Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৪টি ফেরির নেই ফিটনেস সনদ

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ রুটে ১৭টি ফেরি

মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে গত ২৪ দিনে চার বার পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে যেন কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে বহরে ১৭টি ফেরির ১৪টি ফেরিই আনফিট। এসব ফেরির নেই ফিটনেস সনদ, নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। এ ছাড়া অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী, ৪০ বছরের বেশি বয়সি নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয়া হয়না। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরি শাহজালালের আঘাতের ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কমিটির প্রতিবেদনে ফেরির কারিগরি ত্রুটি ছাড়াও ব্যবস্থাপনায় চরম অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে। এ অবস্থায় পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা এড়াতে ঘাট স্থানান্তর করতে যাচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ঘাট স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে রো রো ফেরি না চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ফেরি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়নসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিসি দীর্ঘদিন ধরে অবেহেলিত ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি ফেরি এ বহরে যুক্ত করেছেন আরও ফেরি যুক্ত হচ্ছে আমরা পুরোনো ফেরিগুলো ক্রমান্বয়ে সরিয়ে দিচ্ছি। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর পিলারে চারটি ফেরি আঘাত করলেও বেশি আলোচনার জন্ম দেয় গত ২৩ জুলাই রো রো ফেরি শাহজালালের ঘটনা। ওই ঘটনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দেয়। এর পরও উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. রফিকুল ইসলাম খানকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীসহ আরও তিনজনকে কো-আপ্ট করে পরে সাত সদস্যের কমিটির এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
নৌমন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ওই দিনের ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ফেরি ডান দিকে নিতে মাস্টার নির্দেশনা ও সুকানীর তা প্রতিপালনের পার্থক্য, সুকানীর কানে কম শোনা, পানি ও বাতাসের বেগ বেশি থাকায় ফেরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে বলা হয়, নিরাপদ নাবিক সনদ অনুযায়ী ফেরিতে পর্যাপ্ত নাবিক ছিল তবে সুকানী কানে কম শোনেন। তদন্ত কমিটির সামনেও হিয়ারিং এইড পরে বক্তব্য দেন। নৌযানে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ হলেও দুর্ঘটনার সময় যাত্রী ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ১৭টি ফেরির ১৪টিই ফিটনেসবিহী। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির বহরে থাকা ৫৩টি ফেরির অনেকগুলোই ৪০ বছরের বেশি পুরাতন। যদিও তদন্ত কমিটির কাছে বিআইডব্লিউটিসি দাবি করেছে, তাদের ফেরিগুলো আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় বিধায় অনেক মজবুত এবং ৪০ বছর পরও ফেরি পরিচালনা করা আর্থিকভাবে লাভজনক। ফিটনেসবিহীন ফেরির ফিটনেস সনদ না দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করতে বলা হয়। দুই সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তরকে ফেরি পরিচালনায় নানা অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেরির মাস্টার নিয়োগে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিধান থাকলেও চক্ষু, শ্রবণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধান নেই এজন্য নিয়োগ যোগ্যতা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিমুলিয়া-বাংলাবাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ