পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফগানিস্তানের ৯৫০ কোটি ডলার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
তালেবানরা যুদ্ধে জিতেছে, তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে : ইইউ
তালেবানের সহযোগিতায় মধ্যরাতে আফগানিস্তান ত্যাগ ভারতীয়দের
রাজধানী কাবুল দখলের মধ্যে দিয়ে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পরে দেশজুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। স্কুলে ফিরতে শুরু করেছে আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরা। তালেবানরাও আগের থেকে অনেক উদার নীতি গ্রহণ করেছেন। তারা নারীদেরকে বোরকা না পড়লেও হিজাব পরে চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ভারতীয়দের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাদেরকে বিমানবন্দরে পৌঁছে তালেবানরা।
গতকাল স্কুলে যোগ দিয়ে হেরাতের শিক্ষার্থী রোকিয়া বলেন, ‘আমরা অন্যান্য দেশের মতোই উন্নতি করতে চাই। তালেবান আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করুক। আমরা আর যুদ্ধ চাই না। এই দেশে শান্তি চাই’। চলতি মাসে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেয় তালেবান। এ কারণে নিরাপত্তা সঙ্কট ও ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। সবশেষ রাজধানী কাবুলের পতন ঘটে আফগান সরকারের। ফের তালেবান ক্ষমতায় আসায় মেয়েদের প্রকাশ্যে চলাফেরায় বাধার কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছিলেন অনেকে। তবে তালেবান মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছে, হিজাব পরে নারীরা চলাফেরা এবং কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবে। এতে তালেবান কোনো বাধা দেবে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছেন, ‘তালেবান আমলে আফগানিস্তানে নারীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক নয়। বাইরে বের হওয়ার সময় তাদের হিজাব পরলেই চলবে।’ একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। কাবুল নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘বিশ বছর আগের তালেবানের সাথে আজকের তালেবানের বিশাল তফাত রয়েছে। আমরা ২০ বছর আগের তালেবান নই। সময়ের প্রেক্ষিতে আমাদের নেয়া পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তগুলোতে অনেক পার্থক্য দেখা যাবে। আর এটা বিবর্তনের ফসল।’ এমনকি সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে আফগান নারীরা যোগ দিতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন তালেবান নেতারা। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা ছিল তালেবানের হাতে। সে সময় মেয়েদের স্কুলে যেতে দেয়া হত না। বাইরে কাজ করারও অনুমতি ছিল না। এমনকি বাড়ির বাইরে পা রাখলেই বোরকা পরা ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু এবার নিজেদের সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে তালেবান।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের প্রধান লোহার গেটের বাইরে মেশিনগান এবং রকেট চালিত গ্রেনেড লঞ্চার দিয়ে সজ্জিত একদল তালেবান যোদ্ধাকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কম্পাউন্ডের ভিতরে ১৫০ জন ভারতীয় ক‚টনীতিক এবং নাগরিক ছিলেন - তারা তালেবানদের হাতে রাজধানীর পতন দেখে ভয় পাচ্ছিলেন। তাদের উদ্বেগের পেছনে কারণও ছিল। আফগানিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও তাদের চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারত তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় ক্ষমতায় থাকা সরকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটির ঘৃণা ও শত্রæতা অর্জন করেছিল। এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও বলেছিলেন, ‘কাবুলে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মীদের চলাচল ছিল একটি কঠিন এবং জটিল বিষয়।’ কিন্তু ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে তালেবান যোদ্ধারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নয়, বরং তাদের কাবুল বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল, যেখানে একটি সামরিক বিমান তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কাবুলের গ্রিন জোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তালেবানের কাছে অনুরোধ তরা হয়, তাদেরকে নিরাপদে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েই যোদ্ধাদের পাঠায় তালেবানরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রায় দুই ডজন গাড়ির মধ্যে প্রথমটি দূতাবাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, কয়েকজন যোদ্ধা যাত্রীদের দিকে হাত নেড়ে হেসেছিলেন - যাত্রীদের মধ্যে এএফপির একজন সংবাদদাতাও ছিলেন। একজন তাদেরকে শহরের গ্রিন জোন থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তার দিকে এবং বিমানবন্দরের প্রধান সড়কের দিকে পরিচালিত করেছিল।
অন্যদিকে, গতকাল তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের সাথে সাথে জড়িত হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঊর্ধ্বতন নেতা ও সামরিক কমান্ডার আনাস হাক্কানি আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারযাইয়ের সাথে কথা বলেছেন। আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের শান্তিদূত আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ কাবুলের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তালেবান একটা সরকার গঠনের জন্য তাদের প্রয়াস আরও জোরদার করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই বৈঠকের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তবে তাদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) ফরেন পলিসির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন যে, আফগানিস্তানে তালেবান আন্দোলনের সাথে ইউরোপীয় বøকের কথা বলা উচিত, কারণ তারা সেখানে যুদ্ধ জিতেছে। বোরেল বলেন, ‘তালেবান যুদ্ধে জয়লাভ করেছে, তাই মানবিক ও সম্ভাব্য অভিবাসী দুর্যোগ এবং মানবিক সঙ্কট রোধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য তাদের সাথে আমাদের কথা বলতে হবে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর মঙ্গলবার ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে জোটের এ অবস্থান তুলে ধরেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দ্রæত পতনের প্রেক্ষাপটে জরুরি বৈঠকে বসেন ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে বিবৃতি জোসেপ বোরেল বলেন, ‘আমরা বলিনি যে, তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই তাদের সঙ্গে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা উচিত, এমনকি নারীদের রক্ষার চেষ্টা করা উচিত আর এজন্যই তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করা উচিত।’ ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর তালেবানের কাবুল দখলই সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚রাজনৈতিক ঘটনা। বোরেল বলেন, ‘এই ঘটনা বিশ্বের ভ‚রাজনৈতিক ভারসাম্যের ওপর একটি প্রভাব ফেলবে।’ এর অর্থ হচ্ছে ইইউকে তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস মঙ্গলবার বলেছে যে, তারা আফগানিস্তানের নতুন নেতৃত্বকে কী দিতে পারে তা নিয়ে ভাবছে। ইউনিয়নের প্রধান আহমদ আল-রাইসুনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে সংস্থাটি সন্তুষ্ট। আল-রাইসুনি ‘তালেবানের পদক্ষেপ, সহনশীলতা ও সাধারণ ক্ষমা দেখানো’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি ‘সমঝোতা, সহনশীল এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশের নতুন পর্যায় সম্পর্কে আশাবাদী’। ইউনিয়নের নেতা জোর দিয়ে বলেন, ‘এই নতুন পর্বে আফগানিস্তানকে তার সব লোককে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি আফগানিস্তানের সকল সম্প্রদায়, অঞ্চল এবং জাতি একতাবদ্ধ, ইসলাম দ্বারা ঐক্যবদ্ধ এবং আফগান স্বার্থে একত্রিত হবে।’ তিনি ‘আধুনিক আফগান রাষ্ট্রের জন্য সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহŸান জানান, যার ভিত্তিতে প্রত্যেককে সম্পৃক্ত করতে হবে।
মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানরা কাবুল দখল করার পর গত রোববার বাইডেন প্রশাসন মার্কিন ব্যাংকে আফগান সরকারের রিজার্ভের প্রায় ৯৫০ কোটি ডলার ডলার জমা করে দিয়েছে। অঘোষিত এই পদক্ষেপের বিসয়ে মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম রিপোর্ট করেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন এবং ট্রেজারি অফিস অফ ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল এর কর্মীরা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে সংবাদপত্রকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত আফগান সরকারের সম্পদ তালেবানদের কাছে উপলব্ধ করা হবে না।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস এই পদক্ষেপ নেয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল। বাইডেন প্রশাসন তালেবানকে চাপ দেয়ার জন্য অন্যান্য পদক্ষেপের কথাও ভাবছে বলে প্রতিবেদনে যোগ করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসনের জন্য রিজার্ভ জমা করার পদক্ষেপ নিতে নতুন করে অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল না কারণ ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালের হামলার পর অনুমোদিত নির্বাহী আদেশ থেকে তালেবান ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। বøুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে অর্থের প্রবেশাধিকার থেকে বিরত রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন কাবুলে নগদ চালান বন্ধ করে দিয়েছে। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ডিএবি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান আজমল আহমদি এ সপ্তাহের শুরুতে টুইট করেছিলেন, তিনি শুক্রবার জানতে পেরেছিলেন যে, ডলারের চালান বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ ওয়াশিংটন তালেবানদের তহবিলে অ্যাক্সেস করতে দেবে না। বøুমবার্গের মতে, ডিএবি-র সম্পদ প্রায় ৯৫০ কোটি ডলার, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ এবং মার্কিন ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে রয়েছে। সূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, টিওআই, মিডল ইস্ট মনিটর, ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।