Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কারাগারে এইচআইভি চিকিৎসা

মিলবে ৮ ধরণের সেবা কয়েদীরা চিকিৎসা বঞ্চিত, কর্মসূচিতেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব : ডা. শামিউল ইসলাম

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

কারাগারগুলোয় সাধারণ কয়েদীদের মধ্যে সেবা বঞ্চিত এইচআইভি রোগী রয়েছে। আর তাই দেশের ২৫টি কারাগারে এইচআইভি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ইতোমধ্যে অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম অনুমোদনের জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর সাপেক্ষে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি রয়েছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ ইতোমধ্যে দ্য গ্লোবাল ফান্ড ও বিসিসিএম থেকে অনুমোদিত হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের কারাগারগুলোর মধ্যে ২৫টি কারাগারে এইচআইভি কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে দুটি কৌশল অনুসরণ করা হবে। যেমন- ৮টি কারাগারের (কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুর-২টি, নারায়নগঞ্জ, রাজশাহী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট) স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ২ জন করে স্টাফ পদায়ন ও বিদ্যমান স্টাফদের দক্ষতা বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া আরও ১৭টি কারাগারে শুধু স্যাটেলাইট এইচআইভি পরীক্ষা সেবা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট সেবা সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সদর হাসপাতালের এমটি (মেডিকেল টেকনোলজিস্ট) ল্যাব ও কাউন্সেলর পরিচালনা করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, কয়েদীদের মধ্যে যেসব রোগীর এইচআইভি রয়েছে তারা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এই রোগ ছড়ানো নিয়ন্ত্রণে কারাগারে কয়েদীদের মধ্যে এইডস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। গতকালই (মঙ্গলবার) চট্রগ্রামে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা কয়েদীদের এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, দেশের এইচআইভি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সহযোগীতা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া কারাগারগুলোর সাধারণ কয়েদীদের মধ্যেও এইচআইভি ও যক্ষা রোগী রয়েছে। কিন্তু তারা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। তাদের মধ্যেমে কারাগারে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই বিয়ষটি বিবেচনায় নিয়ে এই কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১ জুন রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমি, কারা কর্তৃপক্ষ অংশ নেয়। ওই কর্মশালায় এই প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, বড় ৮টি কারাগারে কয়েদীদের ৮ ধরণের সেবা দেয়া হবে। ১. কয়েদীদের জন্য এইচআইভি পরীক্ষার সুবিধা। ২. পরীক্ষার পর শনাক্ত রোগীদের এআরভি (এন্টি রেক্টোভাইরাল ড্রাগ) চিকিৎসা দেয়া, যারা আগেই এআরভি সেবা নিয়েছে তাদের চিকিৎসা অব্যহত রাখা। ৩. যারা শিরায় মাদকগ্রহণকারী কয়েদী আগে মেথাডন চিকিৎসা নিত তাদের ওএসটি (ওরাল সাবস্টিটিউশন থেরাপি) সেবা অব্যহত রাখা, প্রাথমিকভাবে এ সেবা কেরানীগঞ্জ ও নারায়নগঞ্জে বাস্তবায়ন করা হবে। ৪. কয়েদীদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি, যৌণরোগ শনাক্ত করা ও তাদের চিকিৎসা দেয়া, প্রাথমিকভাবে যক্ষা শনাক্তকরা এবং রেফার করা। ৫. কয়েদীদের মধ্য থেকে পিয়ার এডুকেটর নিবাচিত করে তার মাধ্যমে কয়েদীদের জন্য যৌণ রোগ, এইচআইভি, হেপাটাইটিস, যক্ষা বিষয়ক সচেতনতামূলক সেশন পরিচালনা করা। ৬. কয়েদীদের মধ্যে দূর্বল ব্যক্তিদের মনো-সামাজিক কাউন্সেলিং করা। ৭. এইডস দিবস, মাদক নিমূল দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপণ করা। বিসিসি সেশনগুলো পরিচালনার সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি ও বিতরণ করা। এছাড়া বাকী ১৭টি কারাগারে মাসে ২ বার স্যাটেলাইট এইচআইভি পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে।

কারাগারের পাশপাশি পুলিশের সঙ্গেও এ সংক্রান্ত ৫ ধরনের সেবা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১. পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রশিক্ষণ কারিকুলামে এইচআইভি/এইডস বিষয়টি সম্পৃক্তকরণ ও এ বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া। ২. এইচআইভির জন্য ২৩টি অগ্রাধিকার জেলার পুলিশ সদস্যদের ২ দিনব্যাপি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। ৩. পুলিশ পরিচালিত মাদক নিরাময় ও পূর্ণবাসন হাসপাতালে কেয়ার বাংলাদেশসহ এনজিও থেকে রেফারকৃত শিরায় মাদকগ্রহণকারীদের চিকিৎসা দেয়া। ৪. পুলিশ পরিচালিত হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে এসব হাসপাতালে পরীক্ষার কিট সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩ হাজার ৪১০ টাকা সম্ভাব্য বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দ্যা গ্লোবাল ফান্ড ও বিসিসিএম থেকে অণুমোদন হয়েছে। এই বরাদ্দের মধ্যে সেভ দ্য চিলড্রেনের আংশিক অনুদান রয়েছে। এই বরাদ্দের মধ্যে ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯৫ টাকা এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম ব্যয় করবে ঔষধ, পরীক্ষা, কিট ও অন্যান্য ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি জন্য। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের সাথে যৌথ উদ্যোগে এইচআইভি কর্মসূচি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০২ টাকা দ্যা গ্লোবাল ফান্ড ও বিসিসিএম হতে অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ মডিউল, কর্মশালা আইএনওডিসি (জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা) সরাসরি আয়োজন ও বাস্তবায়ন করবে।

প্রসঙ্গত, দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি’র সংক্রমণ প্রায় শুণ্য দশমিক শুণ্য ১ শতাংশ। দেশের এইচআইভির জন্য ঝুঁকিপূর্ন জনগোষ্ঠী যেমন- শিরায় মাদকগ্রহণকারী, নারী/পুরুষ যৌনকর্মী ও হিজড়া। এই জনগোষ্ঠী ছাড়াও কারাগারগুলোয় সাধারণ কয়েদীদের মধ্যে সেবা বঞ্চিত এইচআইভি ও যক্ষা রোগী রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এদের মাধ্যমে কারাগারের অন্যান্য কয়েদীদের মধ্যে রোগী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এইচআইভি

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ