Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্ষা বিদায়ের আগেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতে ঘাটতি

ভাদ্রের আসন্ন অমাবস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:০৫ পিএম

আবহাওয়ার নানামুখী বিরূপ আচরণে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ সহ কৃষি ব্যবস্থায় নানামুখী প্রভাব পড়ছে। বর্ষা বিদায়ের আগেই বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় উঠতি আউশ সহ আমনের উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের মাঝে নানামুখি দুঃশ্চিন্তা কাজ করছে। তবে ভাদ্রের আসন্ন অমাবশ্যা নিয়েও বড় ধরনের দুঃশ্চিন্তা কাজ করছে কৃষকদের মাঝে। দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলায় এবার ৭ লাখ ২৮ হাজার হেক্টরে আমন অবাদের লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে । ইতোমধ্যে বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫টি জেলায় শতভাগ এবং বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় প্রায় ৮০% জমিতে রোপা আমনের আবাদ সম্পন্ন হলেও অনেক এলাকায় বৃষ্টির অভাবে রোপন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় আমন থেকে এবার প্রায় ১৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রনলয়ের।
কিন্তু গত জানুয়ারী থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের যথেষ্ঠ কম। জুন ও জুলাই মাসে তা স্বাভাবিকের কিছুটা বেশী হলেও সদ্য সমাপ্ত আগষ্টে সারা দেশের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ১৯.৭০% কম। অথচ ১৩ আগষ্ট পর্যন্ত ছিল ভরা বর্ষাকাল। ভাদ্রের শরতেও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কথা থাকলেও কাঠ ফাঁটা রোদে পরিবেশ অনেকটা বিপন্ন। আবহাওয়া বিভাগের মতে, আগষ্ট মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারে স্থলে ৩৪৭.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ এ সময়ে দেশের সর্বত্রই বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী। এমনকি উত্তরবঙ্গের কেন কোন এলাকায় স্বাভাবিকের ৫০% বেশী পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীগুলোতে ভাটিমুখি প্রবাহ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে প্লাবন প্রবনতা বাড়ছে।
সাথে ভাদ্রের আসন্ন অমাবশ্যায় গত বছরের মত সাগর ফুসে উঠলে দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকা সহ ফসলী জমি প্লবিত হবার আশংকার কথাও জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। গত বছর ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় ৩দিনে সাড়ে ৩শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলে দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে উঠতি আউশ সহ সদ্য রোপা আমনের যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়। ফলে গতবছর দক্ষিণাঞ্চলে আমনের উৎপাদন ছিল লক্ষ্যমাত্রার দেড় লাখ টন।
এমনকি গতবছর দক্ষিনাঞ্চলে উঠতি অউশের বিপুল জমি প্লবিত হওয়ায় অনেক এলাকার ফসলই কৃষকরা ঘরে তুলতে পরেনি। এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় সারা দেশের প্রায় ২৩% আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতেই প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলাতেও প্রায় ২৮ হাজার হেক্টরে আউশ আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫% জমির আউশ ধান কর্তন সম্পন্ন হলেও আরো বিপুল ধান এখনো মাঠে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে আকষ্মিকভাবেই বরিশালে ব্যাপক বৃষ্টিপাত কৃষকদের ভাদ্রের অমাবশ্যার কথা স্মরন করিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মাত্র দেড় ঘন্টায় বরিশালে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবারও বরিশালের বিভিন্ন এলাকা সহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায়ই মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমী বায়ু দক্ষিনাঞ্চল সহ সারা দেশে মোটামুটি সক্রিয় থাকার কথা জানিয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারী অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া সহ মাঝারী ধরনের বজ্র বৃষ্টির কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। সে সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারী ধরনের ভরী থেকে ভারী বর্ষনের কথাও বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার এসব পূর্বাভাস ভাদ্রের আসন্ন বড় অমাবশ্যার শংকার কথাই স্মরন করিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের। তবে আশার কথা উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু এখনো দূর্বল থেকে মাঝারী অবস্থায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ