পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গার্মেন্টসকর্মীকে গলা কেটে হত্যার আসামি ছিলেন কুলসুমি। তার পরিবর্তে কারাভোগ করেন নিরীহ মিনুআরা মিনু। কারাগারের পুরাতন নথিপত্র ঘাটতে গিয়ে উদ্ঘাটিত হয় এ ঘটনা। চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকার এ ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের বেশ আলোচিত। উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে নিরীহ মিনু আরার শেষ অবধি মুক্তি ঘটে চলতিবছর ১৬ জন। কিন্তু ১২ দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন থেকেই মুক্তি নেন মিনু। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে এখন আরেকটি মামলা হাইকোর্টে চলমান।
সোনালি ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত আবু সালেকের পরিবর্তে তিন বছর কারাভোগ করেন পাটকলের নিরীহ শ্রমিক জাহালম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তে ফেঁসে যান জাহালম। উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে মুক্তি লাভ করেন তিনি।
শুধুমাত্র নামের সাদৃশ্য থাকায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি লিটনের পরিবর্তে জেল খাটেন ভোলার নিরীহ বাসিন্দা মো. লিটন। প্রকৃত আসামি মো: লিটন (৪১) এবং নিরপরাধ লিটনের বাবার নাম নূর ইসলাম। দু’জনেরই বাড়িই ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চতলা গ্রামে। পার্থক্য শুধু বয়সের। নিরপরাধ লিটনের বয়স ৩০ বছর। আর এ কারণেই অন্তত ৮ মাস কারাভোগ করতে হয় নিরপরাধ লিটনকে। ২০০৯ সালের ২৮ জুন পল্টন থানার আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি আমদানি নিষিদ্ধ চেতনানাশক ট্যাবলেটসহ আরও দু’জনের সঙ্গে গ্রেফতার হয় লিটন। তিন মাসের মাথায় তিনি জামিন নিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরে পলাতক লিটনের পরিবর্তে পুলিশ নিরপরাধ লিটনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল—২ আসামিদের দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে কারামুক্ত হন নিরপরাধ লিটন।
বিনা অপরাধে ৫ বছর কারাভোগ করেন ঢাকার মিরপুরের বেনারসি কারিগর আরমান বিহারী। মাদক মামলায় দণ্ডিত আরমানের সঙ্গে তার মিল বলতে রয়েছে শুধু পিতার নামে। আর তাতেই ‘অপরাধী আরমান’ হিসেবে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্লবী থানা পুলিশ নিরপরাধ আরমানকে ধরে নিয়ে যায়। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গতবছর ৩১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে কারামুক্ত হন নিরপরাধ আরমান বিহারী। উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে ‘ভুল আসামি’ কারামুক্ত হয়েছেন ভুরি ভুরি। প্রতিবারই কারাভোগকারী নিরপরাধ মানুষের সুরক্ষায় এগিয়ে আসছেন উচ্চ আদালত। সংবাদপত্রের পাতা ওল্টালে প্রায়ই চোখে পড়ছে এক জনের পরিবর্তে অন্যজনের কারাভোগের খবর। বিশ্লেষকদের মতে, কারারক্ষীদের মান্ধাতা আমলের রেজিস্ট্রার বহি, পুলিশের গ্রেফতার প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা, কারা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, এক শ্রেণির আইনজীবী, কারা ও আদালত সহায়ক কর্মচারী এবং ধূর্ত অপরাধীচক্রের সমন্বিত অপচেষ্টায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে নিরীহ মানুষের কারাভোগের ঘটনা। এসব ঘটনা রোধে কারা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার এক যুগান্তকারী রায় দিলেন আদালত। প্রকৃত আসামি শনাক্তকরণে দেশের কারাগারগুলোতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কারাকতৃর্পক্ষকে এ নির্দেশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভাচুর্য়াল ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে নাশকতার মামলায় ভুল আসামি জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদেশের বিষয়ে অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণসহ রুল চূড়ান্ত ঘোষণা করেছেন। আবেদনকারী জহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা অবৈধ এবং আইন বহিভূর্ত ঘোষণা করেছেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনটি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছেÑ (১) বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন। (২) গ্রেফতারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ এবং (৩) দেশের সব কারাগারে আঙুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণি সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করা।
এর আগে গত সপ্তাহে নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর বসুরহাটের মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নয়—মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
গত বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এক আদেশে ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। একইসঙ্গে নোয়াখালীর জহির উদ্দিন ওই মামলার প্রকৃত আসামি কি না, তা তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলমের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর—১২(৪)১৩) গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য—প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
শিশির মনির আরও জানান, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রির দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর—১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর মোদাচ্ছের তার নাম—ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন। এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিন পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।
এদিকে, পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল চার্জশিট দেয়। পরে ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ অবস্থায় জহির উদ্দিন তার বিরুদ্ধ জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শহিদুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, হাইকোর্টের এ রায় যুগান্তকারী। এটি অপরাধ না করেও কারাগারে যাওয়ার ঘটনা রোধ করবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রয়োগে প্রকৃত আসামি শনাক্ত হবে। প্রযুক্তির সহায়তায় প্রিজনারদের সেন্ট্রাল ডাটাবেজ প্রণয়ন করা গেলে কারা ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন হবে। নিরপরাধ মানুষের ভোগান্তি হ্রাস পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।