বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
আবুল কাসেম হায়দার : আমাদের দেশে তৈরি পোশাক শিল্প তথা বস্ত্র খাতের উত্থান শুরু হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহের পজেটিভ ভূমিকার মাধ্যমে। বিশেষ করে সরকারের নীতিগত, আইনগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। বাস্তবে ১৯৭৫-৭৬ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়, ১৯৮১-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। ব্যাংক টু ব্যাংক এলসি, বন্ডেজ ওয়্যার হাউজ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে তৈরি পাশাক শিল্প বাস্তবে রূপ লাভ করতে থাক। আজ দেশের রপ্তানির ৭৮ শতাংশ আসছে তৈরি পাশাক শিল্প খাত থেকে। অথচ ১৯৭৬ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের জাতীয় আয়ের মাত্র ০.০০১ শতাংশ রপ্তানিতে ভূমিকা ছিল।
তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অগ্র পশ্চাত শিল্প অর্থাৎ স্পিনিং খাত, উইভিং খাত, ডাইং ফিনিশ্ড খাত অর্থনীতিতে স্থান দখল করে। বর্তমানে ওভেন ফ্যাবরিক্স ৭০ শতাংশ, নিট ফ্যাবরিক্স শতভাগ রফতানি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত ৭ বছর ধরে অবশ্য গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে ভারী শিল্পের বিকাশ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।
শুধু ব্যাংকের অসহযোগিতা, দুর্নীতি ও উচ্চ সুদের কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র এক পরিসংখ্যানে এমন ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসছে। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট। আর এসব ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে না পেরে গত দুই বছরে পোশাক শিল্পের ছোট-বড় প্রায় ২ হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। রুগ্ন হয়ে পড়েছে আরও কয়েকশ’ কারখানা। এর বাইরে আন্তর্জাতিক দুই ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে আরও প্রায় দুইশ’ কারখানার দরজায় তালা পড়েছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক।
এই যখন অবস্থা তখন মোটেই ভালো নেই পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারাও। সঙ্গত কারণে গত চার বছরে এ সেক্টরে নতুন কোনো বিনিয়োগও হয়নি। উপরন্তু আটকা পড়েছে অনেকের কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ। প্রতিটি বন্ধ কারখানায় পড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান মেশিনারিজ। এ অবস্থায় অনেক কারখানা মালিক লোকসান দিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ওদিকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকও। শুধু তাই নয়, এই খাতে ঋণ বিতরণ করে অধিকাংশ ব্যাংক পড়েছে ঝুঁকিতে। ঋণ আদায়ের তেমন কোনো পথ খোলা নেই তাদের সামনে। কেননা, মর্টগেজ দেয়া কারখানা বিক্রি করলেও ঋণের ৫ ভাগ অর্থও উদ্ধার হচ্ছে না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে খেলাপি ঋণের চাপে চিড়েচ্যাপটা হয়ে এক সময় ভুক্তভোগী ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে।
দেশের যতগুলো পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে তার মধ্যে ৭০ ভাগই বন্ধ হয়েছে ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে। ব্যাংকের উচ্চ সুদই কারখানা বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। এদিকে একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ায় এ খাতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, বড় বড় ঋণ কেলেংকারির ঘটনা। বিশেষ করে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, মাদার টেক্সটাইল, মাদারীপুর স্পিনিং, বেনটেক্স, ফেয়ার গ্রুপ, রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইলসহ ভুঁইফোড় শত শত প্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে ৩০টিরও বেশি ব্যাংক। এতে করে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব খেলাপি ঋণের বড় অংশ আর ফেরত পাবে না ওইসব ব্যাংক। প্রশ্ন হলো- তাহলে কী হবে? ব্যাংক এসব টাকা আদায় করতে না পারলে নির্ঘাত তার পুঁজিতে টান পড়বে। এক পর্যায়ে যখন এ ধরনের খেলাপি ঋণের বোঝা বাড়তে থাকবে তখন ওই ব্যাংকের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যাংক বিশ্লেষকদের অনেকে এখন এমন আশঙ্কাই করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল শেষে খেলাপি ঋণের ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের। এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পোশাক খাতসহ শিল্প খাতে ব্যাংকের ঋণ রয়েছে মোট ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ।
সাম্প্রতিক সময়ে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সোয়ান, লিরিক, আরএম ফ্যাশন, মিফকিফ ও বনী। বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে মিরপুরের লিবার্টি গার্মেন্ট, লিবার্টি ফ্যাশন ও উত্তরার ফাহিম লুমসহ ৩০-৪০টি কারখানা। এ ছাড়া কারখানা স্থাপন করেও গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় অনেক কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। আবার অতিমাত্রায় ব্যাংক সুদের কারণে লাভের মুখ দেখতে না পাওয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বেশিরভাগ পোশাক শিল্পকেন্দ্রিক। স্বাভাবিকভাবে এ খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগও অনেক বেশি। তাই ঝুঁকিও বেশি।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ৫ হাজার ৯৯৯টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯৩টিই বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরে রুগ্ন হয়ে পড়ে আছে আরও ৪৩৯টি কারখানা। অবশ্য অন্য একটি সূত্র বলছে, বর্তমানে সারা দেশে তিন হাজারের মতো কারখানা চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পোশাক কারখানা ছিল ৫ হাজার ১৫০টি। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪০০টি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৮৭৬টি। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২২। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসে দুর্ঘটনার পর কমপ্লায়েন্স (তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ) ঘাটতি ও কার্যাদেশ বাতিলের অজুহাতে কারখানা বন্ধের তালিকায় ২০১৪ সালে যোগ হয়েছে ২২০টি। এতে বেকার হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে চলতি বছরে ৫০-৬০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরে বিজিএমইএ’র সদস্য নয় এমন আরও ৭শ’ থেকে ৮শ’ কারখানা হঠাৎ বন্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিতে থাকা ছোট-মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে ইউএসএইড, জাইকাসহ বিদেশি সংস্থাগুলো আইএলও আইন অনুযায়ী স্বল্প সুদে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বিদেশি ফান্ড ব্যবহার করে কীভাবে এ কারখানাগুলোকে সাহায্য করতে পারি তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।’
ঋণের টাকা ফেরত না দেয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ৩৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার মন্দ ঋণ (পুরাতন খেলাপি) অবলোপন করেছে (ব্যালান্সশিট থেকে বাদ দিয়েছে)। এর বাইরে আরও বেড়েছে খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। বর্তমানে অবলোপন করা মন্দ ঋণ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ যোগ করলে মোট খেলাপির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে। এসব ব্যাংকের মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই এখন খেলাপি। এরপরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৮৪ শতাংশই খেলাপি ঋণ। বিদেশী ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ রয়েছে মোট ঋণের ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ব্যাংক ব্যবস্থার যে পরিমাণ অর্থ শিল্পায়নে বিনিয়োগ হয় তার ৯০ শতাংশ হয় পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে ঘিরে। আমদানি-রফতানির ৮০ ভাগ পোশাক শিল্পকেন্দ্রিক হওয়ায় ব্যাংকগুলোর সিংহভাগ অর্থায়ন হয় এ খাতে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রমের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পোশাক খাতের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি, আমদানি-রফতানিতে ঋণপত্র খোলা, আইবিপি, পিএডি, এফডিবিপি, এলটিআর, ক্লিয়ারিং হাউস ইত্যাদি। বলতে গেলে পোশাক শিল্পের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সম্পর্ক হৃৎপি-ের মতো। কিন্তু পোশাক শিল্পে একাধিক বিপর্যয়কর ঘটনায় ব্যাংকিং সেক্টরেও চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে যা করা প্রয়োজন :
১. শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য এখনও আমরা নতুন কোনো খবর দেখতে পাচ্ছি না। সরকার নতুন বছরের শুরুতে দৃশ্যত ইতিবাচক কোনো বার্তা শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে এখনও দিতে পারেনি। আমরা আশা করব, দেশের অগণিত বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন নতুন সিদ্ধান্ত, নীতি, আইন, সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পদক্ষেপের ঘোষণা করা হবে।
২. আমাদের বিনিয়োগের বড় বাধা হচ্ছে গ্যাস, বিদ্যুত স্বল্পতা। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস, বিদ্যুত দিতে না পারায় দেশে বিগত ৭ বছর ধরে বিনিয়োগে টার্গেট অর্জন করা যায়নি। দেশে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়নি। নতুন নতুন কল কারখানা না হওয়াতে কর্মসংস্থানও স্থবির হয়ে আছে। গ্যাস, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সরকার স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে। এগিয়েও যাচ্ছে। কিন্তু গ্যাসের পরিকল্পনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে দৃশ্যমান নয়। এখনও গ্যাসের ব্যাপারে সরকার আশার আলো দেখাতে পারেনি। দ্রুত গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে তৈরি পোশাক শিল্পসহ বস্ত্র খাতের রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক ঋণের বোঝায় অনেক শিল্প মালিক দিশেহারা। ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক ব্যাংক। সুব্যাংকিং কায়েমের মাধ্যমে ব্যাংকসমূহে আমূল সংস্কার আনতে হবে।
৪. তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশের স্বার্থে বস্ত্র খাতের উন্নয়নে সরকারকে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে স্পিনিং, ডাইং, ফিনিশিং, ইউভিং খাতকে রক্ষা করতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পকে রক্ষা করতে হলে এই কাজের বিকল্প কিছুই নেই। তাই দেশের ভবিষ্যত অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য স্পিনিং খাতে চাহিদা মোতাবেক ক্যাপটিব পাওয়ার প্রকল্প চালু রাখতে হবে। গ্যাস সরবরাহ স্পিনিং খাতে অবশ্যই দেওয়া প্রয়োজন। স্পিনিং খাত মুখ থুবড়ে পড়লে তৈরি পোশাক শিল্প খাতকে রক্ষা করা যাবে না। আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহ চাচ্ছে যাতে আমরা তৈরি পোশাক শিল্পে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারি। তবেই তো পুরো বিশ্ব বাজার তাদের দখলে চলে যাবে। এই সত্যটি সরকারকে বুঝতে হবে। আমাদের মূল অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প তথা সমগ্র বস্ত্র খাত।
৫. দেশের ব্যাংক সমূহকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে আইনের সুশান কায়েম করতে হবে। ভুয়া কোম্পানির নামে ব্যাংক ঋণ প্রদান করে দেশের মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করার প্রবণাত কমাতে হবে।
অন্যদিকে ব্যাংকসমূহের অপচয়, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় বন্ধ করতে হবে। যেমন কোনো কোনো ব্যাংক এক একটি বাড়িতে বিশাল স্থান নিয়ে, প্রচুর ভাড়া দিয়ে গুলশান, বাননী এলাকায় শাখা খুলে অর্থের অপচয় করছে। কোন একটি ব্যাংকের শাখার জন্য এক বিঘার বাড়িতে এত বড় স্পেস নেয়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না। অল্প স্থানের মধ্যে, কম ভাড়ায়, কম খরচে ব্যাংকের শাখা করা কোন অসুন্দর ব্যাপার হবে না। তাতে ব্যাংকের বাণিজ্যেরও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই বিষয়টির দিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে নজর দিতে হবে। তাতে ব্যাংকের খরচ কমবে, আর গ্রাহক থেকে ঋণের বিপরীতে সুদও কমে নিতে পারবে।
আমাদের অর্থনীতি মূলত তৈরি পোশাক শিল্প তথা বস্ত্রখাতের উপর নির্ভরশীল। ব্যাংক, বীমা, বন্দরসহ দেশের সকল বড় বড় খাত সম্পূর্ণরূপে বস্ত্র খাতের উপর ভিত্তি রেখে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের উত্থানের ফলে দেশের অন্যান্য সকল খাতের বিকাশ লাভ করেছে। অতএব, এই বস্ত্রখাত মুখ থুবড়ে পড়লে, পুরো দেশের অর্থনীতিতে ধস নামবে। এই বিষয়টি আমাদের নীতি নির্ধারকগণ এখনও বুঝতে সময় নিচ্ছেন। যখন বুঝবেন তখন আর কিছু করার ক্ষমতা আমাদের থাকবে না। এখনও সময় আছে, আমাদের বিবেক, জ্ঞানকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। অবিলম্বে তৈরি পোশাক শিল্প তথা বস্ত্র খাতের রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের অনাগত ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা ধরে রাখার জন্য আসুন আমরা সকলে এগিয়ে আসি।
য় লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।