়াস্তে নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অন্যরা। বিএনপি এ নির্বাচনে ভোটদাতার সংখ্যা ৫ শতাংশ বলে দাবি করে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেমা ১০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলেছিল। তবে নির্বাচন কমিশন ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার দাবি করেছিল। এ নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। সরকার সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য এ নির্বাচন করতে বাধ্য হয় বলে তখন বলা হয়েছিল। যেহেতু সে নির্বাচন সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণভিত্তিক ছিল না, তাই অচিরেই একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা সরকার করবে বলে বিএনপিসহ অন্যরা আশা করেছিল। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার অনতিকাল পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার অনড় মনোভাব গ্রহণ করে। সে কারণে নতুন নির্বাচনের দিকে আর পা বাড়ায়নি। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না এ আশঙ্কায় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার দাবিতে অটল থাকে। কিন্তু সরকার তাদের সে দাবি মেনে না নেয়ায় স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, জনগণকে ভোট না দেয়ার জন্যও বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় সরকার প্রায় ভোটারশূন্য নির্বাচন অনুষ্ঠানপূর্বক যথারীতি সরকার গঠন করে। দেশের বিপুলসংখ্যক বিএনপি সমর্থকের ধারণা ছিল যে, যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছেন সেহেতু সরকার এ নির্বাচন করতে সাহস পাবে না। শেষমুহূর্তে হলেও নির্বাচন স্থগিত হবে। তারা আরো ভেবেছিল যে, তিনি এত জোর দিয়ে যখন নির্বাচন হতে না দেয়ার কথা বলছেন তখন নিশ্চয়ই তার দৃঢ় ভিত্তি আছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেখা গেল, সরকার নির্বাচন হতে না দেয়ার তার হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দেয়নি। খালেদা জিয়া নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি। শুধু তাই নয়, যে নির্বাচন হয়ে গেল তা বাতিল করা বা পুনঃনির্বাচনের জন্য সরকারকে বাধ্য করার কোনো ব্যবস্থাও তার দল করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, তাদের ভাষায়, এ প্রহসনের নির্বাচন বা অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন না করে বিএনপি চুপচাপ বছর পার করে দেয়। দুর্মুখেরা তখন বলেছিলেন, নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ বিএনপি ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। তারপর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সেই কথিত প্রহসনের নির্বাচনের বছরপূর্তি উপলক্ষে সরকারের গৃহীত হঠকারী পদক্ষেপ ও তার পরিণতিতে বিএনপির ডাকা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে, সহিংস ঘটনা ঘটে তা যারপর নাই দুঃখজনক। দেশবাসী সবারই জানা বলে তার পুনরুক্তি এখানে বাহুল্য।
সে নির্বাচনের পর আড়াই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। যারা ফের নির্বাচনের আশা করেছিলেন তাদের আশা ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে গেছে এবং তারা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে, ২০১৯ সালের আগে আর কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। বিএনপিও নতুন নির্বাচনের আশা যে, ছেড়ে দিয়েছে তা প্রকাশ্যে না বললেও বুঝতে অসুবিধা হয় না। শুধু তাই নয়, সে নির্বাচন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হয় তবু তারা অংশ নেবে বলে দলের কোনো কোনো নেতার কথায় জানা গেছে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কারো মধ্যে আলাদা কোনো প্রত্যাশা কিন্তু নেই। উল্লেখ্য, বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবৈধ বললেও সরকার সে কথায় কোনো গুরুত্ব দেয় না। আর প্রভাবশালী যেসব দেশ এ নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ মনে করে বা সমর্থনযোগ্য মনে করে না, তারা কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করেনি, এমনকি সরকার অসন্তুষ্ট হতে পারে এমন কোনো কাজ পর্যন্ত করেনি। তাদের এই অনাগ্রহ সরকারকে শক্তিশালী করেছে। সরকার এখন নিশ্চিত যে, নতুন কোনো নির্বাচন না দিয়েই মেয়াদ শেষ করে তারা অনায়াসে পরবর্তী নির্বাচনে যেতে পারবে।
প্রসঙ্গত স্মরণীয় যে, নির্বাচন নিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। সে কথা ছিল কাচের মতো স্বচ্ছ। গত জুলাইতে তিনি নিজের দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, পাঁচ বছর মেয়াদের আড়াই বছর চলে গেছে। বাকি আড়াই বছরের তিনমাস আগে থেকে নির্বাচন কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে সময় আছে আর দু’বছর তিন মাস। তাই তিনি নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে একাদশতম সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন। তাঁর কথায় বিভ্রান্তি ঘটার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন শোনা যায় এ বছরের শুরুর দিক থেকেই। কোনো কোনো পত্রিকায় এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এপ্রিলে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনীতির গুমোট পরিস্থিতির অবসানে আগাম নির্বাচন দিতে পারে সরকার। শিগগির না হলেও ২০১৯ সালে মেয়াদ পূরণের আগেই নির্বাচন দেয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।” জুনে আরেকটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, “আগাম নির্বাচনের কথা নাকচ করে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা মাঠে বক্তব্য দিলেও ভেতরে ভেতরে সরকার একটি আগাম নির্বাচনের অংক কষছে বলে জানা গেছে। সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী বছরের শেষের দিকে অথবা ২০১৭ সালের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে এ রাজনৈতিক অংক কষা হচ্ছে।” তবে এসব খবরের বাস্তবতা এখনো অনুমান পর্যায়েই রয়ে গেছে। সরকারি দলের বিশিষ্ট নেতারা আগাম নির্বাচন বিষয় কোনো কথা বলেননি। বরং তারা বারবার বলেছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ক’দিন আগে আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয় উড়িয়ে দিয়েছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে গিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, কিসের মধ্যবর্তী নির্বাচন? নির্বাচন যথাসময়েই হবে। তিনি এও বলেন, এমন কি সমস্যা হয়েছে যে, নির্বাচন দিতে হবে?
কিন্তু কথায় বলে আকাশের পরেও আকাশ আছে। আর খবরের পরেও খবর থাকে। তাই মেয়াদ শেষের নির্বাচন নয়, আগাম নির্বাচনের কথা আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, তা পত্রিকার পাতায় খবর হয়ে ছাপা হচ্ছে। সর্বসম্প্রতি ১ অক্টোবর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিলেটে নির্বাচনী সমাবেশের ঘটনায় উৎসুক মহল ভিন্ন কিছু অনুমানের চেষ্টা করছেন যা আগাম নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে। এ অনুমানের পেছনে তাদের কথা হচ্ছে, সব সরকারই তাদের সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে। সরকার মনে করছে, নানাবিধ সাফল্য্যের কারণে তারা খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে খুব কোনো উচ্চবাচ্য না হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকার কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে। অন্যদিকে মামলার বেড়াজালে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা হয়েছে। তা থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা তাদের নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদের উদ্বেগ যে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা যেভাবে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাতে এ বছরের মধ্যেই তাদের দ- হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা যদি হয় তাহলে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আইনত তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য ঘোষিত হবেন। তাহলে ল-ভ- বিএনপি হয়তো নির্বাচনে স্লোগান দেয়ার পর্যায়েও থাকবে না। সে অবস্থায় আসছে বছরের প্রথমার্ধে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলে তাতে আওয়ামী লীগের বিজয়ও নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দায়মুক্তও হওয়া যাবে। এসবই কিন্তু অনুমান, তারপরও তা যে সত্য হতে পারে না, তা বলা যায় না। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দ-িত হলে বিএনপির রাজনীতিতে যে মারাত্মক রকমের সংকট সৃষ্টি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন আওয়ামী লীগের বিপরীতে আঙ্গুল তোলার কেউ থাকবে না।
শোনা যায়, নির্বাচন বিষয়ে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, সরকার কী করতে চাইছে এসব বিষয়ে সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। বিশেষ করে এরশাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর বিষয়টি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর পেছনে কী রহস্য আছে তা অনুমানের চেষ্টা করেছেন তারা। বিএনপির মতো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও বিষয়টি দ্বন্দে¦ ফেলেছে। কারণ, মেয়াদের সোয়া দুই বছর আগে নির্বাচনী প্রচার শুরুর নজির দুনিয়ার কোথাও নেই। এরশাদ কার ইঙ্গিতে, কেন এত আগেই মাঠে নেমে পড়লেন তা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না। এর মধ্য দিয়ে সরকার আবার কোনো খেলা খেলছে কিনা তাও ভাবছেন কেউ কেউ। ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতাবানের মনে কত বিচিত্র ইচ্ছাই না জাগে! তার মধ্যে দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে ইঁদুর-বিড়াল খেলার মাধ্যমে ‘মজালাভের’ ইচ্ছাও থাকতে পারে।
আওয়ামী লীগের ভিশন প্রথমে ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। তা পরে বর্ধিত হয়ে ২০৪১ সালে পৌঁছেছে। পরে হয়তো আরো বাড়তে পারে ভিশনের মেয়াদ। এই তো পাশের দেশ ভারতে কংগ্রেস দল ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত একটানা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারপর তাদের বিজয় রথ সাময়িককালের জন্য থেমে যায়। আবার সে রথ চালু হয় ১৯৮০-তে। তবে তারপর আর একটানা চলেনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তাদের জয়রথ একটানা চালু রাখতে চাইছেন। তাই ২০০৯-এর সরকার গঠনের পর তারা আর বিজয় রথের একটানা গতি বাধাগ্রস্ত হোক তা চাইছেন না। ২ অক্টোবর সে কথাটিই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এইচটি ইমাম। এদিন এক সেমিনারে তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে শেখ হাসিনাকে আরো কয়েকবার ক্ষমতায় রাখতে হবে। এ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আরো কয়েকবার বিশেষ করে আরো দুইবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তার এ বক্তব্য এক অর্থে নির্দোষ, আরেক অর্থে ভীতিকর। নির্দোষ এ অর্থে যে যার নেতৃত্বে ও আমলে দেশে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারা গতিশীল, দেশের স্বার্থে তাকে ক্ষমতায় রাখা যৌক্তিক দাবি। কিন্তু দেশতো রাজতান্ত্রিক শাসনে চলে না, গণতান্ত্রিক বিধানে চলে। অবশ্য এ দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকলেও সে নামটি ব্যবহার না করে উপায় নেই, কারণ তা না হলে বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা মিলতে চায় না। আর সে গণতন্ত্রের নিরাপসযোগ্য শর্ত হলো সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। নির্বাচনের প্রধান ভিত্তি হলো জনগণ। গণতন্ত্রের শর্ত পালন করে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে নির্বাচিত হলে কয়েকবার বা দুই বার কেন, কংগ্রেসের মতো আগামী ৩০ বছরও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারে। তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আর দেশপ্রেমিক হিসেবে, দেশের উন্নতির স্বার্থে তা তিনি চাইতেই পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। আর ভীতির বিষয় হলো, জনগণ তো কথিত এত উন্নতি, সমৃদ্ধি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দলকে নাও চাইতে পারে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় আর নেতিবাচক রায় আসে তাহলে আওয়ামী লীগ কী করবে? তারা কি কংগ্রেসের মতো জনগণের রায় মেনে নিয়ে সুবোধ বালকের মতো ক্ষমতা ছেড়ে দেবে? নাকি সে রকম কোনো ঝুঁকি না নিয়ে আওয়ামী লীগের যাতে কয়েকবার, কমপক্ষে আরও দু’বার ক্ষমতায় থাকা যাতে নিশ্চিত হয় আগেই আটঘাট বেঁধে সে ব্যবস্থা করবে? বহু লোকের মনেই শেষের বিষয়টি ফের শংকার ছায়া ফেলছে।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। কিন্তু এও সত্য যে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতারও কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপি নেতারা একেকজন আজ যেখানে ডজন ডজন ফৌজদারি মামলার আসামি, যাদের আদালতে হাজিরা দিতে আর ব্যয় বহন করতে প্রাণান্ত অবস্থা, কোনো মামলা থেকেই কারো মুক্তি মিলছে না, কবে মিলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই, আর কোনো মামলায় জেল হয়ে গেলে যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হয়ে পড়ার আইন রয়েছেÑ সে অবস্থায় দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ কি বিদ্যমান বলে ধরা যাবে?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি শংকাবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এখানে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ কিছু আশা করা দুরূহ। দুর্মুখেরা রাজনীতিকে ‘ভানুমতির খেল’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন যাতে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। আমাদের বেলায় তা ইতিবাচক হলেই ভালো। চোখের সামনে যখন আর কিছু দেখা যাচ্ছে না তখন সে রকম কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায় আপাতত থাকা যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।