Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলছে খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্র

খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ৪:৩৬ পিএম

মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে আবারো খুলছে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো । এরফলে পর্যটকের পদচারণায় পুরনো রুপে দেখা যাবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এতে চাঙ্গা হবে পর্যটন শিল্প। আর ঘুরে দাঁড়াবে দেশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি। প্রতি বছর এ খাত থেকেই দেশের মূল অর্থনীতিতে যোগান হয় হাজার হাজার কোটি টাকা।মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের জন্য খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো উন্মুক্ত হচ্ছে
খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে যেন মায়াবী হাতছানি। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও এসব এলাকায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ঘুরে বেড়ান সারা বছর।,পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, লেক, নদী আর পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে আনন্দের পাশাপাশি অপরূপ প্রকৃতি অবলোকন করবে পর্যটকেরা। হোটেল মোটেল বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত পর্যটকদের স্বাগত জানাতে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ভ্রমণ পিয়াসুদের আনাগোনা। হোটেল মোটেলে শুরু হয়েছে আগাম বুকিং।
পুলিশের এসপি মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে টুরিস্ট পুলিশ সতর্ক ভ‚মিকা পালন করবে। জানা যায়, করোনাভাইরাস যেহেতু পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না, তাই নিজেকে নিজের সুরক্ষা করে এ ভাইরাসের সাথে টিকে থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে এ জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে থাকবে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিস্বাস বলেন, সরকার সার্বিক বিবেচনা করে ১৯ আগষ্ট থেকে পর্যটন এলাকার হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রিস্থিতির কারণে হোটেল মোটেল পর্যটন ব্যবসায়ীদের ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে, ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারী পর্যটকদের সচেতন হতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।তবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নদী পাহাড়ে সবুজের মেলা পাহাড়ি ঝরণা। নৃতাত্তি¡ক ১১টি জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট মাচাং ঘরে বসবাস। জুম চাষ, দিন শেষে ঘরে ফেরা, সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি, বৈশাখের উৎসব, সব মিলিয়ে রূপকথার কোনো কল্পকাহিনী মনে হলেও এর সবই রয়েছে খাগড়াছড়ি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যকটদের কাছে খাগড়াছড়ি একটি অতি প্রিয় গন্তব্য হতে শুরু করেছে। সবুজের সমারোহে, পাহাড়ে নিস্তব্ধতায়, প্রিয়জনদের নিয়ে একান্ত সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন স্মরণীয় করতে অনেকেই অতিথি হন খাগড়াছড়ি । অনেকের মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নান্দনিক পর্যটন স্পটের নাম পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা।
কিন্তু কোভিট-১৯ভাইরাসে পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক ধস নেমেছে। পাহাড়ে নেই কোন কোলাহল। থেমে গেছে হৈ হুল্লা আর আনন্দ উল্লাস। প্রতি বছর ঈদ, সরকারি ছুটিসহ প্রতিনিয়ত পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র। নেই কোন পর্যটকের আনাগোনা, এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন স্পট দেয়ার ঘোষণায় পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে খাগড়াছড়ি পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন।পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, নদী আর পর্যটনকেন্দ্র গুলো ঘুরে আনন্দের পাশাপাশি প্রকৃতির অপরূপ রূপ অবলোকন করবে পর্যটকেরা।
পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত শ্রমিকরা জানান, ৪ মাসের ওপর হয়ে গেল, শ্রমিকদের গাড়ির চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলোর মালিক ও শ্রমিকরা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আয় রোজগার। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন জাপন করছে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে খাগড়াছড়িতে অসাধারণ নয়নাভিরাম অনেক দৃশ্য। এগুলো এখন খাগড়াছড়ি ভ্রমণকারীদের জন্য বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে, মাইনীমুখ উপত্যাকার বিস্তীর্ণ সমতল ভ‚মি ও উপজাতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্রতা। মহালছড়ি, দিঘীনালা, পানছড়ি, রামগড়, ল²ীছড়ি, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা যেদিকেই নজর যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ।
খাগড়াছড়ির জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা ও মায়াবিনী লেক।এখানে যেসব প্রাকৃতিক ঝরণা, টিলা ও পাহাড় গুলো পর্যটকদের নজর কাড়ে তার মধ্যে রয়েছে আলুটিলা পাহাড়, বিছাং ঝর্ণা, মাতায় পুকুর,পানছড়ি অরন্য কুটির, তৈদুছড়া ঝর্ণা, রাবার ড্যাম ও সাজেক ভ্যালী।
সাজেক ভ্যালী রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও যাতায়াতের সহজ পথ হল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সড়ক দিয়ে। তাই সাজেক ভ্যালী ভ্রমণকারীদের জন্য খাগড়াছড়ি দিয়ে ভ্রমণ করাই সহজ। হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণায় খাগড়াছড়ি পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আনন্দ ভাব দেখা গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন দীর্ঘদিন পরে পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় খাগড়াছড়িতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করবেন। এতে চাঙ্গা হবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ