Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছিন্নভিন্ন কৃষি অর্থনীতি

রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। করোনার ভয়াবহতা আর দফায় দফায় লকডাউনে স্থবির হয়ে যায় সবকিছু। যার প্রভাব পড়ে এ অঞ্চলের কৃষি এবং কৃষকের ওপর। বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে পাইকারি বাজারে পৌঁছাতে না পারায় দ্রæত পচনশীল ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং কমদামে বিক্রি করতে হয় স্থানীয় বাজারে। এতে করে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

বাংলাদেশের অন্যতম শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল। দিনাজপুরের চাল-ডাল আর রংপুরের সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী বাজারে যেত। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ অঞ্চলের শাক-সবজি দেশের ৪০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। চাল, ডাল, সবজি ছাড়াও মৌসুমি ফল বিশেষ করে আম ও লিচু এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরাট ভ‚মিকা রাখে। শুধুমাত্র এ দু’টি ফল থেকেই প্রতিবছর এ অঞ্চলের কৃষকদের হাতে আসে কয়েকশ কোটি টাকা। যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।

সবজির পাশাপাশি এ অঞ্চলের আম এবং লিচুর চাহিদা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চাহিদা বাড়তে থাকে দিন দিন। মাত্র কয়েক ২-৩ বছরের মধ্যেই চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরাও এর প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন এবং এর চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু ভরা মৌসুমে ফসল ঘরে তোলার শুরুতে এসে কৃষকদের এ হাসি মলিন হয়ে যায়।

মরণঘাতি করোনায় দফায় দফায় লকডাউন আর পরিবহন ব্যবস্থাই পঙ্গু করে দেয় কৃষকদের। বিশেষ করে পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় উৎপাদিত পণ্য দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায় বাইরের পাইকারী বাজারে পাঠাতে হয়। এভাবে পণ্য পাঠিয়ে লাভবান না হলেও অনেকেই আসল পুঁজি ওঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে প্রত্যন্ত পল্লী এলাকার কৃষকদের পক্ষে একেবারেই সম্ভব হয়নি। ফলে স্থানীয় বাজারে কিংবা ফড়িয়াদের কাছে পানির দামে বিক্রি করতে হয় উৎপাদিত পণ্য। আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিবহনের অভাবে দ্রুত পঁচনশীল ফসলগুলোও সময় মত বাজারে পৌঁছাতে না পারায় সেগুলো ক্ষেতে কিংবা কৃষকের বাড়িতেই নষ্ট হয়ে যায়।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার সব সবজিতেই ভালো ফলন পেয়েছেন তারা। কিন্তু গত দুমাস ধরে দফায় দফায় লকডাউনের কারণে সবজি রংপুরের বাইরে পাঠাতে পারেননি। প্রতিটি পণ্যের দাম পড়ে গেছে। কৃষক ১৫০ টাকা মনে কাকরোল, বরবটি ৩০০-৩৫০ টাকা মণ প্রতি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। সীম, বেগুন পটল ও ঢেড়শ উৎপাদনে খরচ ১০-১২ টাকা হলেও বিক্রি করতে হয়েছে ৬-৮ টাকায়।

রংপুরের পদাগঞ্জ এলাকার আম চাষী মোজাম্মেল জানান, এ অঞ্চলের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যেত। এবারে লকডাউনের কারণে কোন জায়গা থেকেও লোক আসেননি। পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে টুকটাক আম ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ঢাকায় কুরিয়ার থেকে আম নিতে সমস্যা হওয়ায় অনেকেই আম কেনেন নি। যে সময়ে আম কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হত, সেখানে ওই সময় আম বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে। বিদেশে তো নয়ই, দেশের অন্যান্য স্থানেও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, তার ৩টি আম বাগান থেকে গত বছর পেয়েছিলেন ১৫ লাখ টাকা। এবছর ফলন বেশি হওয়ার পরও তিনি ওই ৩টি বাগান থেকে আম বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র সাড়ে ৪ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই এ অঞ্চলের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ভালো হচ্ছে। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এতে করে এ অঞ্চলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি অনেক চাঙা হয়েছে। কিন্তু মহামারী করোনা এবার এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ঠিকভাবে বাজারে নিতে পারেনি, ব্যবসায়ীরা কিনতে বা পরিবহন করতে পারেনি, আর ভোক্তারা খেতে পারেননি। এতে করে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। যার প্রভাব অনেকটাই পড়বে আসন্ন রবি মৌসুমেও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ