Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপেক্ষায় দুই কোটি মানুষ

গণটিকা কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ শুরু কাল গর্ভবতী-দুগ্ধদানকারী মায়েদের এসএমএস লাগবে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার গণটিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে আগামী কাল মঙ্গলবার থেকে। সারাদেশে এই টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এর আগে ৭ আগষ্ট প্রথম গণটিকা কার্যক্রম শুরু হলেও সংকটের কারণে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে টিকা গ্রহণের জন্য দুই কোটির বেশি মানুষ লোক মুখিয়ে রয়েছেন। তারা অপেক্ষা করছেন টিকা নেয়ার। গতকাল কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অংশ নিয়ে ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, গত ৭ থেকে ১২ আগস্ট গণটিকার যে ক্যাম্পেইন হয়েছিল, সেই ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কর্মসূচি আগামী ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। একইভাবে, একই কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হবে। যারা ক্যাম্পেইনের সময় যে কেন্দ্র থেকে টিকা নিয়েছেন, সেই কেন্দ্রে এসে দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করবেন।

এদিকে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগের দেয়া তথ্যে জানা যায় এখন পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪ কোটির (৩ কোটি ৮৯ লাখ) কিছু কম। তাঁদের মধ্যে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন এক কোটি ৮৮ লাখ। এতে দেখা যাচ্ছে নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ টিকা পাননি ২ কোটি ১ লাখ মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে দেখা যায় দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ৪ কোটি ৩ লাখ ৬০০ ডোজ। এগুলোর মধ্যে আছে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় মিলে মোট ২ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৩১৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকারের হাতে মজুত রয়েছে এক কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৪ ডোজ টিকা। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকারের হাতে রয়েছে মূলত সিনোফার্মের টিকা। সেই টিকার মধ্যে ৫০ লাখ দেওয়া হবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ৬ দিনে। তারপর হাতে টিকা থাকবে ৬৬ লাখ ডোজ। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারদেশের সব টিকাদান কেন্দ্রে টিকা পাঠানো হয়েছে। আগের মতোই অল্প সময়ে অনেক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। তখন ৬ দিনে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছিল।

গতকাল ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রথম দুই ঘণ্টা সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের টিকা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আগেরবার আনা টিকা কার্ড এবারও সাথে আনতে হবে। ক্যাম্পেইনের জন্য যে পরিমাণ টিকা আমাদের প্রয়োজন সেটা আমরা জেলা-উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছি। দ্বিতীয় ডোজের ক্যাম্পেইন চলাকালে কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের নিয়মিত টিকাদান চলবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য আমরা একটি ব্যবস্থা করতে পেরেছি, এসএমএস না পেলেও তারা নিবন্ধিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। তবে এএনসি কার্ড বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শপত্র, যাতে উল্লেখ থাকবে তিনি অন্তঃসত্ত্বা‑ সেটি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। স্তন্যদানকারী নারীরাও এসএমএস ছাড়াই টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজকল্যাণ অধিদফতর থেকে দেওয়া সুবর্ণ কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। নতুন একটি উইন্ডো হবে যেখান থেকে প্রতিবন্ধীরা টিকা নিতে পারবেন। তবে সব ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত বয়সসীমা ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে এবং জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউজিসির মাধ্যমে তালিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। তারা অনেকেই টিকা নিয়েছেন। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা যেন জন্ম সনদ ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারেন, আমরা সেই চেষ্টা করছি। তবে সেই তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসতে হবে।
বুলেটিনে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অনেকখানি কমেছে। ইতোমধ্যেই সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। যেভাবে সংক্রমণের রাশ টেনে ধরা হয়েছে, সেটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আশা করতে পারি সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে। যদিও সংক্রমণের হার কমে এসেছে তবে এখানে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনও অবকাশ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, জাতীয় করোনার টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার জনসংখ্যার দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৩ কোটি ৫১ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দিতে চায়।

জানতে চাইলে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকেই টিকার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু নিবন্ধন করে দীর্ঘদিনেও টিকা না পাওয়ায় টিকার প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছেন। মানুষ যে নিবন্ধন করেও টিকার জন্য অপেক্ষায় থাকছেন, তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। করোনা নির্মূলে টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ ধরে রাখতে দ্রুতই বিভিন্ন উৎস থেকে আরও টিকার সংস্থান ও নিবন্ধনকৃতদের দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রতিদিনই বাড়ছে। সবাই টিকা নিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। মানুষের এই আগ্রহ ধরে রাখতে দ্রুতই বিভিন্ন উৎস থেকে আরও টিকার সংস্থান ও নিবন্ধনকৃতদের দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে করোনাযুদ্ধে আমরা আরো পিছিয়ে পড়বো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ