বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শুক্রবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকী সারা দেশের সাথে দক্ষিনাঞ্চলেও অনাড়ম্বরভাবে পালনের প্রস্তুতি থাকলেও নজরুলের স্মৃতি বিজরিত বরিশালে তার দেখা ও লেখার অস্তিত্ব ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে। বৃটিশ ভারত যুগে কবি নজরুল দুবার বরিশালে এসে এ নগরীর অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছিলেন। কবি নজরুলের বরিশালে এখনো রূপসী বাংলার চিরয়াত কিছু রূপ চোখে পড়লেও অব্যাহত নগরায়নে এ নগরী থেকে ঝাউ ও পাম গাছ সহ প্রকৃতির অনেক কিছুই বিলুপ্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। তবুও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি পাম গাছ এখনো তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। পাম গাছের সারি বিলুপ্ত হলেও নতুন করে নগরীর কয়েকটি স্থানে ঝাউগাছ আবাদ হলেও অযত্ন অবহেলায় তার অস্তিত্বও অপসৃয়মান।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশযুগে অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর শের এ বাংলা একে ফজলুল হকের সাথে প্রথম বরিশালে আসেন ১৯২০ সালে। বরিশালের সন্তান ফজলুল হকের সাথে সেবার তিনি বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সভায় দেশাত্ববোধক গানও গেয়েছিলেন। পরবর্তিতে ১৯৩০ সালের দিকে তিনি নোয়াখালী হয়ে আরেকবার বরিশালে আসেন। বরিশালে এসে এনগরীর প্রকৃতিক শোভায় মোহিত হয়ে তার অমর উপণ্যাশ ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় বরিশাল শহরের প্রকৃতিক শোভার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও দিয়েছেন। কবি নাসির উদ্দিনের সম্পাদনায় ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকায় মৃত্যুক্ষুধা উপণ্যাসটি বাংলা ১৩৩৪ সালের অগ্রহায়ন থেকে ’৩৬ সালের ফাল্গুন পর্যন্ত সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। কবি বৃটিশ যুগে এ শহরের পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদী তীরে সুরকীর রাস্তা আর গাছ গাছালীর কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি ।
জাতীয় কবি লিখেছিলেন, ‘বরিশাল। বাংলার ভেনিস। আঁকাবাঁকা লাল রাস্তা। শহরটি জড়িয়ে ধরে আছে ভুজ-বন্ধের মত করে। রাস্তার দু-ধারে ঝাউ গাছের সারি। তারই পাশে নদী। টলমল টলমল করছেÑবোম্বাই শাড়ী পরা ভরা-যৌবন বধুর পথÑচলার মত করে। যত না চলে, অঙ্গ দোলে তার চেয়ে অনেক বেশী। নদীর ওপারে ধানের ক্ষেত। তারও ওপারে নারকেল-সুপারী কুঞ্জঘেরা সবুজ গ্রাম, শান্ত নিশ্চুপ। সবুজ শাড়ীÑপরা বাসর-ঘরের ভয়-পাওয়া ছোট্ট কনে-বৌটির মত। এক আকাশ হতে আর-আকাশে কার অনুনয় সঞ্চারন করে ফিরছে। বৌ কথা কও, বৌ কথা কও। আঁধারে চাঁদর মুড়ি দিয়ে তখনো রাত্রী অভিসারে বোরোয়নি। তখনো বুঝি তার সন্ধ্যা প্রসাধন শেষ হয়নি। শঙ্কায় হাতের আলতার শিশি সাঁঝের আকাশে গড়িয়ে পড়েছে। পায়ের চেয়ে আকাশটাই রেঙে উঠেছে বেশী। মেঘের কালো খোপায় ভূতীয়া চাঁদরে গো’ড়ে মালাটা জড়াতে গিয়ে বেঁেক গেছে। উঠোনময় তারার ফুল ছড়ানো। .....।’
কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নে কবি নজরুলের বরিশাল থেকে প্রকৃতি অনেকটা বিলুপ্ত হলেও তাকে রক্ষা করা সহ ফিরিয়ে আনার সময় এখনো আছে বলে মনে করছেন পরিবেশবীদগন। কবি নজরুল মৃত্যু ক্ষুধায় যে স্থানের বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেটি নিঃসন্দেহে নগরীর বাঁধ রোডের ভাটার খাল থেকে স্টেডিয়ামের মধ্যবর্তি এলাকা। কির্তনখোলা নদীর তীরে সে সময়ের বরিশাল শহর, আজকের মহানগরীর ঐ এলাকায় বাঁধ রেডের দুধারে তখন ঝাউ আর পাম গাছের সারি যেকোন পাষানেরও মন যুড়াত।
কিন্তু নগরায়নের ধাক্কায় গত প্রায় ১শ বছরে বাঁধ রোডে নগরায়নের ছাপ স্পষ্ট হবার সাথে প্রকৃতির দান বিলুপ্ত হয়েছে। এ নগরীর প্রায় সব পাম গাছই বিলুপ্ত হয়েছে। পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে বাঁধ রোডে কির্র্তনখোলা তীরের ঝাউ বাগান। এমনকি বাঁধ রেডে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে যে কয়টি পাম গাছ তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিল, তাও বছর চারেক আগে কেট ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার অজুহাতে। যদিও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের কোল ঘেষে বাঁধ রোডের ধারে কিছু সোনালু গাছের আবাদ হয়েছে। কিন্তু পাম গাছ আর ফিরে আসেনি। সোনালু ফুল এ নগরীর শোভা বর্ধন করলেও ঝাউ গাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। নগরীর ফজলুল হক এভেনিউ ও হাসপাতাল রোডের পাশের প্রায় সব পাম গাছও বিলুপ্ত হয়েছে গত এক দশকে।
তবে ২০০৫ সালে নগরীর গোড়াচাঁদ দাশ রোডে খৃষ্টান গেরস্থান বা সাহেবের গোরস্থানের নতুন সীমানা প্রাচীর নির্মান করে তার অভ্যন্তরে প্রায় দুশ মিটার লম্বালম্বি ঝাউগাছ লাগানো হয়েছিল। যা দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠলেও অযতœ-অবহেলায় তার অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সরকারী হাতেম আলী কলেজের সামনেও কিছু ঝাউ গাছ সবার নজর কাড়ছে।
অব্যাহত নগরায়নের সাথে আমাদের বিবেকহীন কর্মকান্ডে বরিশাল মহানগরীর প্রকৃিতর রূপ অনেকটাই বিলিন হলেও তা ফিরিয়ে আনার সময় আছে বলেও মনে করছেন প্রকৃতি প্রেমিকগন। তবে নজরুলের চোখে দেখা বরিশাল নগরীর প্রকৃতির অপরূপ দান ধরে রাখা সহ তা ফিরিয়ে আনতে পরিবেশবীদ বা সংগঠনেরও কোন ভ’মিকা এখনো চোখে পড়েনি।
এব্যাপারে বরিশালের বন সংরক্ষকের সাথে টেলিফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘অপতত সামাজিক বনায়নের আওতায় কোন প্রকল্প না থাকায় এনগরীতে অধিদফ্তর থেকে বনায়নের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে আগামীতে এ ধরনের কোন প্রকল্প হলে তিনি অবশ্যই নগরীকে যতটা সম্ভব সবুজায়নে চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি কোন সরকারীÑআধাসরকারী দফতর চাইলে চারা সরবারহ সহ বৃক্ষ রোপনে প্রযুক্তিগত সব সহায়তা প্রদানে বন অধিদপ্তর প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।