Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝালকাঠী-পিরোজপুর সীমান্তের ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট এবার প্রাণচঞ্চল

ভাল দাম পেয়ে খুশি উৎপাদকগন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:১৩ পিএম

ঝালকাঠি-পিরোজপুর সীমান্তে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত ভিমরুলী’র ভাসমান হাটে এবার ভাল দাম পেয়ে গতবছরের করোনা সংকটের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারছেন আটঘর-কুড়িআনা’র পেয়ারা উৎপাদকরা। তবে বাজার মূল্য গতবছরে চেয়ে ভাল হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি এবারো কিছুটা কম ছিল। যা মাঝে মধ্যেই উৎপাদকদের দুঃশ্চিন্তার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি এবারো ভিমরুলী’তে দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকদের পদচারনা সিমিতই রয়েছে। ফলে এ কৃষিপণ্যের সাথে গড়ে ওঠা পর্যটন খাতে জড়িতরা এবারো খুব ভাল করতে পারেন নি।
গনমাধ্যমে ব্যপাক প্রচারনায় গত এক দশক ধরেই সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ঝালকাঠীর ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে ছুটে আসতেন। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদুত এবং বিদায়ী ভারতীয় হাই কমিশনারও ২০১৯ সালে ভিমরুলী’র ভাসমান পেয়ারার হাট সরেজমিনে দেখে যথেষ্ঠ উচ্ছাসিত হয়েছিলেন। আটঘরÑকুড়িআনা এলাকার ‘মুকুন্দপুরী’, ‘লতা’ ও ‘পুর্নম-ল’ জাতের পেয়ারা মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। শ্রাবণÑভাদ্র থেকে আশি^নের মধ্যভাগ ঝালকাঠির ব্রান্ডিং পণ্য পেয়ারার ভরা মৌসুম। ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের আটঘর, শতদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি ও কাঁচাবালিয়া গ্রামে প্রতিবছরই প্রায় ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে।
প্রতি বছরই বর্ষা মওসুমে ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িআনা এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টরের বিশাল বাগান থেকে ভিমরুলীর ভাসমান হাটে পেয়ারা’র বিপনন ইতোমধ্যে একটি ভাল বাজার তৈরী করেছে। পুরো মৌশুম যুড়ে নিজস্ব বাজার ব্যাবস্থাপনায় ভিমরুলির ভাসমান হাট থাকে মুখরিত। মৌসুম যুড়ে বিভিন্ন ধরনে দেশী নৌকায় চাষিরা এ ভাসমান হাটে পেয়ারা নিয়ে এসে তা বিক্রী করছেন। গত বছর করোনা মহামারী সংকটে ভিমরুলীর হাটে যেখানে চাষীরা ১৫ টাকায়ও এক কেজি পেয়ারা বিক্রী করতে পারেন নি, এবার সেখানে মূল মৌসুমে ৩০ টাকা এবং মৌসুমের শেষ প্রান্তে এখন ৪০ টাকায়ও বিক্রী করতে পারছেন। তবে প্রকৃত উৎপাদকগন পাচ্ছেন প্রতি কেজিতে ৫Ñ১০ টাকা কম।
করোনা মহামারীর কারণে গত বছর বাইরের পাইকাররা পেয়ারার বাগান কেনার ঝুকি নেননি। ক্রেতা বিক্রেতা সবার মধ্যেই এক ধরনের আতংক কাজ করলেও এবার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। সারা দেশ থেকেই পাইকাররা ছুটে এসেছেন ভিমরুলির ভাসমান বাজারে। তাই উৎপাদকরাও গত বছরের চেয়ে অনেকটাই ভাল দাম পেয়েছেন।
সারা দেশের পাইকাররা ভিমরুলি’র ভাসমান হাট থেকে পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে নিজ নিজ মোকামে নিয়ে বিক্রী করছেন। গত প্রায় তিনমাস ধরে ভীমরুলী ও আটঘরÑকুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে পেয়ারা চাষি ও পাইকারদের ভিড় লেগে আছে। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী ও ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বেপারীরা নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রী করছেন। প্রতিদিন সকালে ভরপুর এ বাজারে পেয়ারার বেচাকেনা শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যেই শুনশান হয়ে যাচ্ছে। ঝালকাঠির ১২টি গ্রামের প্রায় এক হাজার হেক্টর এলাকায় এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে শতবর্ষ জুড়ে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন পেয়ারা চাষিরা খুব ভোরে বাগান থেকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে ৩-১০ মন করে পেয়ারা ভিমরুলির হাটে নৌকায় বসেই বিক্রি করছেন।
বাজারে দেশী-বিদেশী অনেক উচ্চ ফলনশীল পেয়ারার মধ্যেও স্বাদ ও গন্ধের কারণে সারা দেশেই আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারার বিশেষ কদর রয়েছে দীর্র্ঘদিন ধরে। আর এখানের পেয়ারা ইতোমধ্যে ভারতের কোলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তি বিভিন্ন বাজার ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতলাতেও অবস্থান করে নিয়েছে।
পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর বিভিন্ন এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাটি কেটে লম্বা ঢিবি তৈরী করে ‘সার্জন’ পদ্ধতিতে পেয়ারার চাষ হয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ‘অ্যানথ্রাকনোজ’ নামে এক ধরনের সংক্রমক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পেয়ারা বাগান। এতে গাছের পাতা ও ফলে দাগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ রোগ দমনে প্রতি সপ্তাহ ‘কম্পেনিয়ন’ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবীদগন।
তবে দক্ষিণাঞ্চলের এ কৃষপণ্যের সঠিক বাজার সহ উৎপাদকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করনে সরকারী পর্যয়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন কৃষিবীদগন। দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ, পেয়ারা, আমড়া সহ আরো কয়েকটি কৃষিপণ্য প্রক্রীয়াজাত করে রপ্তানীর লক্ষ্যে এ অঞ্চলে একটি রপ্তানী প্রক্রিয়াকরন অঞ্চল গড়ে তোলার দাবী দীর্ঘদিনের। দেশে আহরিত ৫.৬০ লাখ টন ইলিশের ৬৬%-ই পাওয়া যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী সহ উপক’ললীয় এলাকায়। এক সময়ে ইপিজেড-এর চেয়ারম্যান সহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগন দক্ষিনাঞ্চল ঘুরে ইতিবাচক মাতামত দিলেও পরবর্তিতে সব স্তিমিত হয়ে গেছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে দুটি ‘একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত এখনো কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ