Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭০ শতাংশ শ্রমিক কাজ পাননি

‘করোনায় ছাঁটাই’ নিয়ে সিপিডির জরিপের ফলাফল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

মোটা অংকের সরকারি প্রণোদনা পেলেও বিপুল সংখ্যক গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। ফাইল ছবি করোনা মহামারি কালে চাকরি হারানো পোশাক শ্রমিকদের ৭০ ভাগ এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। তাঁদের বেশির ভাগ হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছেন। আর যাদের চাকরি বহাল আছে, তাঁদের মধ্যে ৪০ ভাগেরই অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের (ওভারটাইম) পরিমাণ কমেছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের ৫০০ পোশাক শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল মঙ্গলবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক: ভবিষ্যৎ চিন্তা’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। এ সময় জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে ১ হাজার ৩৭৯টি পরিবারে এ জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, পোশাক শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশ করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় মজুরি পাননি। দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন প্রায় ৯৮ শতাংশ শ্রমিকই মজুরি পেয়েছেন। যদিও ফেব্রæয়ারি ২০২০-এর তুলনায় মার্চ ২০২১-এ খানার (পরিবার) আয়ের পরিমাণ প্রায় ১১ শতাংশ কমে গেছে। তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর প্রায় ৬৭ শতাংশকে দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন বিকল্প উপায় হিসেবে ঋণ নিতে হয়েছিল। আর প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় এই সংখ্যাটি অনেক বেশি। এই ঋণ পরিশোধ করতে গড়ে প্রায় দুই বছর লেগে যেতে পারে বলেও জানিয়েছে পরিবারগুলো। এদিকে কাজ হারানো শ্রমিকদের মাত্র ২৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা শ্রমিক ইউনিয়নের ভ‚মিকায় খুশি আছেন।

এদিকে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি রুবানা হক সিপিডির গবেষণার ফলাফল গ্রহণ করতে অসম্মতির কথা জানান। ছোট পরিসরে জরিপ চালিয়ে ঢালাওভাবে তা প্রচার না করে, সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানে সিপিডিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। ওভারটাইমের পারিশ্রমিক কম দেওয়ার তথ্যটিও সত্য নয় বলে দাবি করেন রুবানা হক। তিনি বলেন, ওভারটাইমের কর্মঘণ্টা কমলে, পারিশ্রমিক কমতে পারে। কিন্তু কাজ করিয়ে বেতনের নির্দিষ্ট কাঠামোর বাইরে, পোশাক কারখানার উদ্যোক্তাদের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন এ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী জানান, নানা সংকট থাকলেও আগামী কয়েক বছরে পোশাক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ হলে উৎপাদনশীল খাতের শ্রমিকদের চেয়ে অনুৎপাদনশীল খাতে কাজ করা শ্রমিকদের কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য কারখানা মালিক ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি জরুরি তহবিল গঠন করার বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, আগামী কয়েক বছরে পোশাক শিল্পে স্বয়ংক্রিয়তা যদি বেড়ে যায়, তাহলে পণ্য উৎপাদন বাড়বে, কিন্তু শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক: ভবিষ্যৎ চিন্তা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সিপিডি। ছবি: আজকের পত্রিকা সিপিডির সম্মানীয় গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পোশাক খাতে আগামী সাত থেকে আট বছরে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুরক্ষিত রেখে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি নিশ্চিত করতে হবে।’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান কেবল সমস্যা চিহ্নিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, সমাধানের ওপর জোর দিতে পরামর্শ দেন। করোনার কারণে নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য পড়া শ্রমিকদের সুরক্ষায় রাষ্ট্র, পোশাকশ্রমিক নেতা, উদ্যোক্তা, গবেষক এবং নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শ্রমিকদের সামাজিক অধিকার, ভবিষ্যৎ সুরক্ষার নিশ্চয়তা, আয়-বহির্ভ‚ত সুবিধা এবং বিশেষ করে নারীদের শ্রমশক্তিকে আরও কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য একটি আপৎকালীন এবং আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ তহবিল গঠন করার কথাও বলেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ