পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অধীনস্থ কর্মচারী হয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী যা অমার্জনীয় অপরাধ। চাকরিবিধি অনুযায়ী, কারো এটি করার সুযোগ নেই। কেউ করলে তাকে নতুন করে পদায়নেরও সুযোগ নেই। বরং সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী অন্যান্য যে সব বিষয় আছে যেমন- শাস্তিস্বরূপ বদলি, প্রণোদনা বন্ধ, বর্তমান পদ থেকে একপদ নিচে নামিয়ে দেয়া, অর্থ জরিমানা ও মৃদু বা তীব্র তিরস্কারের বিধান রয়েছে। অথচ ঘটেছে উল্টো। পুরস্কার হিসেবে আইন অমান্য করে ওই কর্মকর্তাকে আবার পূর্বের পদে পদায়ন করা হয়েছে।
সূত্র মতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিক্রয় ও সংগ্রহ কর্মকর্তা মনির উজ্জামান চৌধুরী। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য জনস্বার্থে এ নিয়ে মনির উজ্জামানের বিরুদ্ধে রাজধানীর মুগদা থানায় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হাবিবুল্লাহ রানা নামে জনৈক ব্যক্তি একটি মামলা করেছেন। যা বিচারাধীন। এর আগে দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত এবং জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. কার্তিক চন্দ্র দাসকে ঘেরাও, লাঞ্ছিত ও অপমান করার অপরাধে শৃঙ্খলাজনিত শাস্তি হিসেবে দিনাজপুর এম এ রহিম মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ মে সাবেক পরিচালক ডা. কার্তিক চন্দ্র দাস এ বিষয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে এর বিচারও চেয়েছিলেন। বদলির পর দীর্ঘ ৪ বছর মামলা করে আদেশ স্থগিত করে রেখে মেয়ে হিমির নামে হিমি এন্টারপ্রাইজ এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সারমিনের নামে একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি আল মদিনা গ্রুপসহ বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে বাণিজ্যে নেমে পড়েন। সর্বশেষ গত অর্থবছরেও ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডকে ব্যবহার করে তাদের অজান্তে মালামাল না দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল মদিনা গ্রুপ ২৮ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে। এতেও সহযোগিতা করেন মনির উজ্জামান। যদিও তৎকালীন পরিচালক ডা. আব্দুর রহিমের দূরদর্শীতায় বড় অঙ্কের জালিয়াতি থেকে রক্ষা পায় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। এছাড়া এর আগেও দুর্নীতির দায়ে মনির উজ্জামানকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি মামলা করে আরো একটি বদলির আদেশ ঠেকিয়ে দীর্ঘদিন একই পদে থেকে সিন্ডিকেট বাণিজ্য গড়ে তুলেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলাও রয়েছে।
এসব কর্মকান্ডের পরও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম একক ক্ষমতা দেখিয়ে মনির উজ্জামানকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পদায়নপূর্বক ঢাকাস্থ শ্যামলী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে প্রেষণে পদায়ন করেছেন। পদায়ন চিঠিতে হাসান ইমাম বলেছেন, মনির উজ্জামানকে ইতোপূর্বে বদলিকৃত কর্মস্থলের উল্লেখিত পদটি বর্তমানে শূন্য না থাকায় তাকে নতুনভাবে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালের ১৯ জুন শৃঙ্খলাজনিত শাস্তি হিসেবে দিনাজপুর এম এ রহিম মেডিক্যাল কলেজে বদলির পর ওই পদে যোগদান না করে মামলা করে আদেশ স্থগিত রাখেন। আর মামলা চলাকালীন দিনাজপুরের ওই পদ পূরণ হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন দেশের আইনজ্ঞরা। আর এভাবেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে এবং সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেও পুরস্কার হিসেবে ওই পদে যোগদান না করেই আবার সাবেক কর্মস্থলে ফিরলেন মনির উজ্জামান। কথিত আছে ডা. হাসান ইমাম নিজেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উপস্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। এবার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কর্তৃত্ব করতে মনির উজ্জামানকে পদায়ন করে অসাধু সিন্ডিকেটকে সক্রিয় করতে চাইছেন। এর আগেও পদায়নের সুযোগ না থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদফতেরর অনিয়ম-দুর্নীতির হোতা ‘আবজাল’ এর শ্যালক উচ্চমান সহকারী রেজাউলকে বড় অঙ্কের বাণিজের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পদায়ন করেছেন।
২০১৭ সালের ১৯ জুন প্রশাসনিক কারণে বদলিকৃত কর্মকর্তাকে স্বপদে ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি চক্র। অথচ বিষয়টি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির দিন। তা সত্তে¡ও শুনানির আগেই বড় অঙ্কের বাণিজ্যের মাধ্যমে তাকে পূর্বের পদে ফিরিয়ে আনছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি অসাধু চক্র। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলিকৃত বহুল আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম মনির উজ্জামান চৌধুরী। যাকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিক্রয় ও সংগ্রহ শাখা থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রশাসনিক শাস্তি হিসেবে বদলি করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলাও রয়েছে।
সূত্র মতে, প্রশাসনিক কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতর ২০১৭ সালের ১৯ জুন জনস্বার্থে মনির উজ্জামান চৌধুরীকে বদদি০ করে। একই সঙ্গে ওই পদে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি বদলি প্রজ্ঞাপন জারির ৩ কর্মদিবসের মধ্যে ন্যাস্তকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয় মনির উজ্জামানকে। কিন্তু বদলির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে যোগদান না করে ২০১৭ সালের ২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের আদেশ বাতিল চেয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকায় এ.টি মামলা (২৩৯/২০১৭) করেন মনির উজ্জামান চৌধুরী। মামলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ ৫ জনকে প্রতিপক্ষ করা হয়। পরে আদালত ৯ আগস্ট মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বদলির আদেশ স্টে করে। এরপর থেকে মামলাটি চলমান যার পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে মামলাবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত মনির উজ্জামান। এর আগেও দুর্নীতির দায়ে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি মামলা করে আরো একটি বদলির আদেশ ঠেকিয়ে দিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মনির উজ্জামান অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার এবং পরিবারের নামে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে। একাধিক স্ত্রী ও ডজনখানেক বান্ধবী রয়েছে তার। একাধিকবার তার দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। আর তদন্তে তা প্রমাণ হওয়ায় তাকে শাস্তি হিসেবে এর আগেও বদলি করা হয়। এছাড়াও ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, অফিস আঙিনা, কর্মচারী কোয়ার্টার এলাকা, রাস্তা ও সাততলা বস্তির আশপাশে শতাধিক বড় গাছ ছিল জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। ২০১৭ সালে দায়িত্বে থাকা পরিচালক ডা. কার্তিক চন্দ্র দাসকে না জানিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সব গাছ কেটে বিক্রি করেন মনির উজ্জামান।
এদিকে, ২০১৭ সালের ১৯ জুনের বদলির আদেশ স্টে করেই বসে নেই মনির উজ্জামান। তিনি স্ত্রী শামীমা ইয়াসমিনকে মালিক করে মেয়ে হিমির নামে ‘মেসার্স হিমি এন্টারপ্রাইজ’ খুলে ঠিকাদারী কাজ করছেন। এই প্রতিষ্ঠানের নামে আজিমপুর মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কাজও করেছেন। তবে সেই কাজেও অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এ অনিয়মের বিষয়টি দুদকে তদন্ত চলছে। এখানেই শেষ নয়; তার দ্বিতীয় স্ত্রী সারমিনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামেও একাধিক কাজ করেছেন। অবশ্য দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতিষ্ঠান দিয়ে ঠিকাদারী কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েই শেষ করেননি। দ্বিতীয় স্ত্রীর সকল সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজের ফ্ল্যাট থেকে বের করে বাসায় টু-লেট ঝুলিয়ে সন্তানসহ রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। সব হারিয়ে সন্তান নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী সারমিন এখন বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক ‘আবজাল’ এই মনির উজ্জামান। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে ঠিকাদারী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যোগদান পত্র দিয়েই ঠিকাদারদের নিয়ে সভা করেছেন। এমনকি কোন ঠিকাদার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কি কাজ পাবে তা নিয়েও আলোচনা করেছেন। এছাড়া জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের থাকা তার আগের অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ে সভা করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপিরচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দফতর প্রধানদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী কারো এটি করার সুযোগ নেই। কেউ করলে তাকে নতুন করে পদায়নের সুযোগ নেই। বরং সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী অন্যান্য যে সব বিষয় আছে যেমন- শাস্তিস্বরূপ বদলি, প্রণোদনা বন্ধ রাখা, বর্তমান পদ থেকে একপদ নিচে নামিয়ে দেয়া, অর্থ জরিমানা ও মৃদু বা তীব্র তিরস্কারের বিধান রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।