Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জয়পুরহাট চিনিকলে শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন বকেয়া ৩ কোটি টাকা

ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

জয়পুরহাট সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১:৫৬ পিএম

উত্তরের সীমান্ত জেলা জয়পুরহাটে আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কৃষকরা। চিনিকল কর্তৃপক্ষ সময় মতো আখের মূল্য পরিশোধ না করার পাশাপাশি নিয়মিত সার বীজ ও কীটনাশক না পাওয়ায় কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে অন্যদিকে আখের তুলনায় অন্য ফসল বেশি লাভজনক হওয়ার ফলে মাড়াই মৌসুমের আখ সরবরাহ কমে যাওয়ায় চিনিকলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জয়পুরহাট চিনিকল জোনে ২০২০/ ২০২১ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৫৮৮ মে: টন, রংপুর চিনিকল থেকে ২৯ হাজার ২৯১ মেট্রিক টন, শ্যামপুর চিনিকল থেকে ২৬ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। মিলটি মাড়াই মৌসুমের চালু ছিল মাত্র ৮৭ কর্ম দিবস। অথচ ২০১৩/১৪ সালে আখ মাড়ায় মৌসুমে ১০ টি জোনে ১১ হাজার ২৮৮ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছিল। ওই জমি থেকে ১লাখ ২৬ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ৯হাজার ১৯.৭০ মেট্রিক টন। এদিকে ২০২১/২০২২অর্থ বছরের আখ চাষ হয়েছে মাত্র মাত্র ৩ হাজার ২০ একর জমিতে।

সময়মতো কীটনাশক, সার, বীজ ও আখের মূল্য পরিশোধ করতে না পারাকে দায়ী করছে স্থানীয কৃষি ওর বিভাগ। জয়পুরহাট চিনিকল জোনের আখ চাষী ফজলুর রহমান ও মেহেদি হাসান বলেন চিনিকলে আখ সরবরাহ করে দীর্ঘদিন ঘুরে ঘুরে আখের টাকা পাওয়া যায় না, মিল কর্তৃপক্ষ সময় মতো আখের টাকা পরিশোধ করতে পারে না ফলে আমরা আর আখ লাগাই না আখের তুলনায় অন্য ফসল বেশি লাভজনক হওয়ায় আমরা সেগুলো চাষাবাদ করি। জেলা সদরের আখ চাষী ফিরোজ আল মামুন মিঠু আমি মিল থেকে সার বীজ কীটনাশক নিয়ে প্রতি বছর ৬ একর জমিতে আখ চাষ করি। মিল কর্তৃপক্ষ সময় মতো কৃষি উপকরণ দিতে পারেনা। কোন পরামর্শ ও দেয়না। এক বছর জমিতে আখ ফেলে রেখে তা মিলে সরবরাহ করে ঘুরে ঘুরে টাকা নিতে হয় সময় মতো মিল কর্তৃপক্ষ টাকা দিতে পারে না। তাছাড়া সার ও ও বীজের টাকা মিল কর্তৃপক্ষ কেটে নেয়ার পর বাকী টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় দীর্ঘদিন। এজন্য আমি আখ চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল আবাদ করছি।

জয়পুরহাট চিনিকল আখ চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক খাজা নাজিম উদ্দিন বলেন চিনিকলের আগের ঘরে ফিরিয়ে আনতে হলে কৃষকদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। আখের মূল্য বাড়াতে হবে। সময় মত টাকা পরিশোধ করতে হবে। সময় মতো কৃষকদের ভালো বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে তাহলেই মিলটি কে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম এ চিনিকল নিয়মিত ৫ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী ২ মাসের ও মৌসুমী শ্রমিক প্রায় ৩ কোটি টাকা বকেয়া বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। কর্তৃপক্ষ বলছে বর্তমানে চিনিকলে ৩ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ২২ কোটি। চিটা গুড় রয়েছে মজুদ ৩ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে।

জয়পুরহাট চিনিকলের আখ চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক খাজা নাজিমুদ্দিন বলেন চিনিকলের আগের গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে আখ চাষীদের সবরকম সহযোগিতা হবে দিতে হবে। মিলে আখ সরবরাহের পর চাষীদের দ্রুত মূল্য পরিশোধ করতে হবে। সময় মতো সার বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে এবং কৃষকের ঋণ কেটে নেওয়ার পর অবশিষ্ট আখ দ্রুত মিলে সরবরাহ করে কৃষকদের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কৃষকের ঋণ কেটে নেওয়ার পর অবশিষ্ট আখ দ্রুততার সাথে মিলে দ্রুত টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাব্বিক হাসান বলেন আগামী মৌসুমের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সময় মতো কৃষকদের মাঝে সার বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করেছি। আশা করি এবার রেকর্ড পরিমাণ আখ চাষ হবে। আখের মূল্য মিলগেট থেকে সরাসরি কৃষকদের মাঝে পরিশোধ করতে পারব। এজন্য আগে থেকে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ