Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে ১.৪৮ কোটি টন আমন উৎপাদনের লক্ষে রোপণ প্রায় শেষ

আকস্মিক বন্যা কেটে যাবার আশা, দুশ্চিন্তা ভাদ্রের আসন্ন বড় অমাবস্যা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২১, ২:২০ পিএম

দেশের ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষে ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ জমিতে রোপণ সম্পন্ন হলেও কিছু কিছু এলাকায় সীমান্তের ওপারের নদ-নদীর ঢলে ফসল প্লাবিত হলেও খুব সহসাই সংকট কেটে যাবে। তবে সামনে ভাদ্রের বড় অমাবস্যা নিয়ে কৃষকদের মাঝে যথেষ্ট দুঃশ্চিন্তা কাজ করছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলের ১১টি জেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হলেও এরমধ্যে আমনের পরিমান সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরের মত।

তবে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কয়েকটি এলাকা সহ ফরিদপুর, রাজবাাড়ী ও শরিয়তপুরের কিছু ফসলী জমি পদ্মা-মেঘনার আকষ্মিক প্লবনে নিমজ্জিত হলেও ইতোমধ্যে পানি সরে যেতেও শুরু করেছে। অন্যান্য জেলাগুলোও দ্রুত প্লাবনমূক্ত হবে বলে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলায় যে ৭ লাখ ২৮ হাজার হেক্টরে আমন অবাদের লক্ষ নির্ধারন করা হয়েছে তাও সঠিকভাবেই এগুচ্ছে। ভাটির এলাকা বিধায় বরিশাল কৃষি অঞ্চলের দক্ষিণের ৬টি জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৫০% এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৯৮% জমিতে আমন রোপন সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৮৫ হেক্টরে আমনের আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৭ টন চাল। বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫টি জেলাতেও ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ হেক্টরের মধ্যে ৯২%, ১ লাখ ৪২ হাজার ৭শ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে এবার শ্রাবনের ভরা বর্ষার শুরুতে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির অভাবে দেশের অন্যতম প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল, আমনের বীজতলা তৈরী সহ রোপন ব্যহত হয়। এমনকি অনেক এলাকায় ভরা বর্ষায়ও জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। আমন বীজতলা তৈরী, আবাদ ও রোপন পরবর্তি জীবনকাল ধরে রাখতে কৃষকদের বেশ পরিশ্রম করতে হলেও পরে সে সমস্যা কেটে যায়। কিন্তু এখন সীমান্তের ওপরের ঢলে ভর করে সৃষ্ট বণ্যায় কিছু এলাকায় রোপা আমন প্লবিত হলেও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে এখনো খুব বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। খুব সহসাই সংকট কেটে যাবে বলেও আশাবাদী দায়িত্বশীল মহল। ডিএই’র মতে, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের ১১টি জেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল আকস্মিক বণ্যায় প্লাবিত হলেও তার মধ্যে রোপা আমনের পরিমান ছিল মাত্র ৫ হাজার ১৪৭ হেক্টর।
তবে সামনে ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় যদি গত কয়েক বছরের মত ভারি বর্ষন হয়, তবে দক্ষিনাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমন সহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশংকায় আছেন কৃষকগন। গতবছর ভাদ্রের প্রবল বর্ষনের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জেয়ার আর উজানের ঢলে দক্ষিনাঞ্চলের বিপুল ফসলী জমি প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় লাখ টন চাল উৎপদন হ্রাস পায়।
গত বছর প্রকৃতিক দূর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টরে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয়। যারমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় ৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৫০ হেক্টরে উৎপাদন দাড়ায় প্রায় ১৩ লাখ ৯৭ হজার টন। যা ছিল লক্ষমাত্রার প্রায় দেড়লাখ টন কম।
এদিকে এবার দেশে ২ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের আমন আবাদ হচ্ছে বলে ডিএই জানিয়েছে। যার হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ৩.৭২টন চাল। তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদে কাঙ্খিত অগ্রগিত হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলে মাত্র ৪৩৫ হেক্টরে হাইব্রীড জাতের আমন আবাদ হচ্ছে। অথচ দেশে স্থানীয় সনাতন জাতের যে ধানের আবাদ হচ্ছে ৮ লাখ হেক্টরে, শুধু দক্ষিনাঞ্চলেই এককভাবে তার আবাদ হচ্ছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫০ হেক্টরে। এসব ধানের উৎপাদন হেক্টর প্রতি মাত্র ১.৫২ টন।
তবে এবারো কৃষকেদের কাছে সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তা ভাদ্রের আসন্ন বড় অমাবশ্যা। যা গত কয়েকটি বছর ধরেই আমনের জন্য বড় দূর্যোগ বয়ে আনছে। গত বছর ঐ অমবশ্যায় ৩দিনে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৩শ মিলিমিটার বৃৃষ্টি হয়েছিল। সাথে ছিল ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ