Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধীরে বাড়ছে পর্যটক

পাহাড় সমুদ্র আর লেকের অপরূপ সৌন্দর্যের রানী চট্টগ্রাম

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রামে সৈকত ঝরনা পার্কে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
করোনায় নিথর হয়ে পড়া চট্টগ্রামের পর্যটন খাত ফের সরব হয়ে উঠছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ধীরে ধীরে বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা। তবে উম্মুক্ত স্থানগুলোতে ভিড় বাড়লেও হোটেল, মোটেল, রেস্ট ও গেস্ট হাউসগুলোতে এখনও পর্যটকের উপস্থিতি কম। একই চিত্র তারকা হোটেল-মোটেলেও। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টিপাত, সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এখনও পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে না। দূরের পর্যটকরা আসছে না। তাছাড়া করোনা সংক্রমণের ভয়ও এখনো রয়ে গেছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার পর সাগর সৈকত, লেক, ঝরনা ও পার্কে পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। তবে পর্যটকদের বেশিরভাগই স্থানীয়।
এসব উম্মুক্ত স্থানগুলোতে ভিড়-জটলায় স্বাস্থ্যবিধিরও কোন বালাই নেই। তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। পাহাড়, নদী, সমুদ্র এবং উপত্যকায় ঘেরা প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামে রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট। আছে সাগর সৈকত, পাহাড়ী ঝরনা, লেক, ইকোপার্ক, সুউচ্চ পাহাড়, বন, পার্ক, মিউজিয়াম। এসব বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে আছে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। পর্যটন এলাকায় হোটেল, রেস্তোঁরার পাশাপাশি হরেক পণ্যের দোকানপাট রয়েছে। আছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট যানবাহন, নৌযান। এ খাতে হকার থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরাও জড়িত। করোনার কারণে টানা লকডাউনে বন্ধ ছিলো এসব বিনোদন কেন্দ্র। ধীরে হলেও পর্যটন খাতে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরছে।

চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিদিন পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে। নানা বয়সের মানুষ সেখানে ঘুরে বেড়াতে আসছেন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সেখানে মানুষের ঢল নামে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে ছুটে যান। সাগরে গোসল, ছোট স্পিডবোটে ঘুরে বেড়ানো, তীরে বসে উত্তাল ঢেউ এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখতে আসছেন অনেকে। পতেঙ্গা সৈকতের পাশাপাশি নেভাল বীচ, নগরীর খেজুরতলা, কাট্টলি, সীতাকুÐের বাঁশবাড়িয়া ও গুলিয়াখালী সৈকতের পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছেই। একই চিত্র আনোয়ার পারকি সৈকতেও। এসব সৈকতকে ঘিরে হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোও বেশ জমে উঠেছে।

পতেঙ্গা সৈকতের পাশ ঘেঁষে সিটি আউটার রিং রোডও এখন অন্যতম বিনোদন স্পট। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে দিনভর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনাগোনা। সড়ক থেকে দেখা যায় সাগরে বড় বড় জাহাজের সারি। সন্ধ্যার পর আলোর বন্যা দেশি-বিদেশি জাহাজে। অনেকে রাতে ওই সড়কে সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বন্দর থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোল রোডের পাশে সাগর তীরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। সেগুলোতেও পর্যটকের আগমন বাড়ছে।

সৈকতের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বিভিন্ন লেক, ঝরনা ও পার্কগুলো এখন সরগরম হয়ে উঠছে। সীতাকুন্ড ও মীরসরাই অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ঝরনা। বর্ষায় এসব পাহাড়ি ঝরনা এখন দারুণ চঞ্চল। দলবেঁধে লোকজন এসব ঝরনায় ভ্রমণ করছে। মীরসরাই মহামায়া লেক, খইয়াছড়া ঝরনায় গোসল করতে কিশোর-যুবকেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন। মাইক্রোবাস, মিনিবাসে করে পর্যটকরা আসছেন এসব এলাকায়।

মহানগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাম্বুরি পার্ক, সিআরবি, বাটালি হিল, জিলাপি পাহাড়, ফিরিঙ্গিবাজার নেভাল-২, কর্ণফুলী সেতু, নবনির্মিত বায়েজিদ-ফৌজদারহাট এক্সেস রোড, অনন্যা আবাসিক এলাকায় উম্মুক্ত স্থানে প্রতিদিন বিকেলে ভিড় জমছে। নানা বয়সের মানুষ এসব এলাকায় ঘুরে বেড়াতে আসেন। নগরীর ফয়’স লেকে একমাত্র চিড়িয়াখানা এবং শিশু পার্কগুলোও জমে উঠেছে। শিশুদের পাশাপাশি নানা বয়সের মানুষ পার্কে আসছেন। তবে এসব বিনোদন স্পটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। নগরীতে রয়েছে নেভাল মিউজিয়াম, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, ওয়ার সিমেট্রি, কালুরঘাটে মিনি বাংলাদেশ। এসব পার্ক ও মিউজিয়ামে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়িসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পর্যটন বিনোদন স্পটগুলোতে স্থানীয়দের উপস্থিতি বেশি। দূরের পর্যটকরা না আসায় হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে পর্যটকের উপস্থিতি কম। এর কারণ হিসাবে অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনা ভীতি অন্যতম বলে মনে করেন তারা। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে বের হচ্ছেন না। তাছাড়া লকডাউন শেষে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ফের সচল হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তারাও ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে পর্যটকের আগমন বাড়বে বলেও আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
অভিজাত পর্যটন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যটকরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। পতেঙ্গা সৈকতের অদূরে রয়েছে অভিজাত বোট ক্লাব। সেখানে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কর্ণফুলীতে ছুটে চলা দেশি-বিদেশে জাহাজ দেখার সুযোগ। বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে হরেক রাইডে চড়ার পাশাপাশি পাশের শাহ আমানত বিমান বন্দরে বিমান উঠা-নামা দেখার সুযোগও আছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেকেও পর্যটকের আগমন বাড়ছে। সেখানকার একজন কর্মকর্তা জানান, অন্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের উপস্থিতি এখনো কম। তবে পর্যটক আগমন বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নগরীর উম্মুক্ত স্থানগুলো বিশেষ করে সৈকত ও পার্কে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এসব এলাকায় পর্যটকরা মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। একই চিত্র এসব এলাকার হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতেও। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রশাসনের কোন অভিযান কিংবা নজরদারি নেই। এর ফলে সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিনোদন স্পটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যতদূর পারা যায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এর ব্যতয় ঘটলে সংক্রমণ বাড়বে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার সময় সংক্রমণ এড়াতে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তাও তদারক করা হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ