পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দালালদের খপ্পরে পড়ে অবৈধরা বিপাকে : ৩১ ডিসেম্বর বৈধতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে
বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। ইমিগ্রেশন বিভাগের অভিযানে প্রতিনিয়তই অবৈধ বাংলাদেশিরা গ্রেফতার হচ্ছে। দেশটির কারাগারগুলোতে আটককৃত হাজার হাজার বাংলাদেশি অবৈধ কর্মী দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। দীর্ঘ দেড় বছরে করোনা মহামারির সময়ে বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করছে। দেশটির কারাগারগুলোতে গ্রেফতারকৃত অনেক বাংলাদেশি কর্মী হাইকমিশন থেকে যথাযথ আইনী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। গতকাল রাতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম সচিব জহিরুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা লাভের সুযোগ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আউটপাস নিয়ে দেশটির বিমান বন্দরে ৫শ’ রিংগিট জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরতে পাবে। চলমান লকডাউনের মাঝে প্রায় ৩ হাজার অবৈধ কর্মী দেশে ফিরেছে। এছাড়া নতুন পাসপোর্ট হাতে পেতে ৫/৬ মাস সময় লেগে যাওয়ায় অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও যথাসময়ে বৈধতা লাভের জন্য নিবন্ধন করতে পারছে না। দেশটির কোম্পানীর মাধ্যমে বৈধকরণের নিবন্ধনে অনেকেই সাড়া দিচ্ছে না। তারা দালালদের খপ্পরে বৈধকরণের নিবন্ধন না করেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
করোনা মহামারি সংক্রমণের দরুন কারাগারগুলোতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যেতে পারছে না। অনেকে সাজা ভোগের মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারছে না। নানা জটিলতার দরুণ দেশটি থেকে লক্ষাধিক আনডকুমেন্ট কর্মী দেশে ফিরতে পারছে না। কঠোর লকডাউনের মাঝে দেশটিতে ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুয়ালালামপুর থেকে রাতে একজন প্রবাসী সাংবাদিক জানান, দেশটি কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রায় ৮/১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আটকৃত বাংলাদেশিরা অনেকেই আইনী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার যুগ্ম আহবায়ক ওয়াহিদুর রহমান এ সংখ্যা দেড় হাজার হব্ েবলে জানিয়েছেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স। যা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ প্রবাসী নিরন্তর দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। এসব প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থানীয় সকল পর্যায়ে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা লাভের চলমান কর্মসূচি রিক্যালিব্রেশন আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও করোনা মহামারি সংক্রমণ রোধে দেশটিতে প্রতিনিয়ত চলছে গ্রেফতার অভিযান।
মালয়েশিয়া অভিবাসন বিভাগ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার নেগারি সেম্বিলিয়ান রাজ্যের নিলায় এলাকার একটি সিরামিক ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে ৪৮ বাংলাদেশিসহ ৫৫ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। নেগারি সেম্বিলিয়ান রাজ্যের অভিবাসন কর্মকর্তা কেনিথ তাই আই কিয়াং বলেন, কারখানায় কর্মরত ২৪১ বাংলাদেশি ও নেপালি শ্রমিকদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৫৫ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৪৮ বাংলাদেশি ও সাত জন নেপালি রয়েছে। তাদের বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসার কাগজপত্র নেই। আবার অনেকেই মেয়াদউত্তীর্ণ কাগজপত্র বহন করছেন। এমনকি তারা রিক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়ায় বৈধতার জন্য আবেদনও করেননি। এসব অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা। এসময় তিনি অবৈধদের বিষয়ে তথ্য দিতে স্থানীয়দের প্রতি আহŸান জানান।
এদিকে, দেশটিতে বসবাকারী বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গত ১১ মার্চ মালয়েশিয়ার তাৎকালিন মানব সম্পদ মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার। দেশটির সাবেক মানব সম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এর সাথে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মাদ গোলাম সারওয়ারের মাঝে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ কর্মীদের বৈধকরণে চলমান রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচি, বিদেশি কর্মীদের উন্নতমানের আবাসস্থল নিশ্চিত করাসহ কোভিড টিকা প্রদান এবং কোভিডের পূর্ববর্তী সময়ে ছুটিতে বাংলাদেশে গিয়ে ফিরে আসতে না পারা কর্মীদের ফেরত আনার প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া আলোচনায় মানব সম্পদ-মন্ত্রী বিদেশি কর্মীদের কল্যাণে মালয়েশিয়া সরকারের গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে আশ্বস্ত করেন। সভায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগে বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক সংশোধনীর চূড়ান্তকরণে মানব সম্পদ মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছিলেন বাংলাদেশি হাইকমিশনার।
ইতিপূর্বে সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৭২ হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী মালয়েশিয়া থেকে নিজ নিজ দেশে ফিরছেন। এমনটি জানিয়েছেন দেশটির তাৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদিন। সরকারের সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচিতে ১ লাখ ৪৫ হাজার এরও বেশি অনিবন্ধিত অভিবাসী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৭২ হাজার ৩২৪ জন তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ৭২ হাজার ৫০৬ জন বৈধ হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন বলে এক বিবৃতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ।
এ ছাড়া চলমান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে অনিবন্ধিত অভিবাসীসহ সকল বিদেশিদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তিনি । হামজাহ বলেন, মালয়েশিয়ার ৭০% এরও বেশি জনগোষ্ঠীর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে এমন বিদেশী যারা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য অভিবাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
রাতে কুয়ালালামপুর থেকে আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার যুগ্ম আহবায়ক ওহিদুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, মালয়েশিয়ায় লক্ষাধিক আনডকুমেন্ট বাংলাদেশি কর্মী অবস্থান করছে। নানা জটিলতার দরুণ এদের অনেকেই দেশে ফিরতে পারছে না। তিনি বলেন, ভ্রাতৃ-প্রতীম মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের অত্যান্ত চমৎকার সর্ম্পক রয়েছে। দেশটির সরকার আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছে। কিন্ত দালালদের খপ্পরে পরে অনেক অবৈধ কর্মী বৈধকরণের রেজিষ্ট্রেশন করছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কঠোর লকডাউন আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। লকডাউনে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা বন্ধি জীবন-যাপন করছে। হাই কমিশন থেকে নতুন পাসপোর্ট পেতে ৩/৪ মাস সময় লাগায় কর্মীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে। দেশটির শ্রমবাজার ধরে রাখার স্বার্থে তিনি অবৈধ কর্মীদের বৈধতা লাভের জন্য দ্রæত রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, যেসব প্রবাসী কর্মীর বয়স ৪৫ উত্তীর্ণ হয়েছে তারা বৈধকরণ কর্মসূচিতে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন না। তাদের ৫শ রিংগিট জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরতে হবে। এদিকে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কমিউনিটির নেতা রাশেদ বাদল জানিয়েছেন, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী বিমানের টিকিট ক্রয় করে যথাসময়ে দেশে ফিরতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া দু’টি করোনা ভ্যাক্সিন দিতে না পেরে অনেকেই দেশে ফিরতে পারছে না। তিনি এসব বিষয়য়ে হাইকমিশনের দ্রæত সহায়তা কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।