Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলারডুবি মামলার পর গ্রেফতার ৫

উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত মৃত বেড়ে ২২

খ.আ.ম. রশিদুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে যাত্রীবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে পানিতে ভেসে উঠে তিন বছরের নাশরা মুনীর লাশ। গত শুক্রবার সে নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে চাচীর সাথে নিখোঁজ হয়। চাচীর লাশ উদ্ধার হলেও তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে তার লাশ ভেসে উঠে। এ নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২২-এ।

দিনভর খোঁজাখুঁজির পর বিকেলে জেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। উদ্ধারকারী সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয় কারো স্বজন নিখোঁজ থাকলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু বারবার এ আবেদনে কোন সাড়া দেয়নি কেউ। পরে সংশ্লিষ্টরা ধরে নেয় আর কোন ব্যক্তি নিখোঁজ তালিকায় নেই। এরপরই উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখা হয়।

নিহতরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকূট গ্রামের আব্দুল্লাহ মেয়ে তাকওয়া (৮), চম্পকনগর গ্রামের জহিরুল হক ভূইয়ার ছেলে মামুন ভূইয়া (২০), গেরারগাঁও গ্রামের মৃত কালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই গ্রামের জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের জজ মিয়ার মেয়ে মুন্নি (৬), গেরারাগাঁর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসেমের স্ত্রী কমলা বেগম, নুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী মিনারা বেগম, আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জলী বিশ্বাস (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পৈরতলা গ্রামের আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), একই উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের ফুয়াদ হোসেরন ছেলে তানভীর (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের জারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), উত্তর পৈরতলা গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলী বেগম, পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মীম (১২), ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝরনা বেগম (৫৫), আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২), মনিপুর গ্রামের হাজী আব্দুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮), বাদেহারিয়া গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে মাইদা আক্তার (৬), ময়মনসিংহ জেলার গোপালপুর গ্রামের শাওনের মেয়ে সাজিদ (৩), বড় পুকুরপাড়ের মো. সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার, সোনাবর্ষিপাড়ার আব্দুল বারী ভূইয়া স্ত্রী মোসা. নুসরাত জাহান, উত্তর পৈরতলা গ্রামের হারিজ মিয়ার মেয়ে নাফসা আক্তার (৩)।

জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ডুবে যাওয়া স্থান ও ট্রলার যেখান থেকে যাত্রা শুরু করে সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন জানান, অন্তত ২০/২২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আমরা কথা বলেছি ঘাট শ্রমিক, মালিক, যাত্রী, ট্রলার চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে। প্রাথমিকভাবে তিনি ধারণা দেন অতিরিক্ত লোকবহন করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আগামী দশ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ডুবুরী দল আনতে ব্যর্থ হয় উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয়রাই ১৭/১৮ জনের লাশ উদ্ধার করে। গতকাল শনিবার প্রশাসন ঘোষণা দেয় সকল নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দিনভর দাবড়িয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের নৌযান।

পুলিশের একটি সুত্র জানায়, প্রতিটি লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া সিআইডির ক্রাইম সিন এর একটি গ্রুপ গত শুক্রবার রাত থেকেই কাজ করে। তারা ফিঙ্গার প্রিন্টের ডিভাইস নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন।

এদিকে, বিজয়নগরে লইসকা বিলে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে সেলিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৭ আসামি করে বিজয়নগর থানায় মামলাটি করেন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হলো বালুবাহী ট্রলারের মাঝি জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ির জমির মিয়া, মো. রাসেল, খোকন মিয়া, মো. সোলায়মান ও বিজয়নগর পত্তন ইউনিয়নের কালারটেক গ্রামের মিস্টু মিয়া। দুইজনের নাম জানা যায় নি।

মামলার বাদী সেলিম মিয়া বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরারাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় তার ৪ স্বজন মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য ২ জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
তিনি জানান, অজ্ঞাত আরো আসামি রয়েছে। ২টি বাল্কহেড (ইঞ্জিনচালিত বালুর নৌকা) আটক করার কথা জানান তিনি। সেলিম মিয়া বলেন, আমার পরিবারের ৪ জন লাশ হয়েছে। ঘাট শ্রমিক, চালক ও স্থানীয়রা এ জন্য দায়ী। তিনি, আর যেন কোন মায়ের বুক এ ভাবে খালি না হয় সে জন্য পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত

২৪ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ